সোমবার

১৬ জুন, ২০২৫
২ আষাঢ়, ১৪৩২
২০ , ১৪৪৬

হরমুজ প্রণালী ‘ইরানের ট্রাম্প কার্ড’

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬ জুন, ২০২৫ ১০:০৫

শেয়ার

হরমুজ প্রণালী ‘ইরানের ট্রাম্প কার্ড’
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল শনিবার রাতে প্রথমবারের মতো ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালায়। বৈশ্বিক পেট্রোলিয়াম শিল্পের উপর এর তীব্র প্রভাব পড়তে পারে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শুক্রবার ইরানের ওপর বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়। পরমাণু স্থাপনায়ও বোমা হামলা চালায় ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি। রোববার তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানায়, দক্ষিণ পার্সের গ্যাস ক্ষেত্রে ইসরায়েলি হামলার পর, ইরান সেখানে আংশিকভাবে উৎপাদন স্থগিত করে দেয়। দক্ষিণ পার্সের ১৪ নম্বর ফেজের চারটি ইউনিটের একটিতে আগুন লেগেছে, যার ফলে ১ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।

আল জাজিরার মতে, দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মজুদের প্রায় ২০ শতাংশ রয়েছে। এটি ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশে অবস্থিত। ইরানের সিংহভাগ গ্যাস আসে এই ক্ষেত্র থেকেই। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ ইরান।

এই গ্যাসক্ষেত্রে কাতারেরও শেয়ার রয়েছে। এক্সন ও শেলের মতো কোম্পানির সহায়তায় কাতার এই ক্ষেত্র থেকে ৭৭ মিলিয়ন টন তরলীকৃত গ্যাস নিয়ে ইউরোপ ও এশিয়ায় সরবরাহ করে।

ইরানের তেল মন্ত্রণালয়ের মতে, ক্ষেত্রটিতে আগুন নিভে গেলেও, বিশ্বব্যাপী তেল শিল্পের উপর এর প্রভাব পড়বে। যা উদ্বেগজনক। হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, এই হামলার ফলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে।

রিস্টাড এনার্জির বিশ্লেষক জর্জ লিওন ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে একে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আবকাইকের পর তেল ও গ্যাস অবকাঠামোর উপর এটি সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। ২০১৯ সালের হামলার কথা উল্লেখ করেন, সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান তেল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র আবকাইকের ওপর ২০১৯ সালে হওয়া হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি। হামলার পর ওই কেন্দ্রের উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে ইরান বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। ইরানি জেনারেল ইসমাইল কোসারি শনিবার বলেন, ‘তেহরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে তেলের ট্যাঙ্কগুলোর উপসাগরে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবে কিনা তা পর্যালোচনা করছে।’

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইরাক ও ইরানের রফতানিসহ বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল সরবরাহের এই চ্যানেল ব্যবহার করা হয়। ইসমাইল বলেন, ‘ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয় তাহলে বাজারের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হতে পারে। যার ফলে দাম ব্যারেল প্রতি ২০ ডলার বা তারও বেশি বেড়ে যেতে পারে।’

ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের সভাপতি জামাল আবদি এই হুমকিকে ‘ইরানের ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে ইরান সম্ভবত হরমুজ প্রণালী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

শুক্রবার ইসরায়েলের ইরানে হামলা এবং তেহরানের পাল্টা হামলার পর তেলের দাম জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যদিও ইসরায়েলের হামলার পর প্রথম দিনেই ইরান তেল ও গ্যাসের দাম কমিয়ে দেয়।

ইরান প্রতিদিন তিন মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে। বিশ্লেষক এবং শিল্প সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতই একমাত্র ওপেক সদস্য যারা দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম এবং প্রায় ৩৫ লাখ ব্যারেল বেশি পাম্প করতে পারে।

ওপেক প্লাসের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক রাশিয়া দাবি করেছে যে তারা প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন করতে পারবে। তবে জে. পি. মরগানের অনুমান, মস্কো আগামী তিন মাসে প্রতিদিন মাত্র আড়াই লাখ ব্যারেল উৎপাদন বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫ লাখ ব্যারেল উৎপাদন করতে পারবে।

ইরান প্রতি বছর প্রায় ২৭৫ বিলিয়ন ঘনমিটার (বিসিএম) গ্যাস উৎপাদন করে যা বিশ্বব্যাপী গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে, রপ্তানির উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত গ্যাস ব্যবহার করে।

চীন ইরানের তেলের বৃহত্তম আমদানিকারক। হামলা বাড়লে এই প্রক্রিয়াও ব্যবহত হবে। ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল শাহরান ডিপো এবং ফজর জাম গ্যাস রিফাইনিং কোম্পানিতেও হামলা হয়েছে।

ইরানের স্টুডেন্ট নিউজ নেটওয়ার্ক শাহর রে শোধনাগারে ইসরায়েলের হামলার কথা অস্বীকার করলেও দাবি করেছে যে, এটি এখনও চালু রয়েছে। তারা বলেছে, শোধনাগারের বাইরে একটি জ্বালানি ট্যাঙ্কে আগুন লেগেছে। ১১টি ট্যাঙ্কে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন শাহরান তেল ডিপো তেহরানের বৃহত্তম জ্বালানি সংরক্ষণ এবং বিতরণ কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি বলে আল জাজিরা উল্লেখ করেছে।

banner close
banner close