রবিবার

১৫ জুন, ২০২৫
১ আষাঢ়, ১৪৩২
২০ , ১৪৪৬

দুষ্টের সেরামনি ট্রাম্প-নেতানিয়াহু

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫ জুন, ২০২৫ ০৯:৫৫

শেয়ার

দুষ্টের সেরামনি ট্রাম্প-নেতানিয়াহু
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে দুই মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। হয় ইরানকে তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি ছাড়তে হবে নয়তো দেশটিতে হামলা চালানো হবে। ট্রাম্প তার কথা রেখেছেন। আল্টিমেটামের দুই মাস পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইরানে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র ইসরায়েল।

ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ তারই আরেক দফা প্রমাণ পেলো বিশ্ববাসি। হামলা পরবর্তী ট্রাম্পের সোস্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাসই প্রমাণ করে ইসরায়েলের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল তার নখদর্পে। তারিখ, হামলা এবং হামলার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ছিলেন। এ যেনো দুই ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধার সমন্বিত ছক এবং তার বাস্তবায়ন।

আল্টিমেটামের দুই মাস পার করে শুক্রবার ইরানিরা জেগে উঠলো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলির দেশের বিভিন্ন অংশে বোমা হামলার শব্দে, যা ওয়াশিংটনের অনুমোদন এবং উৎসাহে চালানো হয়েছে।

আবাসিক এলাকা, পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে এবং শীর্ষস্থানীয় সামরিক জেনারেল এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার ছক কষে পরিচালিত ইসরায়েলি হামলা সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন একতরফা।

হামলা একতরফা-এটা সত্য। তবে এককভাবে ইসরায়েল এই হামলা চালায়নি। ট্রাম্পের হুমকির ৬১তম দিনে পৌঁছে ইসরায়েল যে হামলা চালালো তাতে যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে দায়ী এবং জড়িত।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও স্বীকার করেছে, আলোচনাগুলি ছিল একটি স্থবির কৌশল, অভিনয় মাত্র। যুক্তরাষ্ট্র খুব ভালো করেই জানত, কী ঘটতে চলেছে। এমনকি ওমানের মধ্যস্থতায় আলোচনার সময় আমেরিকান দাবি ছিল এখন লক্ষ্যবস্তুতে থাকা স্থাপনাগুলির সম্পূর্ণ ধ্বংস।

তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সব সময় প্রাসঙ্গিকভাবে ইসরায়েলি সরকারের সাথে সামরিক গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদান করে। চলমান গাজা গণহত্যার সময়ও তারা এটা করেছে। চলমান গাজা অভিযানে ৫২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। পাশাপাশি লেবানন, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানোর সময়ও এ ধরনের সংযোগ তাদের মধ্যে ছিল।

প্রকৃতপক্ষে, ভুলে গেলে চলবে না যে ২০২৪ সালের অক্টোবরে তেহরানের কেন্দ্রস্থলে ইসরায়েল যখন হামাস প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করে তখনো যুক্তরাষ্ট্রের এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল।

আর এ কথাও ভোলা চলে না, ইসরায়েল যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে তা মূলত আমেরিকান। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে আমেরিকা ইসরায়েলকে ২২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র দিয়েছে। এবং ইরানে হামরা চালানা দুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অস্ত্রের একটি চালান পাঠিয়েছে।

এই চালানের মধ্যে কেবল গাজা গণহত্যা চালানোর জন্যই নয়, বরং ইসরায়েলের আয়রন ডোম ইন্টারসেপ্টর সক্রিয় রাখার জন্যও অস্ত্র রয়েছে। সেইসাথে গাজা, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং এখন ইরানে অব্যাহভাবে হামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বহু-টন বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।

রাজনৈতিকভাবে, ইসরায়েল এমন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে না যা আমেরিকা নিন্দা করবে। আমেরিকান নেতারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলকে জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা করেছেন, তার কর্মকাণ্ডের নিন্দাকারী প্রস্তাবগুলিতে ভেটো দিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকারী আইসিসি বিচারকদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলিকে শাস্তি দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি অক্ষ পূর্ণ আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইরানকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করে। মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরির মতো সামরিক নেতাদের হত্যার পাশাপাশি ইরানি বিজ্ঞানীদের তাদের বাড়িতে হত্যা করা এই আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকেই করা হয়েছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই ইরান ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের একনিষ্ঠ সমর্থক। শুধু শব্দ এবং প্রতীকী অর্থে নয়। বরং অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্যের মতো বস্তুগত উপায়ে এই নীতিগত সংহতির কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এতদিন ধরে ইরানের ‘শাসক পরিবর্তন প্রকল্পের প্রতি আগ্রহী ছিল।

এই প্রবণতা তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। নেতানিয়াহু কেবল অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যেই নয়, বিশ্বব্যাপী তীব্রভাবে ঘৃণিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেসহ যুদ্ধবাজ হিসেবে ঘোষণা করেছে। রোববার ওমানে নির্ধারিত আলোচনা থেকে তেহরান সরে এসেছে। ইরান এই বর্বরতার কাছে মাথা নত করবে না এবং শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে।

কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞা, হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা ইরানকে এই সংকটময় মুহূর্তের জন্য তৈরি করে ফেলেছে।

banner close
banner close