রাত পোহালেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার রায় ঘোষণার দিন শুরু হবে। এ উপলক্ষে দিল্লি পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার পরীক্ষিত ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সারাদেশে নাশকতার ছক এঁকেছেন। উল্লেখযোগ্য কুকর্ম হলো - ছিনতাই, ডাকাতি, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, গান পাউডার ও বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ দিয়ে গাড়ি - বাড়ি, দোকান পাট, স্কুল কলেজে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। এসব করে জনমনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে বার্তা দিতে চায় যে, হাসিনাকে শাস্তি দিলে দেশ অচল করে দেবে। অথচ এমন এক মামলায় হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হতে চলেছেন, যে অপরাধের সুস্পষ্ট দালিলিক প্রমাণ আদালতের হাতে রয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ১৫০০ ছাত্র জনতা নিহত হয়েছেন যার মধ্যে শতাধিক শিশু রয়েছে। এছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা স্বয়ং শেখ হাসিনা, তা এনটিএমসি থেকে প্রাপ্ত কল রেকর্ড-এ প্রমাণ মেলে।
তারপরও গুজব ও মিথ্যাচার নির্ভর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে গত ২-৩ দিন সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ময়মনসিংহ ঘুমন্ত বাসচালক-সহ গাড়ি পোড়ানো, এনসিপির কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ, সাভারে গাড়িতে আগুন ও গুলিবর্ষণ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, পুরানো ঢাকা ও গাজীপুরে গাড়িতে আগুন এ সমস্ত ঘটনা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
এমন ভয়ংকর নাশকতার আশঙ্কায় জাতি পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে ব্যাপক দুঃশ্চিন্তগ্রস্থ। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে জামায়াত- শিবির ও এদের মিত্র অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন, এনসিপি রাজপথে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাষ্ট্র বিরোধী এসব কার্যকলাপ মোকাবিলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দল বিএনপির তরফ থেকে শক্তিশালী অবস্থানের ঘোষণা না থাকা হতাশাজনক।
সরকারের তরফ থেকেও প্রস্তুতির দৃঢ়তা দৃষ্টি গোচর হচ্ছে না। সেনাবাহিনীরও ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারের খুব অল্পই প্রয়োগ করছে যা জাতিকে দ্বিধায় ফেলেছে। আর দ্বিধা দ্বন্দ্ব বা দ্বিধাগ্রস্থ হলেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ নাশকতা করবে।
তবে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এই লকডাউনের নাশকতা নিরোধে দায়বদ্ধ। তাদের সব্যসাচী সক্রিয়তা জনগণের চোখে আসছে না। এমনকি উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকেও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হচ্ছে না। এতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভয় তো পাচ্ছেই না বরং আইন প্রয়োগকারীদের নমনীয় স্বভাব ও শীথিলতা তাদেরকে ক্ষেত্র বিশেষে দুঃসাহস যোগাচ্ছে।
সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতি
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্যমতে স্বেচ্ছা পলাতক আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত ১৩ নভেম্বর লকডাউন কর্মসূচি ঠেকাতে সরকার all out effort তথা সার্বিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অর্গল বক্তব্য অনুযায়ী সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে।
যদিও কোথায় কী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে? তার কোন বিশদ আলোচনা দৃশ্যমান নেই। আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপেও রয়েছে অপ্রতুলতা। শুধু বার বার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে দায়িত্বে তৎপর থাকার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ।
আগামীকালের চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি
সরকারের প্রস্তুতির সব বিবরণ জনগণের সামনে সাহস যোগাতে আসেনি। যেমন কোন এলাকায় কখন কোথায় বাহিনী মোতায়েন হবে? কোন ধরনের অপারেশন পরিকল্পনা আছে? কন্ট্রোল রুম বা আকস্মিক বড় ঘটনা ঘটলে সেই পরিস্থিতিতে জাতিকে স্থির রাখতে সিচুয়েশন রুম আছে কি না, সেসব বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়। রীতিমত ধোঁয়াশায় নিপতিত জাতি।
এসব প্রস্তুতির অভাবে হঠাৎ অপতথ্য ছড়াতে পারে, উত্তেজনা সৃষ্টিও হতে পারে, যা সাধারণ জনমানুষের মাঝে বিভ্রান্তি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে।
ঝুঁকি মোকাবেলায় বিবেচ্য বিষয়
যদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয় এবং সংঘাত হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বিপর্যয় হতে পারে। সড়ক অবরোধ, আগুন সন্ত্রাস, বোমাবাজি, হঠাৎ হঠাৎ ভ্রাম্যমান উত্তেজনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে পুরানো ঢাকা, মিরপুর, বাড্ডা, বিহারী পট্টি এলাকাসহ ঘনবসতি ও জনবহুল এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী যদি সময়মতো বা পর্যাপ্তভাবে উপস্থিত না হয়, তখন দায়িত্বহীনতা, অপপ্রচার বা গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পরে।
সংবাদ-মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অব্যাহত গুজব এই পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলতে পারে।
তবে সরকারের সক্ষমতা ও জনবলের ঘাটতি নেই। এখন কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং প্রস্তুতির সময়। গতকাল সরকারের আইনশৃঙ্খলা-সভার প্রস্তুতি বিবেচনায় একটি ইতিবাচক দিক আছে। তাহলো সকল বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। তবে প্রস্তুতির সম্পূর্ণতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, কীভাবে জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, মিডিয়া-মেসেজিং সঠিক আছে কি না? এসব তথ্য আপাতত আনন্দের নয়। এখনো বাহিনীগুলোর কার্যক্রম রি-একটিভ। অর্থাৎ ঘটনা ঘটার পর ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু প্রোএক্টিভ তথা ঘটনা ঘটার আগেই ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এটিই নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকেও সম্ভাব্য ক্যাটাস্ট্রফিক পরিস্থিতি মোকাবেলার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কী আছে এসব এখনো স্পষ্ট নয়।
জনসচেতনতা ও তথ্যপ্রচারে ঘাটতি থাকলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হতে পারে বা ভুল তথ্যের শিকার হতে পারে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বড় ঝুঁকি। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা সক্রিয় থাকলেও সরকারের প্রস্তুতি শুধু বাহিনীর মোতায়েন নয়। বরং সাইবার ও মিডিয়া যুদ্ধ, গুজব প্রতিরোধ, জনমত নিয়ন্ত্রণ এসব দিক থেকেও থাকতে হবে সদা সোচ্চার ও তড়িৎ পদক্ষেপ।
সরকারের মতামত অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে এবং সকল বাহিনীও সক্রিয় আছে। তবে মাঠে তার প্রমাণ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা প্রদান সাধারণ মানুষের কর্তব্য। এ বিষয়ে সরকার গঠনমূলক প্রচারণা চালানো যেতে পারে। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে ভুল তথ্য ও গুজব প্রতিরোধে বিশেষ প্রচার চালানো প্রয়োজন। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য জরুরি যোগাযোগ নম্বর সরবরাহ। রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করা উচিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিশ্চিত করতে, উত্তেজনা না বাড়াতে। এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে থেকে নাশকতাকারীদের রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে বিএনপি জামায়াত এনসিপিসহ সকল দেশপ্রেমিক শক্তি এক হয়ে দিল্লিশাহীর এই অপতৎপরতা শক্ত হাতে দমন করতে হবে। আর এখনই দমন করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে এই দেশে দিল্লির দালাল ও লেন্দুপ দর্জি ছাড়া কেউ বাঁচতে পারবে না। তাই খুব সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ থেকে দিল্লির দালালদের মূলোৎপাটনের এবারই সেরা সুযোগ।
লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আরও পড়ুন:








