ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বুধবার সকালে ফাত্তাহ হাইপারসনিক মিসাইল সফলভাব ব্যবহার করে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড কর্পস বা আইআরজিসি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই মিসাইল প্রথম দিনই ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধসিয়ে দিয়ে দখল করে নেয় ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির আকাশ।
ফাত্তার কারণেই দিনটিকে ‘টানিং পয়েন্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে আইআরজিসি। ইসরায়েল বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও দুর্ভেদ্য’। সেই মিথ বুধবার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান। ইসরায়েলি আকাশ বুধবার ছিল ইরানের দখলে।
ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ফাত্তাহ, দেশটির প্রথম হাইপারসনিক ব্যালাস্টিক মিসাইল। এটি তৈরির প্রথম ঘোষণা আসে ২০২৩ সালের জুনে। ইরান ছাড়া আর মাত্র তিনটি দেশের এ ধরনের মিসাইল আছে। দেশগুলো হচ্ছে, রাশিয়া, চীন ও ভারত। তবে তাদের তুলনায় ফাত্তার কাজের ক্ষমতা, নির্মাণ কৌশল ও ধরন, সবই আলাদা। যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরেই এ ধরনের অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে এখনও সফল হয়নি।
আইআরজিসি জানায়, চলমান অপারেশন ট্রু প্রমিজ থার্ডের একাদশ পর্যায়ে ফাত্তাকে ব্যবহার করা হলো। ফাত্তাহ শব্দটির অর্থ উন্মোচন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিজে এই নাম দেন। এর পাল্লা এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার। গতি ম্যাক ১৩ থেকে ১৫। অর্থাৎ শব্দের চেয়েও ১৩-১৫ গুণ দ্রুত বেড়ে ছুটতে পারে ফাত্তাহ।
এর নজেল দিক পরিবর্তনে সক্ষম। অর্থাৎ যে কোনো দিকে যে কোনো সময় বোমা ছুড়তে পারে এটি। আর এর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, বিশ্বের কোনো ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থার পক্ষে এর নাগাল পাওয়া সম্ভব না।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো ইরানের প্রযুক্তিগত সাফল্য স্বীকার করে না বা উপহাস করে। তবে ২০২৩ সালের জুনে ফাত্তাহর ঘোষণা দেয়ার সময় বিষয়টি ভিন্ন ছিল। সে সময় তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল পরিমাপিত ও ভারসাম্যপূর্ণ ।
পশ্চিমা মিডিয়া ও তথাকথিত সামরিক বিশেষজ্ঞরা এক সময় ইরানের ড্রোনকে ‘অকেজো খেলনা’ হিসাবে বর্ণনা করত। সেই ড্রোনগুলোই আজ পশ্চিমাদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আর এই ড্রোনের জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর একাধিক অবরোধ আরোপ করেছে।
২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি রাডার এবং বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থাও উপহাসের বিষয় ছিল। ঠিক সে সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক আর/কিউ-ফোর/এ গ্লোবাল হক নজরদারি ড্রোন খোরদাদ থার্ড সিস্টেম দিয়ে ভূপাতিত করা হয়। তখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ছিল নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
ফাত্তাহর নাম প্রকাশ্যে আসার পরও তারা ইরান, চীন ও হংকংয়ের সাত ব্যক্তি এবং ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ইসরায়েলের ওই সময়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলের কাছে এর মোকাবেলা করার মতো একটি সমাধান থাকবে। তবে বুধবার তেমন কিছু দেখা যায়নি।’
কয়েক দশক ধরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বমানের ড্রোন, মিসাইল এবং যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে তেহরান। যদিও তারা কখনও কোনও দেশের উপর হামলা শুরু করেনি।
ইরানের কাছে এই অঞ্চলের বৃহত্তম মিসাইল ভাণ্ডার রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নিষেধাজ্ঞার অধীনে তৈরি ব্যালিস্টিক, কোয়াসি-ব্যালিস্টিক, ক্রুজ এবং হাইপারসনিক মিসাইল। বিমান শক্তির উপর নির্ভরশীল বেশিরভাগ দেশের বিপরীতে ইরান গত কয়েক দশক ধরে তার দূরপাল্লার সামরিক ক্ষমতা ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রযুক্তির উপর জোর দিয়েছে।
আরও পড়ুন:








