বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

সর্বশেষ
সাবেক সেনা অফিসার ও জুলাই যোদ্ধাদের ‘চরমপন্থি গোষ্ঠী’ বলে সম্বোধন ভারতের দেউলিয়াত্বের প্রমাণ তোকে ফিরে আসতে হবে হাদি, সাংবাদিক ইলিয়াছের আবেগঘন পোস্ট দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করলো সরকার রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ে পুলিশের বাধা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইসির নির্দেশ হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা; ভাড়া করা অস্ত্র নিয়ে যে তথ্য জানা গেলো জেআইসি সেলে গুম: হাসিনা ও ১২ সেনা কর্মকর্তার বিচার শুরুর আদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের খালেদা জিয়ার অবস্থা আগের মতো, গ্রহণ করতে পারছেন চিকিৎসা

ঝুঁকিতে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলো

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩ জুন, ২০২৫ ১৫:০৬

শেয়ার

ঝুঁকিতে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলো
ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান স্বার্থ সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। এবার তাকে বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার সকালে ঘোষণা করেন, আমেরিকান বাহিনী তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বাহরাইন, সাইপ্রাস, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, অধিকৃত ফিলিস্তিন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সিরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ একাধিক দেশে ১৯টি ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘাঁটিগুলি বিভিন্ন কৌশলগত উদ্দেশ্যে কাজ করে।

আনুমানিক ৪০ হাজার মার্কিন সেনা এই অঞ্চলে অবস্থান করছে। বাহরাইন, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, সিরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত ঘাঁটি ছাড়াও, জিবুতি ও তুরস্কে তাদের বিশাল ঘাঁটি রয়েছে। যেগুলি পশ্চিম এশিয়ায় সামরিক অভিযানের জন্যও ব্যবহার করা হয়।

কাতারের দোহার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। ইরাক ও সিরিয়াসহ এই অঞ্চলজুড়ে বিমান অভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এটি। ৩০ বছর ধরে ঘাঁটিতে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এটি ৫০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এবং এতে দুটি রানওয়ে বেশ কিছু সহায়ক সুবিধা রয়েছে।

পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন সামরিক কৌশলের ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে বর্ণিত এই ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর ৩৭৯তম বিমান অভিযান শাখার অংশ হিসাবে ১০ হাজারেরও বেশি সেনা, বোমারু বিমান এবং ড্রোন রয়েছে। প্রধান অপারেটর হিসেবে মার্কিন বিমান বাহিনী ছাড়াও, এটি কাতার আমিরের বিমান বাহিনী, ব্রিটিশ রয়েল বিমান বাহিনী এবং মাঝে মাঝে অন্যান্য বিদেশি বাহিনীকেও রাখে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এখানে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ১১টি ঐক্যবদ্ধ কমান্ডের মধ্যে একটি, মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড বা সেন্টকমের ফরোয়ার্ড সদর দফতরও অবস্থিত। ২০১৯ সাল থেকে, ইরানের দৃষ্টিতে সেন্টকম একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পসকে কালো তালিকাভূক্ত করে। তারই একটি পাল্টা ব্যবস্থা এটি।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সক্রিয় মিশন এবং ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক উত্তেজনার সময়, ওয়াশিংটন নিয়মিতভাবে এই কাতারি ঘাঁটিতে বি-ফিফটি টু ও বি-ওয়ান লেন্সার বোমারু বিমান পাঠিয়েছে। এটা ইরানের মূল ভূখণ্ড থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি দূরপাল্লার রকেট আর্টিলারি সিস্টেম এবং ড্রোনের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যেই পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সংযুক্ত আরব আমিরাতে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। দেশটিতে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি ধফরা বিমান ঘাঁটি। এখানে উন্নত যুদ্ধবিমান, গোয়েন্দা বিমান, নজরদারি ড্রোন এবং জ্বালানি ট্যাঙ্কার রয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঘাঁটি বিমান বাহিনী এবং ফরাসি বিমান বাহিনীও ব্যবহার করে। এটি বছরের পর বছর ধরে আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন আগ্রাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে এটি ইরান ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ঘাঁটিতে এফ-২২ র্যা প্টারের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিমান লকহিড ইউ-২, বোয়িং ই-৩ সেন্ট্রি এবং আরকিউ-৪ গ্লোবাল হক নজরদারি হেলিকপ্টার রয়েছে। এটি ইরানি ভূখণ্ড থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেকটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি হল দুবাইয়ের জেবেল আলী বন্দর। মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক হাব। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডের বাইরে অন্য যেকোনো বন্দরের তুলনায় এখানে বেশি মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ আসে।

হরমুজ প্রণালীর কাছে পূর্ব উপকূলে ফুজাইরাহ বন্দরও গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। ফুজাইরাহ মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজের জন্য একটি লজিস্টিক পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে।

রাস আল খাইমাহ বিমানঘাঁটি হল সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেকটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। যা প্রায়শই কৌশলগত বিমান চলাচল এবং অভিযানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্ডানে সক্রিয় সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও, কিছু ঘাঁটি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তথ্য পাওয়া যায। এর মধ্যে একটি হল মুওয়াফাক সালতি বিমান ঘাঁটি। যা আজরাকের কাছে অবস্থিত। এই অঞ্চলে রয়েল জর্ডানিয়ান বিমান বাহিনী এবং মার্কিন সামরিক অভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিচেচিত।

যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ঘাঁটির উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। ২০১৮ সালে ১৪৩ মিলিয়ন ডলার এবং রানওয়ে মেরামত এবং নতুন ডরমিটরিসহ অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ২৬৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে তারা। যদিও ঘাঁটিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় জর্ডানের বিভিন্ন মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে প্রায় ৪ হাজার সেনা রয়েছে।

কুয়েতের দক্ষিণে অবস্থিত ক্যাম্প আরিফজান প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত। এটি ইরানের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

কুয়েতের অন্যান্য মার্কিন স্থাপনাগুলির মধ্যে রয়েছে আলী আল সালেম বিমান ঘাঁটি। এটি ইরাকি সীমান্ত থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি এই অঞ্চলে বিমান অভিযানের প্রধান স্থান। আহমেদ আল-জাবের বিমান ঘাঁটি হল আরেকটি ঘাঁটি যার রানওয়ে প্রায় ৩ হাজার মিটার লম্বা।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের কবলে পড়া ইরাকের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি হল আইন আল-আসাদ। এটি আল আনবারে অবস্থিত।

ইরাকের এরবিলে অবস্থিত আল-হারিস ঘাঁটি ২০১৩ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে। দেশের অন্য মার্কিন ঘাঁটির মধ্যে রয়েছে বাগদাদের উত্তরে ক্যাম্প তেজি, বাগদাদের আল-রশিদ জেলার জয়েন্ট সিকিউরিটি স্টেশন ফ্যালকন এবং আনবার প্রদেশের ফরোয়ার্ড অপারেটিং বেস আবু ঘরাইব।



banner close
banner close