
ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, আবার কেউ হামলাকে অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী করেছে। খবর সিএনএনের।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলার ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ’ জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই প্রকাশ্য আগ্রাসন ইরানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ণ করছে এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন ও বিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
তেহরানে চীনা দূতাবাস ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘গম্ভীর ও জটিল পরিস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা ইরানে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে, বিশেষ করে ভিড়ভাট্টা ও সংবেদনশীল এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ইসরায়েলের এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। তিনি বলেছেন, আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ওই অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার এই বিস্ফোরণ উদ্বেগজনক। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের এই হামলা অপ্রত্যাশিত ও উদ্বেগজনক ঘটনা। ভুল বোঝাবুঝি বা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। তিনি আরও বলেছেন, ওমানে আগামী রোববার অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন-ইরান পরমাণু আলোচনা আরও গ্রহণযোগ্য পথ হতে পারত, যদিও এখন আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো ধরনের সামরিক উত্তেজনার নিন্দা জানিয়েছেন। রয়টার্সে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন, গুতেরেস দুই পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাসহ দুই জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তেহরানে বিপ্লবী গার্ডের সদর দপ্তর ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমও ঘটনাস্থল থেকে আগুন এবং ধোঁয়া বের হওয়ার খবর দিচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী টাইমস অব ইসরায়েল পত্রিকাকে জানিয়েছে, তারা ‘নেশন অব লায়ন্স’ নামের একটি বিমান অভিযানের মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, ইরান থেকে আসা তাৎক্ষণিক হুমকির জবাবে এই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক স্থাপনায় হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। যতক্ষণ না আমরা আমাদের মিশন শেষ না হয়, ততক্ষণ এই অভিযান চলবে।
এদিকে নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলজুড়ে ‘বিশেষ জরুরি অবস্থা’ জারির ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার শঙ্কায় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে আগাম প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, হামলায় ‘অনেক হতাহত’ হয়েছে, যদিও সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। এক ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, হামলায় ইরানের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের পারমাণবিক বিজ্ঞানীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই জড়িত নয়। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থ বা সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালানো হলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।
এদিকে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। গত কয়েক ঘণ্টায় ইরান ইসরায়েলে ১০০টিরও বেশি ড্রোন ছুঁড়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সেগুলো ভূপাতিত করার চেষ্টা করছে। শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে এ তথ্য জানায় দ্য টাইমস অব ইসরায়েল। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে ইরানি ড্রোনগুলোকে ইসরায়েলের দিকে যাত্রা করতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: