বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

সর্বশেষ
সাবেক সেনা অফিসার ও জুলাই যোদ্ধাদের ‘চরমপন্থি গোষ্ঠী’ বলে সম্বোধন ভারতের দেউলিয়াত্বের প্রমাণ তোকে ফিরে আসতে হবে হাদি, সাংবাদিক ইলিয়াছের আবেগঘন পোস্ট দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করলো সরকার রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ে পুলিশের বাধা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইসির নির্দেশ হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা; ভাড়া করা অস্ত্র নিয়ে যে তথ্য জানা গেলো জেআইসি সেলে গুম: হাসিনা ও ১২ সেনা কর্মকর্তার বিচার শুরুর আদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের খালেদা জিয়ার অবস্থা আগের মতো, গ্রহণ করতে পারছেন চিকিৎসা

৮ ট্রিলিয়ন ডলারে সাড়ে ৯ লাখ মানুষ হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫ জুন, ২০২৫ ১০:৪২

শেয়ার

৮ ট্রিলিয়ন ডলারে সাড়ে ৯ লাখ মানুষ হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে থাকার বয়স নেহায়েতই কম হলো না। এই সম্পৃক্ততা আরও খনিক প্রসারিত হয়েছে এই সপ্তাহে। ইরান পর্যন্ত ছড়িয়েছে তাদের যুদ্ধ। গত শনিবার রাতে তারা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।

জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান, মার্কিন জেনারেল ড্যান কেইনের ব্রিফিং অনুসারে, সাতটি বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ফোর্দো, নাতানজ ও ইস্পাহানে কমপক্ষে ১৪টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলেছে। এই বোমারু বিমানগুলো প্রতিটির মূল্য প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

আল জাজিরার এক এক্সপ্লেইরারে বলা হয়, ১২৫টিরও বেশি যুদ্ধবিমান এই অভিযানে অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল বোমারু বিমান, ফাইটার, ট্যাঙ্কার ও নজরদারি বিমান। এগুলোর পরিচালনায় খরচ হয়েছে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার । যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় তার সামরিক খাতে বেশি ব্যয় করে। সামরিক খাতে ব্যয়ের তালিকার দ্বিতীয় থেকে দশম স্থানে থাকা পরবর্তী ৯টি দেশের মিলিত ব্যয়ের চেয়েও বেশি খরচ তাদের। চীনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ এবং রাশিয়ার চেয়ে প্রায় সাতগুণ বেশি খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সিপ্রির হিসাব অনুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক খাতে ৯৯৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। যা বিশ্বব্যাপী সমস্ত সামরিক ব্যয়ের ৩৭ শতাংশ।ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০০১ সাল থেকে অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন যুদ্ধগুলো সরাসরি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ৯/১১-পরবর্তী অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলো প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে।

যুদ্ধের জন্য খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা বা যুদ্ধ-সম্পর্কিত রোগের কারণে সৃষ্ট মৃত্যু অর্থাৎ পরোক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা এই হিসাবের বাইরে। এই পরোক্ষ মৃত্যু ৩৬ লাখ থেকে ৩৮ লাখ হতে পারে বলে আশংকা করা হয়। যার ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মৃত্যুসহ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫ থেকে ৪৭ লাখের মধ্যে পৌঁছেছে। বলে রাখা ভালো, এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

এই সময়ের মধ্যে নিহত হয়েছে অন্তত ৩০হাজার মার্কিন সেনা, ঠিকাদার এবং মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সেনা। আলাদা করে ভেঙে হিসাব করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিহতে সেনা সংখ্যা ৭ হাজার ৫২ জন, ঠিকাদার ৮হাজার ১৮৯ জন এবং মিত্রদের সেনা রয়েছে ১৪ হাজার ৮৭৪ জন।

৯/১১ হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হয় ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর। লক্ষ্য ছিল আল-কায়েদাকে ধ্বংস এবং তালেবানদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাকে যুদ্ধ শুরু করে। অজুহাত ছিল কথিত গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মূল এবং সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত। তবে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কোনও মজুদ কখনও পাওয়া যায়নি।

২০ বছর ধরে চলে আফগানিস্তানের যুদ্ধ। যুক্তরাষ্টের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সংঘাতে পরিণত হয় এটি। নিহত হয় ২ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ। ইরাক যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩ লাখ ১৫ হাজার। ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের মতে, ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের আগস্টের মধ্যে ইরাক ও আফগানিস্তানের সংঘাতে ৫লাখ ৫৮ হাজার মানুষ সরাসরি নিহত হয়।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা দপ্তরের ব্যয় করা ২দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ১দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার, ঘাঁটির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ৮ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার, প্রবীণদের চিকিৎসা সেবার জন্য ৪ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার এবং যুদ্ধের জন্য নেয়া ঋণের সুদের অতিরিক্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার।

ইতিমধ্যে ব্যয় করা ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৩০ বছরে প্রবীণদের যত্নের জন্য কমপক্ষে ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের মোট ব্যয় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে।

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, ১৯৫৯ সাল থেকে অন্তত ২৫ হাজার ১২০ কোটি ডলার পেয়েছে ইসরায়েল। ২০১৬ সালে দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক সমঝোতা স্মারক অনুসারে, ২০২৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে ইসরায়েলকে প্রতি বছর ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এর বেশিরভাগই বিদেশি সামরিক অর্থায়ন হিসেবে বরাদ্দ করা হয়।

তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলার পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ৯০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেয়। যা সর্বকালের সর্বোচ্চ বার্ষিক সহায়তা। এর মধ্যে রয়েছে ৬৮০ কোটি ডলার সামরিক অর্থায়ন, ৪৫০ কোটি ডলার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার জন্য এবং ৪৪০ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রের মজুদ থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে ২৪ জুন পর্যন্ত গাজায় নিশ্চিত নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৭৭ জন। আহত অন্তত ১লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন। ১৮ মার্চ ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৫ হাজার ৭৫৯ এবং আহত অন্তত ১৯ হাজার ৮০৭ জন। আর আশাঙ্কা করা হয়, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজার হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছে।



banner close
banner close