বুধবার

১২ নভেম্বর, ২০২৫ ২৮ কার্তিক, ১৪৩২

সিপাহি জনতার রক্তাক্ত বিপ্লব ও বর্তমান বাংলাদেশ

মেশকাত সাদিক

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:১৯

শেয়ার

সিপাহি জনতার রক্তাক্ত বিপ্লব ও বর্তমান বাংলাদেশ
সিপাহি জনতার রক্তাক্ত বিপ্লব ও বর্তমান বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি দিন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দিন দুটি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিবেচনায় সবিশেষ তাৎপর্যমন্ডিত। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনতার বিপুল বিজয়ের মনোরম নান্দনিক দুটি দিন। উভয় দিনেই দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আসে আমূল পরিবর্তন। দুই দিনেই ভারতের আধিপত্যবাদ ও ভারতের সাথে তৎকালীন সরকারের অবৈধ মেলামেশার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত জনতার সক্রিয় অংশগ্রহণে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। একটি ঘটেছিল স্বাধীনতা-পরবর্তী সামরিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে; অন্যটি ঘটেছে ডিজিটাল যুগে, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে, নিকৃষ্ট স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে। এই দুটি ঘটনাকে একত্রে বাংলাদেশের গণঅধিকার, স্বাধীনতা ও ন্যায়ের অভিযাত্রা হিশেবে নিঃসন্দেহে মনে করা যায়।

সিপাহী-জনতার বিপ্লবের প্রেক্ষাপট

স্বাধীনতার মাত্র ৩ বছর পর ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ ছিলো ভারত-তোষণ, রাজনৈতিক বিভাজন, দারিদ্র্য ও প্রশাসনিক দুর্নীতির গভীর সংকটে নিমজ্জিত। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবের দুঃশাসনে সারাদেশে চরম দুর্ভিক্ষ হয়। ছোট্ট দেশটির সর্বত্র খাদ্য সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় লেখা হয় ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল একদিনেই অনাহারে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়। শেখ মুজিবের সাড়ে ৩ বছরের শাসনামল সুনিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভীষিকাময় কালো অধ্যায় বলে অনেক প্রত্যক্ষদর্শী তাদের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন। এই সময়কাল ছিলো মূলত নৈরাজ্য, অভাব-অনটন, গুম-খুন, মুসলিম ধর্ম প্রচার-প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও দুঃশাসন-অপশাসনের নরকক্ষেত্র। কতিপয় ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্টের হাতে জিম্মি ছিলো দেশের সমস্ত জনগণ। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার নামে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানী আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ, মিল ফ্যাক্টরির মেশিনাদি, যন্ত্রাংশ, খাদ্যশস্য, পাট, সুতা, যানবাহন, এমনকি কারখানার মেশিনপত্র ১৫টি জাহাজে করে লুট করে নিয়ে যায়। এই লুটের সম্পদের পরিমাণ ছিলো সেই সময়ে প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতূল্য, যা দিয়ে বাংলাদেশ খুব সহজে ৭ কোটি মানুষের জন্য সুন্দর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে পারতো। কিন্তু সর্বগ্রাসী তথাকথিত বন্ধু ভারতের কারণে তা সম্ভব হয় নি। এভাবে বাংলাদেশের সম্পদ লুন্ঠন এবং অপরদিকে রাজাকার নিধনের নামে চালাতে থাকে নির্বিচারে আলেম-ওলামা ও ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী জনগণ হত্যা ও বন্দীকরণ। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পায়নি দেশপ্রমিক মুক্তিযোদ্ধারাও। আর এ সকল অপকর্মে রসদ যোগায় রক্ষীবাহিনী ও মুজিব বাহিনী। রক্ষীবাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র ও চোরাচালানের মালামাল উদ্ধার এবং মজুতদার-কালোবাজারীদের প্রতিহত করার নামে গঠন করা হলেও এদের মূল কাজ ছিলো ভিন্নমত দমন। এই বাহিনী মুজিবের রাজনৈতিক নীল নকশা বাস্তবায়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, গুম, অপহরণ, চোরাচালান এবং ধর্ষণের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তারা বিভিন্ন গ্রামে ফিল্মি স্টাইলে আক্রমণ করে গণলুণ্ঠন চালাতো। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ লুটপাট এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগও ছিলো। মুজিব সরকারের অপকর্মের পথে কাউকে বাধা মনে করলেই তাকে হত্যা করতো রক্ষীবাহিনী। মূলত রক্ষীবাহিনী হয়ে ওঠে হত্যাবাহিনী।

শেখ মুজিবুর রহমানের এমন ফ্যাসিবাদী শাসনে অতিষ্ট হয়ে মানুষ তার হাত থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতো। ইতিহাসের ঘটনাক্রমে সেনাঅভ্যুত্থানে সপরিবারে তিনি ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ নিহত হন। তখন দেশ প্রবেশ করে এক শূন্য রাজনৈতিক পরিসরে। এরপর ৩ নভেম্বর ১৯৭৫-এ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থান ঘটে, যা সেনাবাহিনীতে ভাঙন সৃষ্টি করে। ওই অভ্যুত্থানে সেনাবহিনীর মাঝে তুমুল জনপ্রিয় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। এই অস্থিতিশীলতার মধ্যে ৭ নভেম্বর ভোরে জেগে ওঠে সিপাহী-জনতা। সেনাবাহিনীর নিম্নপদস্থ সদস্যরা (সিপাহী) অসন্তোষে ফেটে পড়ে। কারণ তারা মনে করেছিল ক্ষমতাসীন উচ্চপদস্থ সেনারা জাতীয়তাবাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও যোগ দেয়। ফলে ঢাকার রাস্তায় ঘটে যায় অভূতপূর্ব সংঘর্ষ ও ঐক্য। এবং জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে সিপাহি-জনতা।

৫ আগস্ট ২০২৪: ছাত্র-জনতার বিপ্লব

প্রায় অর্ধশতাব্দী পরে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশ আবার এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মুখে পড়ে। এবার নেতৃত্বে ছিলেন দেশের তরুণ-প্রজন্ম। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা। মূল দাবিটি ছিলো চাকরিতে কোটা সংস্কার, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানসহ সর্বমোট ৫৬% কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি অসাম্য ও বৈষম্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। দাবি শুরু হয় শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু প্রশাসনের কঠোর দমননীতি, গুলিবর্ষণ, প্রায় ১৫০০ ছাত্র-জনতা হত্যা, ৩০ সহস্রাধিক মারাত্মক আহত ও হাজার হাজার গ্রেপ্তারের ফলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। অল্প সময়ের মধ্যে তা শুধু কোটা নয়, বরং সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ২০২৪-এ আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দেখা দেয়। দেশব্যাপী লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও নাগরিক রাস্তায় নামে। প্রশাসন ব্যর্থ হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। দিন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা [বর্তমানে ভারতে পলাতক] পদত্যাগ করেন এবং দেশ প্রবেশ করে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায়। অনেক বিশ্লেষক এই ঘটনাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় গণবিপ্লব বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে শুধু কোটা সংস্কার নয় বরং ১৫ বছরের সর্বনিকৃষ্ট দুঃশাসনে অতীষ্ট জনগণই হাসিনাকে ভারতে পালাতে বাধ্য করে। ১৫ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদকালে বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার হরণ, যত্রতত্র গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পুলিশ-সহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্মম নিপীড়ন, কথায় কথায় আলেম-ওলামাদের জঙ্গি বানানো, আ. লীগ বয়ানের বিরুদ্ধে গেলেই রাজাকার তকমা, শাপলা চত্বর হত্যাকান্ড, দেশের জনমত ও বিশ্বাসকে ধারণ না করে গুটিকয়েক বামদের দিয়ে ‘র ও রাষ্ট্রীয় মদতে শাহবাগী সৃষ্টি বাংলাদেশের চেতনার বিপরীতে কাজ করে। এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণের নামে ব্যাংক লুণ্ঠন, শেয়ার বাজার লুণ্ঠন, ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থপাচার, সচিবালয় থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক দলীয়করণ, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, ভারতের সঙ্গে চরম নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, সর্বোপরি ধর্মপ্রাণ মানুষকে নানাভাবে হত্যা, নির্যাতন, মিথ্যা ট্যাগিং ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট মারাত্মক গণ-অসন্তোষ হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করে। এতদ্ব্যাতীত গণমাধ্যমের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জাতিকে বিভাজন। ভারতপন্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী এবং অন্য সকলেই রাজাকার এমন বয়ান বারংবার প্রতিষ্ঠা করার অপপ্রয়াস ছাত্র-জনতা রুখে দেয়। বস্তুত বাংলাদেশের অধিকাংশ জনতার বিশ্বাসের বিপরীতে কাজ করেছে তারা। এখানে বর্তমান সরকার ও ভবিষ্যত ক্ষমতা প্রত্যাশীদের জন্য উন্নত মানের শিক্ষা রয়েছে।

