শনিবার

১৭ মে, ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
১৯ জিলক্বদ, ১৪৪৬

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার মসজিদে ট্রাম্প, অভিভূত হয়ে বললেন ‘অবিশ্বাস্য সুন্দর’!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ মে, ২০২৫ ১২:৪৬

শেয়ার

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার মসজিদে ট্রাম্প, অভিভূত হয়ে বললেন ‘অবিশ্বাস্য সুন্দর’!
আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শনে ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শন করেছেন-এটাই তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো মসজিদে প্রথম প্রবেশ, যা প্রকাশ্যে জানা গেছে।

মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে এটি ছিল তার তৃতীয় গন্তব্য। সফরের শুরু হয়েছিল সৌদি আরব ও কাতারে আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি তার প্রথম বড় আন্তর্জাতিক সফর।

আবুধাবিতে মসজিদ পরিদর্শনের সময় ট্রাম্প প্রথা অনুযায়ী জুতা খুলে প্রবেশ করেন এবং তাকে অভ্যর্থনা জানান আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ খালিদ বিন মোহাম্মদ আল নাহিয়ান।

মসজিদের ভেতরে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, “এটা কি সুন্দর নয়? এটা সত্যিই দারুণ সুন্দর। এটা এক অসাধারণ সংস্কৃতি।”
 
সাদা মার্বেলের গম্বুজ আর রঙিন ফুলের নকশা খোদাই করা ইতালিয়ান মার্বেল মেঝের জন্য পরিচিত এই মসজিদ। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, পর্যটক, সেলিব্রিটি ও কূটনীতিকদের কাছেও এক আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

মসজিদ পরিদর্শনের আগে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঐতিহাসিক চুক্তির মধ্য দিয়ে এই দুই নেতার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশেই ট্রাম্প পরিবারের বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে। এসব দেশে ট্রাম্প ব্র্যান্ডের টাওয়ার ও গলফ কোর্স নির্মাণাধীন। এমনকি ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রকল্প ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল’-এর মাধ্যমে ইউএই’র একটি বিনিয়োগ তহবিল ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ দেয় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ‘বাইনান্স’-এ।

২০২০ সালে ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জ্যারেড কুশনারও প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে এই মসজিদ পরিদর্শন করেছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে জো বাইডেনও এই মসজিদে গিয়েছিলেন।

তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো মসজিদে গিয়েছেন এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত জীবনে কখনো গিয়েছেন কি না, তাও নিশ্চিত নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কয়েকজন প্রেসিডেন্ট মসজিদে গিয়েছেন। ১৯৫৭ সালে প্রেসিডেন্ট ডুয়াইট আইজেনহাওয়ার ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি মসজিদ উদ্বোধন করেন, আর ২০০১ সালে ৯/১১ হামলার পর সেই একই মসজিদে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। বারাক ওবামা ২০১৬ সালে বাল্টিমোরের একটি মসজিদে যান।

তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করেন যে ‘বিদ্বেষপূর্ণ চিন্তা’ মসজিদ থেকে জন্ম নেয় এবং মসজিদগুলোর ওপর নজরদারি আরোপের কথাও বলেন। প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেন।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে ট্রাম্পের কণ্ঠে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। গত নভেম্বরে মিশিগানের নির্বাচনে মুসলিম ও আরব ভোটাররা তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বাইডেনকে হারাতে সহায়তা করেন। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ঘিরে হতাশ মুসলিম ভোটাররা ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়ান।

চলতি বছরের রমজানে হোয়াইট হাউজে ইফতার আয়োজনে ট্রাম্প বলেন, “নভেম্বরে মুসলিম সম্প্রদায় আমাদের পাশে ছিল। আমি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আমি আপনাদের পাশে থাকব।”

তবে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্পের মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক আবারও খারাপ হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ে অর্জিত গাজা যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় কয়েক সপ্তাহ ধরে ত্রাণ প্রবেশ করতে পারেনি। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন অভিযানে কয়েকজন মুসলিম কলেজ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

এই সফরে ট্রাম্প আবারও এক বিতর্কিত প্রস্তাব দেন গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলেন তিনি।“আমি গর্বিত হব যদি যুক্তরাষ্ট্র গাজা নেয়, এটিকে একটি স্বাধীনতার অঞ্চল বানায়,  ভালো কিছু ঘটতে দিক,” বলেন তিনি।

banner close
banner close