বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৪ জুন, ২০২৫ ০৬:৩৬

আপডেট: ২৪ জুন, ২০২৫ ০৮:৪৩

শেয়ার

কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা
ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। সোমবার এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছে বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স, ইরানের প্রেস টিভি ও ইরাকের বিভিন্ন গণমাধ্যম।

আল জাজিরা জানায়, কাতারের রাজধানী দোহার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ৬০ একরজুড়ে বিস্তৃত আল উদেইদ বিমানঘাঁটি, যা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের ফরোয়ার্ড সদর দফতর, সরাসরি হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। একইদিন ইরাকে অবস্থিত মার্কিন 'আই আসাদ' ঘাঁটিতে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান।

পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ছিল এবং এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ঘাঁটি খালি করে ফেলার কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

ইরান দাবি করেছে, এই হামলা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া। রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলা চালানোর পরপরই এই পাল্টা জবাব আসে। তেহরান জানায়, তাদের ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনে বেসামরিক নাগরিক ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হন, এবং তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়।

ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই হামলা কাতারের জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং মার্কিন সামরিক উপস্থিতির বিরুদ্ধে। ইরান কাতারের সার্বভৌমত্ব ও দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

ইরানের এই হামলার পরপরই কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি এক্স পোস্টে বলেন, ‘এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন‘’ কাতার দাবি করেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভূপাতিত করেছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এটি প্রতিবেশী সম্পর্কের চেতনার প্রতি অশ্রদ্ধা। কাতারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এক্স পোস্টে সবাইকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নৈরাজ্যের চক্র বন্ধ করে আবার কূটনীতির পথে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে।’

বাহরাইনে জরুরি সাইরেন বাজানো হয় এবং জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়। সিরিয়ার কাসরাক ঘাঁটিতেও সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতের, ইউএই, কুয়েত ও বাহরাইন আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এসব দেশের রুটে যাত্রীদের ভ্রমণ পরিকল্পনা পুনঃনির্ধারণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, তাদের ভূখণ্ডে মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়াতেই এই আক্রমণ। যদি ওয়াশিংটন আবারো এমন কিছু করে, তারা প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ‘স্থায়ী শান্তি অর্জনের আগ পর্যন্ত লড়াই চলবে।’

তবে সংকটময় পরিস্থিতিতে এক বড় কূটনৈতিক মোড় এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা দিয়ে। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও ইরান সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই ১২ দিনের যুদ্ধকে ট্রাম্প আখ্যা দেন সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত থেকে মধ্যপ্রাচ্যকে রক্ষা করার মানবিক ও কূটনৈতিক সাফল্য” হিসেবে।

তিনি বলেন, ‘যদি সবকিছু ঠিকমতো চলে, এই যুদ্ধের সমাপ্তি হবে চূড়ান্ত শান্তির সূচনা। এই যুদ্ধ বহু বছর চলতে পারত, কিন্তু তা হয়নি এবং হবেও না।’

যদিও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে, বাস্তব পরিস্থিতি এখনো স্পষ্ট নয়। সংঘাত বন্ধের জন্য ইরান দৃশ্যত সরাসরি কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। তেহরান বলছে, কূটনীতির পূর্বশর্ত হলো আগ্রাসন বন্ধ। তাই পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরবর্তী অবস্থানের ওপর।



banner close
banner close