বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

জাতিসংঘ মহাসচিব হতেই ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রোসির?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ জুন, ২০২৫ ১৩:০৮

শেয়ার

জাতিসংঘ মহাসচিব হতেই ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রোসির?
কোলাজ: বাংলা এডিশন

ইরান পারমাণু সমৃদ্ধকরণ প্রশ্নে তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলছে না বলে অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ একটি প্রস্তাব পাস করেছে ১২ জুন। এর একদিন পরই ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

ইসরায়েল অবশ্য ইরানে হামলার ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য আইএইএর প্রস্তাবকে ব্যবহার করেনি। তবে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবকে একটি প্রয়োজনীয় এবং বিলম্বিত পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে বলেছে, এটি ইরানের পরিকল্পিত গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নিশ্চিত করেছে।

তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পারমাণবিক শক্তি সংস্থা একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, এই প্রস্তাব আইএইএর বিশ্বাসযোগ্যতা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তেহরান বরাবরেই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিরুদ্ধে আইএইএর অভিযোগ যেনো শেষই হচ্ছে না। গত ৯ জুন ভিয়েনায় এক সংবাদ সম্মেলনে আইএইএ-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘অসহযোগিতার কারণে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কিনা তা যাচাই করতে পারছে না তারা। ইরান তিনটি স্থান- ভারামিন, মারিভান ও তুরকুজাবাদে ইউরেনিয়াম কণার উপস্থিতি সম্পর্কে সংস্থার প্রশ্নের উত্তর দেয়নি তেহরান।’

এরপর ১২ জুন আইএইএর অভিযোগ সম্পর্কে আল জাজিরার প্রতিনিধি হাশেম আহেলবারা মন্তব্য করেন ‘প্রায় ২০ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার আইএইএ তেহরানের বিরুদ্ধে তাদের পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ করলো। তবে গত সপ্তাহে গ্রোসি জোর দিয়ে বলেন, আইএইএ ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনও প্রমাণ পায়নি।

১৯ জুন আল জাজিরার সাথে এক সাক্ষাৎকারে গ্রোসি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইরানের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের অভিযোগের অর্থ এই নয় যে, তেহরান বোমা তৈরি করছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২ জুন তিনটি ইরানি স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। তার দাবি, পারমাণবিক স্থাপনাগুলি নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক দশক ধরে পিছিয়ে গেছে।

এই ঘটনায় ইরানের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। দেশটির পার্লামেন্টে পাস হওয়া এক বিলে বলা হয়েছে, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নজরদারি ক্যামেরা স্থাপন, পরিদর্শনের অনুমতি এবং আইএইএ-তে প্রতিবেদন জমা দেয়া স্থগিত থাকবে। ইরান ১৯৫৯ সালে আইএইএ-তে যোগ দেয়। ১৯৬৮ সালে তারা জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটি-তে সই করে।

তেহরানের অভিযোগ, চুক্তিটি তাদের যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। গ্রোসি জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব হতে চাইছেন তার এই উচ্চাকাঙ্খার বাস্তবায়নে পশ্চিমাপন্থী অবস্থান নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ ইরানের।

২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমণের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দাবি করেছিল, ইরাকের কাছে রাসায়নিক অস্ত্রসহ গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। ২০০২ সালের শেষের দিকে আইএইএ ইরাকি অস্ত্র কর্মসূচিগুলোতে বেশ কয়েক বার পরিদর্শন করে। পরের বছর, ২০০৩ সালের প্রথম দিকে, তারা ইরাকে উচ্চ-সহনশীল অ্যালুমিনিয়াম টিউবের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। যেগুলো পারমাণবিক ওয়ারহেডে ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বুশ প্রশাসনের ইরাক হামলার অনুমোদনের ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে ওঠে অ্যালুমিনিয়াম টিউব। তবে হামলার পর ব্যাপক অনুসন্ধান করেও ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগের উদ্দেশ্যও কি ইরাকের মতো ব্যবস্থা নেয়ার অজুহাজ?



banner close
banner close