মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

ট্রাম্পের চাপেই সিরিয়া-ইসরায়েল চুক্তি?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২ জুলাই, ২০২৫ ১১:৫৬

শেয়ার

ট্রাম্পের চাপেই সিরিয়া-ইসরায়েল চুক্তি?
ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার নতুন সরকার আঞ্চলিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন প্রচেষ্টা শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের দিকেও দৃষ্টি রয়েছে তাদের। জানা গেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে তারা। কৌশলগতভাবে দেশ দুটি ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকেই যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। তবে তাদের সাম্প্রতিক আলোচনার অগ্রগতি অনেক। এরই মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তারা একটি সময়সীমাও নির্ধারণ করে ফেলেছে।

ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সিরিয়া ও ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির জন্য সরাসরি আলোচনা করছে। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। যেকোনো চুক্তি আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ হবে। যা কয়েকটি আরব রাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কয়েক বছর আগে সম্পন্ন হয় ।

২০২০ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং এরপর সুদান ও মরক্কো চুক্তি স্বাক্ষর করে। ট্রাম্প মে মাসে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফর করেন। সৌদি আরবে থাকাকালীন তিনি সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সাথে দেখা করেন। সে সময়েই ট্রাম্প ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চাপ দেন।

সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে গভীর বৈরিতা রয়েছে। যা ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি ইসরায়েলের দখলের পর তীব্র আকার ধারণ করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিদিওন সার জানান, সিরিয়ার সাথে যেকোনো চুক্তিতে তার দেশ গোলান মালভূমি দখলে রাখার উপর জোর দেবে। বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়া এ ব্যাপারে ছাড় দেবে না বলেই তারা মনে করেন। তবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী সিরিয়ানরা।

সিরিয়ার জনগণ বিভক্ত। কারণ একদিকে মানুষ ১৪ বছরের যুদ্ধে ক্লান্ত। সবাই বুঝতে পারে, সিরিয়া নিজেকে রক্ষা করতে বা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। কাজেই আলোচনা একটি ভালো বিকল্প। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর, ইসরায়েলের পার্লামেন্ট সিরিয়ায় বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনার পক্ষে ভোট দেয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এই বসতি অবৈধ। বর্তমানে অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ৩১ হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী রয়েছে।

সিরিয়া বলছে, তারা দুই রাষ্ট্রের মধ্যে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি বজায় রাখতে চায়। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ৮ ডিসেম্বর ঘোষণা করেন তিনি চুক্তিটিকে বাতিল বলে মনে করেন। ওইদিন বাশার আল-আসাদ মস্কোতে পালিয়ে যান।

ইসরায়েল গত কয়েক বছরে বারবার সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে। এর সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস এবং গোলান হাইটসের সীমান্তের কাছে সিরিয়ার অঞ্চল দখল করেছে। সিরিয়া চুক্তি করলে সম্ভবত এসব অঞ্চলের দখল ফেরত চাইবে। যদিও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোলান হাইটস নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।

নেতানিয়াহু সিরিয়ার সাথে একটি সম্পূর্ণ শান্তি পরিকল্পনার কাঠামোসহ একটি নিরাপত্তা চুক্তি চান বলে জানা গেছে। যার সঙ্গে ১৯৭৪ সালের চুক্তির সাদৃশ্য থাকবে।

তবে ইসরায়েলের গোলান দখল নিয়ে সিরীয়দের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক ইয়াসিন-কাসাব বলেন, ‘আমেরিকান চাপ এবং ইসরায়েলের ক্রমাগত সহিংসতার হুমকির মধ্যেও বিষয়টি আল-শারার জন্য রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। ইসরায়েলের আরও কিছু শর্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরিয়ায় কোনো তুর্কি সামরিক ঘাঁটি না থাকা, ইরান বা হিজবুল্লাহর মতো ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর উপস্থিতি না থাকাসহ আরো কয়েকটি বিষয়।’



banner close
banner close