
ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টি-পিপিপি’র চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইর্য়কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় অভিযোগ করে বিলাওয়াল বলেন, ‘দিল্লি নিজে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলেই গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।’
মঙ্গলবার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য চাপ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিলাওয়াল বলেন, ‘সংলাপের মাধ্যমেই দুই দেশ তাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলি সমাধান করতে পারে। পাশাপাশি পহেলগাম হামলার পর সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতের পর আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে।’
বিলাওয়াল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন। তিনজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুইজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং একজন ফেডারেল মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের দলের নেতৃত্ব দিচেছন বিলাওয়াল। দলটি রোববার নিউইয়র্কে পৌঁছেছে।
বিলাওয়াল বলেন, ‘পাকিস্তান চায় ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসসহ সব ইস্যুতে একটি বিস্তারিত সংলাপে বসা। পাকিস্তানই সেই দেশ যেখানে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে। পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল নিউইয়র্ক এবং জাতিসংঘ সফর শেষ করছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশটিকে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছে। যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে উৎসাহিত করছে। কাজেই পাকিস্তান চায়, সংলাপের ব্যাপারেও তাদের চাপ দেয়া হোক।’
জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর অংশ হিসেবে পরিচালিত অবৈধ হামলার কথা উল্লেখ করে বিলাওয়াল বলেন, ‘এই হামলা বেসামরিক অবকাঠামো, মসজিদ, জ্বালানি অবকাঠামো এবং নিরীহ নারী ও শিশুদের লক্ষ্য করে চালানো হয়। ভারত ২২ এপ্রিল অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে যুদ্ধের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান কেবল আত্মরক্ষার জন্যই কাজ করেছে।’
এ সময় তিনি যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানের এই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। যা জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। দিল্লি পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা অব্যাহত থাকলে পাকস্তান একে যুদ্ধাবস্থা হিসেবে ধরে নেবে। এটি আন্তর্জাতিক মহলে খুব বাজে নজির স্থাপন করবে।’
পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলটি পৃথকভাবে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাথে দেখা করেছে। তাদের মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর কথা ছিল। যেখানে তাদের ৬ জুন পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সাথে আলোচনার কথা রয়েছে। দলটি লন্ডন এবং ব্রাসেলসও সফর করবে।
চলতি সফরে তারা জাতসংঘের সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক করেছে। এর আগে, দলটি ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে পাকিস্তানের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করেন।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সৈয়দ তারিক ফাতেমি মঙ্গলবার বিকেলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে দেখা করেন। তিনি রুশ কূটনীতিককে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন।
একই দিন ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের এমপি শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে পৌঁছায়। তারা একই ইস্যুতে দিল্লির বয়ান ওয়াশিংটনকে গেলানোর চেষ্টা করবে।
আরও পড়ুন: