ইসরায়েলের একের পর এক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে ইরানের উত্তরাঞ্চলে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার ইরানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী বিকেলবেলা ৫ দশমিক ১ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে এবং সেমনান শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করে।
এদিকে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম ভূমিকম্পটির মাত্রা ৫ দশমিক ২ বলে জানিয়েছে। অন্যান্য কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের কথাও উল্লেখ করেছে। যদিও ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু সেমনান শহরেই ছিল, কম্পন অনুভূত হয়েছে রাজধানী তেহরান পর্যন্ত।
ভূমিকম্পটি ইরানের কোম প্রদেশে অবস্থিত ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার খুব কাছাকাছি সংঘটিত হয়, যা এই ঘটনার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও, ভূমিকম্পটি নিয়ে জনমনে বেশ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরইমধ্যে এ ভূমিকম্প নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। একাধিক ইরানি ব্লগার এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলছে, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর হয়তো বিশেষ কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছিল যার প্রভাবে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। এরপরও এসব গুঞ্জনের যাচাই করে কোন সত্যতাও পায়নি মার্কিন সংবাদমাধ্যম মিরর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূমিকম্প মানেই পারমাণবিক পরীক্ষা নয়। কারণ এই মুহুর্তে এমন পরীক্ষা চালালে ইসরায়েলের অভিযোগ আরও জোরাল করে দিতে পারে। আবার যদি এটি হয়েও থাকে, তাও প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যতদিন চলা যাবে ততদিন চালিয়ে নেয়াই সঠিক রণাকৌশল, যেখানে কূটনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়তে নয় হয় তেহরানকে।
ইরান ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। দেশটির উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে মাঝেমধ্যেই ছোটখাট ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার নিকটবর্তী এলাকায় এমন ভূকম্পন এবং একই সময় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মতো ঘটনার সমন্বয় ইরানকে নতুন করে সতর্ক করে তুলতে পারে। এছাড়া শুক্রবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিও ছিল ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার ভেতরে যেটা মানব সৃষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। তাই পারমাণবিক পরীক্ষাকে গুজব হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি ছিল ২০১৩ সালে। সে সময় যখন দক্ষিণ-পূর্ব কেরমান প্রদেশের বাম শহরে কমপক্ষে ৩৪ হাজার মানুষ ভূমিকম্পে প্রাণ হারায়। ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭।
আরও পড়ুন:








