
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গোপন নথি ফাঁস হওয়ার পর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক হামলা আসলে ভারতেরই সাজানো একটি ঘটনা, যাতে পাকিস্তানকে দোষারোপ করা যায়।
টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই নথি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
নিরাপত্তা সূত্রে পাকিস্তানি গণমাধ্যম সামা টিভি জানিয়েছে, নথিটিতে র-এর পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হামলার পর নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী মিডিয়ার মাধ্যমে পাকিস্তান এবং আইএসআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কথা ছিল, তবে সেই পরিকল্পনা ভুলভাবে আগে বাস্তবায়িত হওয়ায় পুরো কৌশল ব্যর্থ হয়ে যায়।
নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, র-এর ভিতরে মতভেদ রয়েছে এবং এই ফাঁসের পেছনে সংস্থার ভেতরের কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
নথি অনুযায়ী, হামলা ঘটানোর আগে নির্দিষ্ট সময়ে মিডিয়া সক্রিয় করা, হামলার সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভারত সফর নিশ্চিত করা এবং এমনভাবে ঘটনাকে সাজানো যাতে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ভারতের দিকে যায়—এসবই ছিল পরিকল্পনার অংশ। হামলার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভিডিও এবং সাক্ষ্য তৈরি করার কথাও নথিতে উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে শত শত অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের পরিকল্পনাও ছিল।
নথিতে দাবি করা হয়েছে, ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় সেনা কমান্ড থেকে কিছু জাল আইএসআই নথি ‘ফরেনসিকভাবে ফাঁস’ করার পরিকল্পনাও ছিল, যাতে পাকিস্তানকে দোষী প্রমাণ করা যায়। যদি মূল পরিকল্পনা ভেস্তে যায়, সেই ক্ষেত্রে শোপিয়ান এলাকায় বিকল্প পরিকল্পনা চালু করার কথাও নথিতে ছিল। র এটাও আগেই বুঝেছিল যে সীমান্তে বেশি উত্তেজনা তৈরি করলে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ আসতে পারে, বিশেষ করে চীন ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে। তাই সেনা গতিবিধিকে ১.২ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, একটি বিকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘ট্যাঙ্গো-ইকো’ নামে একটি করিডোর চালু রাখা হয়েছিল এবং বালুচিস্তানে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী বিএলএ ও বিএনএ-কে সক্রিয় করার প্রস্তুতিও ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হামলার প্রতিক্রিয়া বা বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল এবং র-এর নির্দেশ অনুযায়ী মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা পরে ‘ব্ল্যাক স্ট্যাটাস’-এ চলে যাবেন, অর্থাৎ পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যাবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নথি যদি সত্যি হয়, তাহলে তা শুধু ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ভাবমূর্তি ধ্বংস করবে না বরং গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেও বিপদের মধ্যে ফেলবে। অনেক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক একে একটি সাজানো, রাষ্ট্র অনুমোদিত হামলা বলে দাবি করছেন।
তাদের মতে, এই নথি প্রকাশ্যে আসায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ভারত কাশ্মীরি জনগণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থে নিরীহ মানুষের জীবনকে ব্যবহার করছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি উঠলেও ভারত সরকার এখনো এই নথির সত্যতা বা এর প্রভাব নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
আরও পড়ুন: