ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তি অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালানোর পর সামাজিক মাধ্যমে তিনি প্রথম এসব নিয়ে কথা বলেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ‘ইহুদিবাদী শত্রু বড় ভুল এবং অপরাধ করেছে। তাকে শাস্তি দিতে হবে। এরইমধ্যে এই কাজ শুরু হয়েছে।’
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে সহযোগিতা করার অভিযোগে মোহাম্মদ আমিন মাহদাভি নামের আরও এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। তাসনিম নিউজ এজেন্সি মাহদাভিকে ‘মোসাদ সংশ্লিষ্ট একটি সাইবার টিমের প্রধান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাকে ২০২৩ সালের শেষ দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
জবাবে, ইরানের অন্তত ছয়টি বিমানবন্দরে বিমান হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। সোমবার এক্স পোস্টে দেয়া বিবৃতিতে তারা বলেছে, দূর নিয়ন্ত্রিত বিমানের মাধ্যমে তারা ইরানের ১৫টি উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে।
এদিকে, ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনাতেই ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির দাবি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, ‘স্যাটেলাইট চিত্রে ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ স্পষ্ট হয়েছে। পুরোপুরি ধ্বংস, কথাটাই এখানে সবচেয়ে উপযুক্ত। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে মাটির অনেক গভীরে। একদম নিখুঁত লক্ষ্যভেদ হয়েছে।
ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র এবং তাতে থাকা সেন্ট্রিফিউজগুলো মারাত্মক ক্ষতি, এমনকি তা সম্পূর্ণ ধ্বংসও হয়ে থাকতে পারে। উপগ্রহচিত্রে এমন আভাস মিললেও বিশেষজ্ঞরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না। জাতিসংঘের সাবেক পারমাণবিক পরিদর্শক ডেভিড অলব্রাইট বলছেন, ‘এমওপিগুলো বাধা ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গেছে। ধারণা করা যায় স্থাপনাটি চুরমার হয়ে গেছে।’
তবে, অলব্রাইট আশাবাদী হলেও কেবল উপরের গর্ত দেখে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যায় না বলে মনে করেন সিএনএ কর্পোরেশনের সহযোগী গবেষক, উপগ্রহচিত্র বিশেষজ্ঞ ডেকার এভেলেথ। তিনি বলছেন, ‘শত শত সেন্ট্রিফিউজ যেখানে ছিল, সেই হলটি এত গভীরে যে উপগ্রহচিত্র দেখে আসল ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাচ্ছে না।’
এভাবে হামলা চালিয়ে ইরানের পারমাণবিক জ্ঞান ‘ধ্বংস করা যাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি। তিনি বলেছেন পারমাণবিক শিল্পের শেকড় ইরানে রয়েছে এবং এই শেকড় ধ্বংস করা যাবে না।
ইরানের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাও মার্কিন হামলার কড়া জবাব দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। দেশটির কমান্ডার ইন চিফ, আমির হাতামি বলেছেন, ‘অতীতে যুক্তরাষ্ট্র যতবার ইরানের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তারা চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, এবং এবারো একই রকম হবে।’
ইরানেরে সেনাবাহিনীর প্রধান, আবদুর রহিম মুসাভি এক বিবৃতি বলেছেন, মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তার বাহিনীর যে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এই অবস্থান থেকে কখনও পিছু হটবে না ইরান।
এই পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা দলের সাথে সোমবার বৈঠকে বসছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসাথে বিশ্বজুড়ে নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভ্রমণব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে। মাঝে মধ্যেই বন্ধ হচ্ছে আকাশসীমা। তাই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মার্কিন নাগরিক ও স্বার্থের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বা অস্থিরতার আশঙ্কায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, ইসরায়েলে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সেখান থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে একটি সামরিক বিমান পাঠাচ্ছে ফ্রান্স।
আরও পড়ুন:








