মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত কূটনৈতিক পরিস্থিতি নতুন করে উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান বৈরিতা নতুন মাত্রায় পৌছেছে, যার ফলে ইরানে সামরিক হামলার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে সামরিক অভিযান চালায়, তবে তা শুধু দুই দেশের মধ্যকার সংঘর্ষে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা ছড়িয়ে পড়তে পারে ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধে। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল।
চলমান সংঘাতের মধ্যেই এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক পরিচালক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেটা। তার মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে হামলা করে, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটি একটি বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া।’
প্যানেটা মনে করিয়ে দেন, কীভাবে ২০ বছর আগে ইরাকে সামরিক হস্তক্ষেপ ভয়ংকর ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্র একটি দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যার প্রভাব এখনো মেটানো হয়নি। ইরানের ক্ষেত্রেও একই রকম পরিণতির আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে সিএনএন-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে ইরানের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক জোহরে খারাজমি আল-জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভালোভাবেই জানেন, ইরানের কাছে রয়েছে বিভিন্ন পাল্লার হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র। তার সামরিক উপদেষ্টারাও বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন।’
খারাজমির ভাষায়, ‘যদি যুদ্ধে জড়ানো হয়, তাহলে ইরানের আঞ্চলিক মিত্ররা, যেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি, ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া এবং ফিলিস্তিনের হামাস যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোর ওপর ভয়াবহ গোলা হামলা চালাতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প দ্বিধায় রয়েছেন। তিনি জানেন, সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বড় রকমের হুমকিতে পড়বে। তাই, মার্কিন জনগণের বড় অংশ কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে রয়েছে।’
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরান শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, বরং এটি একটি আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি। তাদের অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স জোটভুক্ত গোষ্ঠীগুলোর মধ্য দিয়ে ইরান পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই তার উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এসব গোষ্ঠী অতীতে ইসরায়েল ও মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত ১৯টি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, যার মধ্যে আটটি স্থায়ী ঘাঁটি। বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, জর্ডান ও মিসরে এসব ঘাঁটিতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে এই ঘাঁটিগুলো সরাসরি হামলার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অধ্যাপক খারাজমি মনে করেন, এই সংকটময় মুহূর্তে কূটনৈতিক সমাধানের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ‘চীন, রাশিয়া, আরব রাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ দায়িত্বশীল ভূমিকা নিলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সংঘাত রোধ করতে হলে সবাইকে আলোচনার টেবিলে বসতেই হবে।’
পরিস্থিতি যত উত্তপ্ত হবে দুইদেশের হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা ততোই বাড়বে। তবে, তেহরানের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে এই লড়াইয়ের শেষ দেখাতে চান তারা। ইরানের এই অনড় অবস্থান এবং সাফল্যে চমকে গেছে গোটা বিশ্ব ।
আরও পড়ুন:








