মঙ্গলবার

১৭ জুন, ২০২৫
৩ আষাঢ়, ১৪৩২
২১ , ১৪৪৬

যেভাবে ব্যালাস্টিক মিসাইলেই ইসরায়েলকে ধসিয়ে দিচ্ছে ইরান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ জুন, ২০২৫ ১০:২০

শেয়ার

যেভাবে ব্যালাস্টিক মিসাইলেই ইসরায়েলকে ধসিয়ে দিচ্ছে ইরান
ছবি: সংগৃহীত

ইরানের পরমাণু স্থাপনা এবং জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে গত শুক্রবার হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির দিকে শত শত ব্যালাস্টিক মিসাইল আর ড্রোন ছুঁড়ে দেয় ইরান। এর মধ্যে কিছু সুর্নিদিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ওপর।

অল্প কিছু ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ঠেকিয়ে দিয়েছে। বাকিগুলোর কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইরায়েলের। প্রাণহানি, সম্পদহানির ঘটনা ঘটেছে।

ইরানের কাছে কতগুলো ব্যালাস্টিক মিসাইল আছে তা জানা যায়নি। তবে সংখ্যা ও গুণগত মানে এগুলো ওই অঞ্চলের মধ্যে সেরা। একই সঙ্গে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

ব্যালাস্টিক মিসাইল হচ্ছে প্রচলিত ও পরমাণু ওয়াহেড বহনে সক্ষম দূরপাল্লার অস্ত্র। শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন থেকে এই মিসাইলগুলো ছোঁড়া হয়। মিসাইলগুলো সরাসরি আকাশমুখী হয়ে যাত্রা শুরু করে। কখনো কখনো মহাকাশেও পৌছে যেতে পারে।

রকেট থেকে মুক্ত হওয়ার পর পরই অত্যন্ত ক্ষীপ্রতার সঙ্গে লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে যায় এই মিসাইল। কয়েকশ থেকে ১০ হাজরেরও বেশি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে ব্যালাস্টিক মিসাইল। অর্থাৎ পুরো মহাদেশেই চক্কর দিতে পারবে তারা। ব্যালাস্টিক মিসাইলকে তাদের পাল্লা. ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ভাগে ভগ করা হয়-

*যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্লার ব্যালাস্টিক মিসাইল-এর পাল্লা ২০০ কিলোমিটারের কম

*স্বল্প পাল্লার ব্যালাস্টিক মিসাইল। এর পাল্লা এক হাজার কিলোমিটারের কম।

*মাঝারি পাল্লার ব্যালাস্টিক মিসাইল-এর পাল্লা ১ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে।

*দীর্ঘ পাল্লার ব্যালাস্টিক মিসাইল: এর পাল্লা ৩৫০০ থেকে ৫৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে।

*আন্ত:মহাদেশীয় ব্যালাস্টিক মিসাইল: এর পাল্লা সড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারের চেয়ে বেশি।

ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় তারা। এগুলির গতি পরিমাপ করা হয় ম্যাক-এ। এটি শব্দের গতির সমান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ম্যাক ৫ মানে শব্দের গতির পাঁচ গুণ।

সাধারণত স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল সুপারসনিক গতিতে পৌঁছায়। অর্থাৎ ম্যাক ১ এর চেয়ে দ্রুত, অথবা ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার ২২৫ কিলোমিটার। আবার কিছু, সাধারণত দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক গতিতে ছুটতে পারে ম্যাক ৫ এর চেয়ে বেশি বা ঘণ্টায় ৬ হাজার ১২৫ কিলোমিটার।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব প্রায় একহাজার ৩০০ কিলোমিটার থেকে একহাজার ৫০০কিলোমিটার। ম্যাক ৫ গতিতে ভ্রমণকারী ইরান থেকে ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো প্রায় ১২ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছাতে পারে। যদিও সঠিক সময় মিসাইলের ধরন এবং উৎক্ষেপণের স্থানের উপর নির্ভর করে।

ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো তাদের দীর্ঘ পাল্লা, উচ্চ গতির কারণে বিপজ্জনক। তাদের দ্রুত, উঁচু উড়ানের পথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কিছু করার জন্য খুব কম সময় দেয় এবং যখন তারা বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করে, তখন তারা আরও দ্রুত নেমে আসে, যা প্রতিবন্ধকতা তৈরিকে আরও কঠিন করে তোলে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ডিকয় বা অন্যান্য পাল্টা ব্যবস্থাও ব্যবহার করে, যার ফলে তাদের বাধাদান করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রুজ মিসাইলও ব্যবহার করেছে। ব্যালিস্টিক মিসাইলের বিপরীতে ক্রুজ মিসাইলগুলো পাইলটবিহীন বিমানের মতো নিচু এবং স্থিরভাবে উড়ে যায়, যা তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভাঙতে সাহায্য করে। যদিও তারা ব্যালিস্টিক মিসাইলের তুলনায় অনেক ধীর গতিতে যায়, বিমান প্রতিরক্ষাকে বাধাদানের জন্য আরও সময় দেয়, অনেক নিচ দিয়ে চলাচল করায় তাদের সনাক্ত করা কঠিন। তাদের কৌশলগত দক্ষতা তাদের দিক পাল্টাতে, বাধা অতিক্রম করতে এবং মিসাইল প্রতিরক্ষা এড়াতে সহায়তা করে।

ইরান থেকে ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো প্রায় ১২ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলে পৌছাতে পারে। ক্রুজ মিসাইলগুলো প্রায় দুই ঘন্টা সময় নিতে পারে এবং ড্রোনগুলি নয় ঘন্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে।

গত তিন দশক ধরে ইরান বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। নীচের গ্রাফিকটিতে ইরানের কিছু বিখ্যাত ক্ষেপণাস্ত্র এবং তাদের পাল্লার সংক্ষিপ্তসার রয়েছে।

ইসরায়েলের একটি উন্নত মিসাইল ভাণ্ডার রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার এবং পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম সিস্টেম, যা কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা মূলত আয়রন ডোম সিস্টেম নামে পরিচিত যা একটি রাডার দিয়ে সজ্জিত। এটি প্রজেক্টাইল সনাক্ত করে এবং এর গতি পরিবর্তন এবং দিকনির্দেশনাও শনাক্ত করে।

অন্যান্য সিস্টেম মাঝারি এবং দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে বাধা দেয়। এছাড়াও রয়েছে ডেভিড'স স্লিং ৪০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লার মিসাইলগুলোকে বাধা দেয়। আরো রয়েছে অ্যারো সিস্টেম। এটি ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লার মিসাইলগুলোকে প্রতিহত করে।

banner close
banner close