দুই বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি

৭ নভেম্বর ও ৫ আগস্টের মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রায় ৫০ বছর। কিন্তু দুটি ঘটনার পেছনের চালিকা শক্তির মাঝে আশ্চর্যজনকভাবে মিল রয়েছে। দুটিই ছিলো ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তীব্র জনক্ষোভ। বাহ্যত উভয় ক্ষেত্রেই শাসকগোষ্ঠীর প্রতি সাধারণ মানুষের গভীর ক্ষোভ কাজ করেছে। ১৯৭২-৭৫-এ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বিকৃত করা শধু আ. লীগের সম্পদে পরিণত করা এবং ২০২৪ সালে এসেও মুক্তিযুদ্ধের একই ন্যারেটিব এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দমননীতি উভয়েই জনগণের মাঝে প্রবল ক্ষোভের জন্ম দেয়। স্বাধীনতার চেতনাগত তাৎপর্যে দুই বিপ্লবই প্রকৃত স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার প্রতীকের ধারক ও বাহক। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবে ছিলো সিপাহী ও নিম্নবিত্ত। ৫ আগস্টে ছিলো ছাত্র ও মধ্যবিত্ত যুবসমাজ। বস্তুত উভয়-ই ক্ষমতার বাইরে থাকা শ্রেণি। তবে পার্থক্য হলো, প্রথমটি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অভ্যুত্থান থেকে জনগণের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি শুরু হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ থেকে, যা পরে সারা দেশে বিস্তৃত হয় চেইন বিক্রিয়ার মতো। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবে দৃশ্যমান নেতৃত্ব ছিলো- সেনা অফিসার আবু তাহের, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং পরোক্ষভাবে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। আন্দোলনটি সংগঠিত ছিলো সামরিক কাঠামো ও রাজনৈতিক দলের (জাসদ) সহযোগিতায়। অন্যদিকে ৫ আগস্টের বিপ্লব ছিলো পুরোপুরি নেতাহীন বা স্বতঃস্ফূর্ত। কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন ছাড়াই ফেসবুক, এক্স (টুইটার), ইউটিউব ও অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সংগঠিত করে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এভাবে প্রযুক্তিনির্ভর তরুণ সমাজ রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা করে, যা ৭ নভেম্বরে-ও অকল্পনীয় ছিলো। তাই, একটির ছিলো সামরিক শৃঙ্খলাপূর্ণ নেতৃত্ব। অন্যটির ছিলো বিকেন্দ্রীভূত জননেতৃত্ব, যা আধুনিক নেটওয়ার্ক রেভলিউশনের প্রতীক। ৭ নভেম্বরের দাবি ছিলো- সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও একদলীয় শাসনের অবসান। জিয়াউর রহমানের মুক্তি ও জাতীয়তাবাদী নীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সামাজিক ন্যায় ও সেনা-জনতার ঐক্য। পক্ষান্তরে ৫ আগস্টের দাবি ছিলো- কোটা সংস্কার, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ। রাষ্ট্রীয় দমননীতি বন্ধ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অবসান। অতএব, ৭ নভেম্বর ছিলো রাজনৈতিক পুনর্গঠনের বিপ্লব; ৫ আগস্ট ছিলো সামাজিক ন্যায় ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিপ্লব। ৭ নভেম্বরের ফলাফল হলো- জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন, শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়। একদলীয় শাসন (বাকশাল) বিলুপ্ত হয়ে বহুদলীয় রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তন ঘটে। সেনাবাহিনী সরাসরি রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তবে বিপ্লবের উদ্দেশ্য জনগণের শাসন পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি; সেনা-রাজনীতি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বহাল থাকে। ৫ আগস্টের ফলাফল হলো- শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ছাত্র ও নাগরিকদের শক্তি আবার প্রমাণিত হয়। ইন্টেরিম সরকার গঠিত হয় এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের ঘোষণা আসে। এই বিপ্লব ডিজিটাল যুগে গণআন্দোলনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তবে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব পরবর্তী সময় সেনাশাসনে রূপ নেয়, তেমনি ৫ আগস্টের পরেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে, সেটাই প্রশ্ন। দুই বিপ্লবের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাবের মিল রয়েছে। উভয় বিপ্লবই জনগণকে সক্রিয় রাজনীতির ময়দানে ফিরিয়ে এনেছে। উভয় ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থা ভেঙে পড়েছিল, যা পুনর্গঠনের আহ্বান সৃষ্টি করেছিল। দুই বিপ্লবই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীকে আবদ্ধ। উভয়েই প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের জনগণ কোনো অন্যায় বা স্বৈরতন্ত্রকে স্থায়ীভাবে মেনে নেয় না। দুটি ঘটনাই রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎ ভাবনা ও নেতৃত্বের কাঠামো পাল্টে দিয়েছে। দুই বিপ্লবই ভারতীয় আধিপত্যবাদকে পদাঘাত করে বিদায় দিয়েছে।

৭ নভেম্বর ১৯৭৫ ও ৫ আগস্ট ২০২৪ দুটি তারিখ বাংলাদেশের ইতিহাসে জনতার জাগরণের দুই ভিন্ন অধ্যায়। একদিকে ছিলো সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান-নেতৃত্বাধীন বিপ্লব। অন্যদিকে ছিলো শিক্ষার্থীদের গণআন্দোলন। সাধারণ ছাত্র-জনতার জনঅভ্যুত্থান। তবে দুই বিপ্লবের মর্ম একই। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও ন্যায়ের অভাবে জনগণ নীরব থাকে না। সময়, প্রজন্ম ও প্রযুক্তি বদলালেও বাংলাদেশ বারবার প্রমাণ করেছে যে গণমানুষের শক্তিই রাষ্ট্রের চূড়ান্ত নিয়ামক। অতএব, ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ছিলো অতীতের ক্ষোভের প্রতিশোধ। আর ৫ আগস্টের বিপ্লব হলো ভবিষ্যতের ন্যায়নির্ভর জনকল্যাণমুখি রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা। একটিতে জন্ম নেয় সামরিক গণতন্ত্রের ধারণা, অন্যটিতে নবপ্রজন্মের গণআন্দোলনের যুগ। উভয়ই বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও ইতিহাসে অমোচনীয় চিহ্ন রেখে গেছে। ‘র এর ষঢ়যন্ত্রে জিয়াউর রহমান শহীদ হলে বাংলাদেশ শান্তি ও উন্নয়নের পথ থেকে বিচ্যুত হয়। আলোর পথ থেকে অন্ধকারে তলিয়ে যায় প্রিয় স্বদেশ আমার। এবার যেন ৫ আগস্টের বিপ্লব ব্যর্থ না হয়, সেই প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ।

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক



banner close
banner close