ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ছয় দিন পার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, ইসরায়েলের পক্ষে তিনি এ সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে যাবেন কিনা। তবে যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন এক বিশ্লেষণে জানায়, ইসরায়েল এরই মধ্যে সব সীমা পার করে ফেলেছে। তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে বোমা হামলা চালিয়েছে, বহু উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে এবং ইরানের আকাশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা এবং ফোরডো জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে বোমা হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ইরান তার পক্ষ থেকে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে। যা ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের আতঙ্কিত করেছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। অন্তত ৩০ জন নিহত এবং আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। তবে আশঙ্কা ছিল, এর চেয়ে অনেক বড় মাত্রার ক্ষতি ইরান করতে পারবে। বাস্তবতা বলছে, যা তারা পারেনি। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সংঘাতের প্রথম ৪৮ ঘন্টায় ইসরায়েলের তুলনায় তাদের প্রায় ১০ গুণ বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
ইরানে ইসরায়েলের আঘাত হানা লক্ষ্যবস্তুর তালিকা প্রতিদিনই বাড়ছে। একই সঙ্গে কমছে এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব ও ক্ষমতা। এতে অবশ্যই ট্রাম্পের ভূমিকা আছে। সম্ভবত ২০২০ সালে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলাফল এটি।
ইরাকে এক মার্কিন সেনার মৃত্যুর প্রতিশোধ হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ওই অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের এক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। কিন্তু তাতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি নেয়ার মতো শক্তি তাদের ছিল না। এ ঘটনা পাঁচ বছর আগের। এরপর থেকে ইরানিদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
তাদের প্রধান কৌশলগত মিত্র, রাশিয়া, ইউক্রেনের সাথে তিন বছর ধরে যুদ্ধে আটকে আছে। অর্থাৎ তেহরান যদি সংকটে পড়ে সহায়তা চায় তাহলে মস্কো সম্ভবত সাড়া দিতে পারবে না। ইরানের ঘনিষ্ঠ বাকি সহযোগী অর্থাৎ লেবাননে হিজবুল্লাহর এখন আর আগের সক্ষমতা নেই এবং সিরিয়ায় আসাদ সরকার ক্ষমতাচ্যুত। তুরস্কও তাদের নিজস্ব বিদ্রোহী দমনে ব্যস্ত। আর ইরান খুব ভালো করেই জানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর সক্ষমতা তাদের নেই।
অর্থাৎ ট্রাম্পের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া খুব কঠিন না। দুটি কাজ করতে পারেন তিনি। প্রথম ইসরায়েলের ইচ্ছা অনুসারে ইরানে হামলা করতে পারেন। তাতে ইরানের সামনে যুদ্ধবিরতির জন্য কঠিন শর্ত রাখা সম্ভব হবে। অথবা তিনি কিছুই না করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ কমতে থাকার অপেক্ষা করবেন। তাতে তেহরান আরো ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বে।
তবে ট্রাম্প নানা কারণেই বিপর্যস্ত। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে তিনি খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। ইরান ইস্যু কূটনৈতিকভাবে তাকে একটি বিজয় এনে দিতে পারে। ইরানের পরমাণু ইস্যু নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের এলার্জি রয়েছে। ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের পারমানবিক কর্মসূচি বেসামরিক উদ্দেশ্যে। অস্ত্র বানানোর ইচ্ছা তাদের নেই।
২২ বছর আগে প্রায় একই ধরনের দাবি করেছিল ইরাক। কিন্তু সে সময় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড সে দাবিতে কান দেননি। ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এর জোরালো গোয়েন্দা তথ্য আছে, এমন দাবি করে ইরাকে হামলা চালান তিনি। পরে প্রমাণিত হয় তাদের দাবি ভুয়া ছিল। ইরান ইস্যুতে সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র। এবার মার্কিন গোয়েন্দারাও বলছে, ইরান পরমাণু বোমা বানানোর সক্ষমতা এখনো অর্জন করেনি। কিন্তু ট্রাম্প সে তথ্য মানছেন না।
ট্রাম্পের এ মনোভাব অব্যাহত থাকলে ইরাকের ভুল আবার ইরানে করবে যুক্তরাষ্ট্র। এবং পরিণতিও সম্ভবত একই হবে। ইরাকে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে মার খেয়েছে তারা। শেষ পর্যন্ত সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। ইরানের ক্ষেত্রেও ভিন্ন কিছু ঘটার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন:








