
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি শনিবার বলেছেন, সম্প্রতি পাঁচ দিনের সংঘাত ভারতের তথাকথিত নিরাপত্তা প্রদানকারী মুখোশ খুলে দিয়েছে। বরং তারা নিজেদের দক্ষিণ এশিয়া এবং বৃহত্তর বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপত্তাহীনতার উৎস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘ভারত মিথ্যার উপর ভিত্তি করে যুদ্ধ শুরু করেছে এবং তা জিততেও পারেনি।’
ওয়াশিংটন ডিসিতে পাকিস্তানের বহুদলীয় প্রতিনিধি দলের সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাঈদের আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব বলেন।
পাকিস্তানের জিও নিউজ জানায়, ভারতের সাথে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষের বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দিল্লির বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের সংসদীয় পার্লামেন্টাটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে।
বিলাওয়ালের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে দিল্লির উস্কানি এবং আগ্রাসন তুলে ধরার জন্য ক্যাপিটল হিলে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সাথে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন।
মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বিলাওয়াল বলেন, ‘ভারত দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেকে স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে চিত্রিত করে আসছে। আমেরিকান করদাতারা মনে করেন, ভারত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রদান করে। কিন্তু এই পাঁচ দিনের সংঘাত প্রমাণ করেছে এই ধারণা সঠিক নয়।’
সংঘাতের সময় ভুয়া খবর প্রচারের জন্য তিনি ভারতীয় মিডিয়ার সমালোচনা করেন।
পিপিপি প্রধান বলেন, ‘এখনো ভারত কত বিমান হারিয়েছে জানায়নি।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি টুইটের কথা উল্লেখ করে বিলাওয়াল বলেন, ‘এটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছে। যুদ্ধবিরতি, নিরপেক্ষ স্থানে ভবিষ্যতের আলোচনা শুরু এবং সংঘাতের সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা। এর থেকেই প্রমাণ হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে না।’
এদিকে সম্প্রতি সংঘাতের সময় ভারতের শত্রুতামূলক উস্কানির সাহসী ও কার্যকর প্রতিক্রিয়ায় নারী, শিশু ও বয়স্কসহ নিরীহ পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির প্রতিশোধ নেয়ায় ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেছেন।
ডন জানায়, জেনারেল মুনির ঈদ-উল-আযহায় নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর অগ্রবর্তী অবস্থান পরিদর্শনকালে মারকা-ই-হক, অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস-এর সময় ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাহিনীর অনুকরণীয় কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন এবং শহীদ ও গাজীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। যাদের আত্মত্যাগ দেশের নিরাপত্তা ও সংকল্পকে শক্তিশালী করেছে।
এদিকে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা করার পর রয়টার্সকে বলেন, শনিবার তারা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেছে। প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর গত মাসে দিল্লি ও ইসলামাবাদ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি হলেন সবচেয়ে শীর্ষ পর্যায়ের পশ্চিমা কর্মকর্তা যিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই সফর করেছেন।
ল্যামি বলেন, ‘আমরা চাই স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। তবে আমরা মনে করি, পরিকল্পিত সন্ত্রাসবাদ ভারতকে অস্থিতিশীল করতে পারে। সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা ভারতীয় অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহী।’
তিনি বলেন, তিনি মোদি ও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সাথে পরবর্তী পদক্ষেপগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি।
আরও পড়ুন: