রবিবার

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

জুলাই গণহত্যা প্রেক্ষিতে ন্যায় বিচার ও দেশপ্রেম

জিবরান খলিলী

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:৩৩

আপডেট: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:৩৬

শেয়ার

জুলাই গণহত্যা প্রেক্ষিতে ন্যায় বিচার ও দেশপ্রেম

ন্যায়বিচার ও দেশপ্রেম এই দুটি শব্দ বাহ্যত আলাদা। শব্দ দুটি একে অপরের প্রতিশব্দ বা সমর্থক-ও নয়। তবে অন্তর্গত দর্শনে রয়েছে গভীর সংযোগ। ন্যায়বিচার হলো সত্য, সমতা ও নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা। আর দেশপ্রেম হলো- দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, আনুগত্য ও ত্যাগের মনোভাব। তবে ভালোবাসা, আনুগত্য ও ত্যাগ বস্তুত সত্য, সমতা ও নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়। ১৬০৩ বা ১৬০৪ উইলিয়াম শেক্সপিয়ার লিখিত নাটক Measure for Measure এর একটি সংলাপে ন্যায়বিচারের ধারণা অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সংলাপটি ছিলো এমন-Measure for Measure must be measured. এই সংক্ষিপ্ত বাক্যটির তাৎপর্য অপরিসীম। বাক্যটির অর্থ এমন করা যেতে পারে- ন্যায়বিচার দিতে হলে পরিমিতি ও ভারসাম্য থাকতে হবে অথবা অতিরিক্ত কঠোরতা বা অতিকরুণা; দুটিই অন্যায়। ন্যায় বিচার চলমান থাকলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা নিরবচ্ছিন্ন থাকে। পক্ষান্তরে ন্যায়বিচার যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে সেই রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও প্রকৃত দেশপ্রেমও টেকে না। কারণ যে সমাজে অবিচার, দুর্নীতি ও বৈষম্য বিদ্যমান, সেখানে দেশপ্রেম কেবল মুখের বুলি হয়ে পড়ে। সবকিছুর মধ্যে হিপোক্রেসি বা মোনাফেকি স্থায়ীত্ব লাভ করে। তাই ন্যায়বিচার হলো দেশপ্রেমের মেরুদণ্ড। আর দেশপ্রেম হলো ন্যায়বিচারের প্রাণশক্তি। অতএব, জুলাই গণহত্যার নিরপেক্ষ ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে; আজ এবং আগামীর নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য। স্বাধীন সার্বভৌম অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের জন্য।

জুলাই-আগস্ট নিরস্ত্র জনহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ

আন্তর্জাতিক আইন ও সংজ্ঞায় এটি গণহত্যা না বললেও ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা হত্যা এবং ৩০ সহস্রাধিক মারাত্মক আহত [যারা অধিকাংশই জীবন্মৃত] পৃথিবীর ইতিহাসে স্পষ্টত বিরল। এটিকে তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় শতাব্দীর সেরা মানবতা বিরোধী অপরাধ। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে নিরস্ত্র জনগণকে [নারী, শিশুসহ] হত্যা করা হয়েছে তা বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়। বিষয়টি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় যে, জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন খুলে তাদেরকে এই জঘন্য হত্যার পরিসংখ্যান তৈরি এবং সুশৃঙ্খল প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে। সেই প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয় যে, সর্বনিম্ন ১৪০০ জন নিরস্ত্র মানুষকে সশস্ত্র পুলিশ এবং ক্ষেত্র বিশেষে অন্যান্য বাহিনী গুলি করে হত্যা করে।

নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ভয়াবহতা

জুলাই হত্যাকান্ডের পূর্বেই ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আ.লীগ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং বাংলাদেশীয় গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় চর-দের মাধ্যমে আলেম-ওলামা, বিরোধী রাজনীতিক এবং প্রতিবাদী লেখক-সাংবাদিক ছাত্রদের গুম করে। এবং আয়না ঘরে বন্দী করে, নির্মম-অকথ্য নির্যাতন চালায়। যে ঘরে তাদের রাখা হয় সেটি কবরের চেয়ে কোনক্রমেই বড় আয়তনের নয়। সমস্ত মৌলিক মানবাধিকার সেখানে লংঘন করা হয়েছে। এরপরও তাদের উপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের মাত্রা কমেনি। বরং অনেককেই হত্যা করে লাশ সিমেন্টের বস্তায় বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছে। অনেককে হত্যা করে রেল লাইনের উপর রেখে আসা ও পরবর্তীতে রেলে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে বলে প্রচার করা। কাউকে কাউকে চলন্ত গাড়ির সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া। এমন ঘটনা একটি দুটি নয়, বরং তা হাজার হাজার। এসব কাজে পুলিশ বাহিনী এবং র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য জড়িত। র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য পদ-পদবী এবং পদোন্নতির প্রত্যাশায় এমন নির্মম হত্যাকান্ডে মেতে ওঠে। তাই ফ্যাসিস্ট আ.লীগ যুগে এসব ঘটনা প্রতিপন্ন করেছে এক ভয়াল রূপ। যেখানে স্বচ্ছতা নেই। মায়া-মমতা ভালোবাসা নেই। শুধু লাশ! আর রক্ত! এসব শুধু এক ব্যক্তির বা এক সংস্থার অপরাধ নয়। এটা অবশ্যই রাষ্ট্রীয় অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিকৃষ্ট নজির ও সত্য-তথ্যসম্বলিত জ্বলন্ত প্রতীক। শাহাবাগী সন্ত্রাসীর জারজীয় উন্মাদনা এসব অন্যায়কে ত্বরান্বিত ও অনুপ্রাণিত করেছে। শাপলা চত্বরের নিরীহ এতিম-আলেম হত্যাসহ সকল হত্যাকন্ডের সহিত ‘র’ ও এদেশীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার নীল-নকশা জড়িত। এসবেরই ধারাবাহিকতায় সংঘঠিত হয় জুলাই হত্যাকান্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধ।

আজও বাংলার মানুষের চোখে ভেসে ওঠে আবু সাঈদ হত্যার নির্মমতা। সরাসরি গুলি করে পাখির মতো তাকে হত্যা করে পুলিশ। পানি বিতরণ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হন মীর মুগ্ধ। শিশু ফারহান ফাইয়াজকে হত্যা বা রিয়া গোপ কোনোটা থেকে কোনোটা কম হৃদয়বিদারক নয়। জীবন বাঁচাতে নির্মানাধীন ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা কিশোরের উপর দফায় দফায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি বা ইমাম হাসান তাইমকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু। কোনোটির চেয়ে কোনোটি কম নৃশংস নয়। কী দুঃসহ স্মৃতি!! এরপরও উপর্যুপুরি গুলি অথবা এপিসির উপর থেকে ইয়ামিনের লাশ রাজপথে ফেলে দেওয়া কোনটা বা কম নৃশংসতা? লাশের হিসাব যাতে কেউ করতে না পারে তার জন্য আশুলিয়াতে লাশ পুড়িয়ে ফেলা!! কোনটা পাশবিক ছিলো না!! মানুষ হয়ে যারা এসব করেছে তারা তো মানুষ নয়। তাদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী জুলাই হত্যাযজ্ঞে ১৪০০ মানুষকে শহীদ করা হয়। এবং এই হত্যাকান্ডে নিরাপত্তা বাহিনী অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত তাজা গুলি দিয়ে মানুষ হত্যা। হত্যার শিকার অধিকাংশ মানুষই তরুণ ও ছাত্র। এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের সংবাদ সংগ্রহ করার কারণে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক এমনকি আহতরা যেন চিকিৎসা নিতে না পারে তজ্জন্য চিকিৎসা কর্মীদের-ও লক্ষ্যবস্তু করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। তন্মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশকে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে। এছাড়াও হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও বোমাবর্ষণ করে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী এবং আ.লীগের সাথে সম্পৃক্ত গোষ্ঠীগুলির দ্বারা নারীরা [বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ] ধর্ষণ ও হয়রানি-সহ যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার, ভলকার তুর্ক, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সমাজ বাংলাদেশের এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেয়।

নির্ভীক ন্যায় বিচার ও মানবতার ডাক

এতো বড় হত্যাকান্ড সংঘটিত হলো। নজিরবিহীন মনবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত হলো। এসবের পেছনে যারা মারাত্মকভাবে জড়িত তিনি হলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। যিনি দিল্লীকে প্রভু মানেন লেন্দুপ দর্জির মতো অবিকল আদলে। এবং তিনি মুসলিম বিনাশী প্রভুভক্ত। তিনি বাংলাদেশের সাথে বেঈমানী করলেও দিল্লীর সাথে করেননি। তাই তাঁকে ভারতের নির্দেশে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে সসম্মানে দাদার কাছে প্রেরণ করা হলো। এরপর ৬ শতাধিক রাজনীতিবিদ এবং পুলিশ যাদেরকে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় দিয়ে সময় মতো সুন্দর ব্যবস্থাপনায় ভারতে প্রেরণ করা হলো। যার বা যাদের তত্বাবধানে ছিলো এই অপরাধী গোষ্ঠী তারা কি দায় এড়াতে পারেন? যেসমস্ত সেনাসদস্য ফ্যাসিস্ট যুগে গুম-খুন ও তৎপরবর্তীতে জুলাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদেরকে ক্যান্টমেন্টের ভেতর সুরম্য ভবনে বসবাসের সুযোগ দিয়ে যারা সেনাবাহিনীর কাছে প্রখ্যাত হতে চাচ্ছেন। তারা ইতিহাসের কাছে কখনো নায়োকিচত সম্মান পাবেন না। যারা এই পুলিশ ও ‘র’ এর এজেন্টদের দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করলেন, তারা কি ভুলে গেছেন? এই পুলিশ ও ভারতীয় দাস-দাসী এবং ভারতীয় দালালগণ (ভাদা) ফ্যাসিস্ট আমলে সেনাবাহিনীকেই ‘ঘাসকাটা’ বাহিনী বলে হেয় প্রতিপন্ন করতেন। মেজর রাশেদকে পুলিশের এসআই এবং ওসি যে হত্যা করলো সেই সমস্ত দোসরদের ও নির্দেশ দাতাকে কেনো নিরাপদ প্রস্থান দিলেন? বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার যে ‘র’ এবং আ. লীগের হাতে শহীদ হলো; তাদের বিচারের বেলায় কেনো এতো নির্লিপ্ততা? তখন তো দেখি বাহিনী প্রেম থাকে না। কী সেলুকাস! দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি কি বিরাট থ্রেট এগুলো- তা ভেবে দেখার এখনই সময়।

তবে সেনাবাহিনীর গুটিকয়েক ভারত-দাসের কারণে গোটা বাহিনীকে কলংকিত হতে দেওয়া উচিত নয়। যদিও দেশের উপর ভারতের চাপ আছে। যদিও সেনাপ্রধান ৩ আগস্ট-২৪ সাধারণ জনগণের উপর গুলি চালাতে অসম্মতি জানানোর কারণে বাংলাদেশ গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বেঁচে যায়, তথাপি এখন ওনার মতো অভিভাবকের কাজ হবে দায়ী সেনা সদস্যদের সাধারণ গারদ-খানায় পাঠানো। কারণ বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্যই এতো গণহত্যা। এতো বড় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত হলো। বিষয়টি যেন কোনক্রমেই এমন না হয় যে, যখন সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য ভালো কাজ করে তখন প্রতিষ্ঠানের সুনাম। আর যখন কেউ অপরাধ করে তখন সেটা ব্যক্তির দায়। আবার শাস্তি দিতে গেলে বাহিনীর মর্যাদা নষ্ট হয়, বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। এমন দুর্বল উক্তি থেকে বিরত থাকা দরকার। ছাত্র-জনতা এখনও তৎপর। ভারতের সাথে আপোস তারা মানবে না।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে মহিমান্বিত যে গুণ মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে, তা হলো ন্যায়বিচার ও মানবতা। সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্ম; সব কিছুর মূলেই রয়েছে এই দুটি আদর্শ। কিন্তু যখন ন্যায়বিচার ভয় পায়, যখন মানবতা মুখ বন্ধ করে, তখন সভ্যতা অন্ধকারে ঢেকে যায়। তাই আজকের পৃথিবী, বিশেষ করে আমাদের সমাজে, দরকার নির্ভীক ন্যায়বিচার এবং মানবতার শক্তিশালী পুনর্জাগরণ। ন্যায়বিচার মানে কেবল আদালতের রায় নয়, বরং সত্যকে স্বীকার করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। প্লেটো তাঁর The Republic-এ বলেছেন, Justice is giving each man his due. কিন্তু সেই ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় না, যদি বিচারক, প্রশাসক, বা সাধারণ মানুষ ভয়ের বশে নীরব থাকে। নির্ভীক ন্যায়বিচার মানে হলো, ক্ষমতার সামনে মাথা নত না করা। প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্যায়কে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করা। এবং সমাজের দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ন্যায়বোধের সহিত মানবতা জড়িত। মানবতা হলো মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সম্মান। ধর্ম, জাতি, বর্ণ সব কিছুর ঊর্ধ্বে যে চেতনা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে শেখায়, সেটিই মানবতা। শেক্সপিয়রের ভাষায়- The quality of mercy is not strain’d; it droppeth as the gentle rain from heaven. যে সমাজে মানুষ মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারে না, সেখানে ন্যায়বিচারও টিকে না। মানবতা হলো ন্যায়ের প্রাণশক্তি। আর নির্ভীক ন্যায়বিচার হলো মানবতার বাস্তব রূপ।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরবতা সবচেয়ে বড় অন্যায়

আজ ন্যায়বিচার রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থ ও ভয়ভীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নির্ভীকতা মানে শুধু সাহস নয়; এটি সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অটল বিশ্বাস। একজন বিচারক, সাংবাদিক, শিক্ষক বা নাগরিক যদি সত্যের জন্য ভয় পায়, তবে রাষ্ট্র ধীরে ধীরে অমানবিক হয়ে ওঠে। নির্ভীকতা ন্যায়ের আত্মা। এটি সেই শক্তি যা একা একজন মানুষকেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়। সংখ্যা গরিষ্টতা বিবেচনায় রাখা কোনো দেশপ্রেম নয়। প্রকৃত দেশপ্রেম, সত্যের সাথে, ন্যায়ের সাথে সম্পৃক্ত। বিবেক কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধীন হতে পারে না। জর্জ অরওয়েল-এর ‘অ্যানিমাল ফার্ম’ উপন্যাসের একটি বিখ্যাত উক্তি হলো- All animals are equal, but some animals are more equal than others. ক্ষমতাবানদের জন্য যেন ন্যায়বিচার এমন না হয়ে দাঁড়ায়।

ন্যায়বিচার ছাড়া স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও দেশপ্রেম অসম্পূর্ণ। আর প্রকৃত দেশপ্রেম মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। মানবতাবিরোধী অপরাধ যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হবে তাদের ক্ষমা করা হবে দেশদ্রোহীতা ও মারাত্মক দুর্বলতার নজিরবিহীন উপমা। এ ধরনের অপরাধ তাই বারে বার সংঘঠিত হতে থাকবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- ‘ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,/ হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা।/ তোমার আদেশে, যেন রসনায় মম/ সত্য বাক্য জ্বলি উঠে খর খড়গ সম।/ তোমার ইঙ্গিতে, রাখি তব মান/ তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।/ অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।’

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক



banner close
banner close