বুধবার

১২ নভেম্বর, ২০২৫ ২৮ কার্তিক, ১৪৩২

জিয়ার আদর্শ ভুলে মুখে আওয়ামী বয়ান; জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বিএনপি

অনিরুদ্ধ অনিকেত 

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৬:৩৫

আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৭:২০

শেয়ার

জিয়ার আদর্শ ভুলে মুখে আওয়ামী বয়ান; জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বিএনপি
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার মূল প্রেরণা এসেছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। তাঁর জাতীয়তাবাদী দর্শন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দলটি গড়ে ওঠে। জিয়ার রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য-ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে যখন রাজনৈতিক বিভাজন ও একদলীয় শাসন সমাজকে সংকীর্ণ করে তুলেছিল, তখন জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন মত, পথ ও শ্রেণির মানুষকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দেন। তিনি শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, বরং ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী তথা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতাকারী দলের ব্যক্তিদেরও জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে সম্পৃক্ত করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে রাজনীতির মূলধারায় যুক্ত করা জরুরি। তাই তিনি কৃষক, শ্রমিক, নারী, প্রবাসী ও তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতির অংশীদার করার চেষ্টা করেন। একইসাথে, তিনি জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও জাতীয়তাবাদের কাঠামোর মধ্যে স্থান দেন। তাঁর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ছিলো ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তিতে গঠিত। যেখানে ধর্ম বা ভাষার সংকীর্ণতাকে প্রাধান্য না দিয়ে সবাইকে ঐক্যের ছায়াতলে আনার প্রয়াস ছিলো। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিএনপি ধীরে ধীরে তার মূল আদর্শ থেকে সরে আসছে। বিএনপির মুখে আজকাল ৭১-এর ভুল বয়ান ও মুক্তিযুদ্ধকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর মতো বালখিল্য আচরণ শোনা যায়, যা তাদের আদর্শিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একসময় বিএনপি নিজেকে ভিন্ন ধারার জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল, যেখানে মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক প্রতীকের বদলে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে দেখানো হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা আওয়ামী লীগের মতো মুক্তিযুদ্ধের গল্প, শহীদদের রক্তের ত্যাগ আর ৭১-এর চেতনার কথা বলতে শুরু করেছে। এতে তাদের রাজনৈতিক বক্তব্যে মৌলিকত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। ঐক্যের বদলে বিভাজন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আওয়ামী লীগের কপির মতো ব্যবহার করলে বিএনপি জনগণের কাছে আর বিকল্প শক্তি নয়, বরং প্রতিদ্বন্দ্বীর ভাষ্যকে পুনরাবৃত্তিকারী দলে পরিণত হচ্ছে। প্রায়শই ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে ’৭১ এর সাথে মুখোমুখি দাঁড় করোনোটা জাতি ভালোভাবে নিচ্ছে না। এভাবে রাজনৈতিক কৌশলগত ভুল, নেতৃত্বের সংকট, আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতার অভাব এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এ বিচ্যুতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জিয়াউর রহমানের আদর্শ: মূল দর্শন

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং মহান স্বাধীনতার দুঃসাহসী ঘোষক। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ছিলো ভঙ্গুর। তিনি তাঁর নীতিগত অবস্থানকে কয়েকটি স্তম্ভের উপর দাঁড় করান। সৎ শাসক জিয়া ‘আমাদের পথ’ নিবন্ধে লেখেন-

“উঁচু পর্যায়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল বিষয়গুলো ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া জাতীয়তাবাদী দর্শনের আন্দোলন এবং মূল্য লক্ষ্য অর্থাৎ শোষণমুক্ত সমাজে প্রতিষ্ঠার কাজ হয়ে পড়বে অসম্পূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ ও বিভ্রন্তিকর। আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে মোটামুটি সাতটি মৌলিক বিবেচ্য বিষয় রয়েছে। তা হচ্ছে: (১) বাংলাদেশ ভূমি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যবর্তী আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক এলাকা। (২) ধর্ম ও গোত্র নির্বিশেষে দেশের জনগণ। (৩) আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা। (৪) আমাদের সংস্কৃতি, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, উদ্দীপনা ও আন্তর্জাতিকতার ধারক ও বাহক আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। (৫) দুইশ বছর উপনিবেশ থাকার প্রেক্ষাপটে বিশেষ অর্থনৈতিক বিবেচনার বৈপ্লবিক দিক। (৬) আমাদের ধর্ম- প্রতিটি নারী ও পুরুষের অবাধে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতি-নীতি পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা। এবং (৭) সর্বোপরি আমাদের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ যার মধ্যে দিয়ে আমাদের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শন বাস্তব ও চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে।”

এই দর্শন ও নীতিই বিএনপির জন্মের পেছনের মূল চালিকা শক্তি। এই ৭টি মূল নীতির কোনটির উপর বর্তমান বিএনপি আস্থা রাখেনি। মহান রাষ্ট্রপতি জিয়া ৭টি মূলনীতির অগ্রগণ্য যে তালিকা দিয়েছেন সেটিও বর্তমান বিএনপি না মেনে ৭ নম্বর ক্রমিকের জন্য প্রলাপ বকে থাকে। বিশেষ করে বিএনপি’র কিছু আওয়ামী নেতা আছে তারা জিয়ার আদর্শ-তো প্রচার করেই না বরং আওয়ামী ন্যারেটিভ আমদানি করার জন্য ৭ নং ক্রমিককে বেশি গুরুত্বারোপ করে। এবং ফ্যাসিবাদের বয়ান সৃষ্টির অপচেষ্টা করে। জিয়ার ৭ দফার প্রথম হলো- (১) “বাংলাদেশ ভূমি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যবর্তী আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক এলাকা।” এই যে ভূমির বিষয় বা টেরিটরি এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এই দুর্জয় নেতা আমাদের সীমান্তের চিহ্নিত শত্রুকে স্মরণ করাতে চেয়েছেন যে, আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের দুঃসাহস যেন না দেখায়। অর্থাৎ, ভারতের সাথে সুপ্রতিবেশি-সুলভ সম্পর্ক থাকবে কিন্তু কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া হবে না। অথচ বর্তমান বিএনপি’র অধিকাংশ নেতা পলাতক স্বৈারাচারের মতো করেই ভারতকে তোষণ করে। যা দেশদ্রোহীতার শামিল বলেই নতুন প্রজন্ম মনে করে। এদিকে দ্বিতীয় দফা ছিলো-(২) “ধর্ম ও গোত্র নির্বিশেষে দেশের জনগণ।” ধর্মীয় বিভাজন করা যাবে না। কিন্তু ইদানিং বিএনপি ফ্যাসিবাদের সাধে তথাকথিত মৌলবাদের বয়ান তুলে ধরছে। যা স্পষ্টতই ভারতের আধিপত্যবাদের পুনরুত্থানের পথকে সুগম করছে। এই সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকে বিএনপি বেরুতে পারছে না। এই সমস্ত ন্যারেটিভ বিদেশী প্রভুদের সন্তুষ্ট করলেও এদেশের মানুষকে খুশি করছে না। ফলে বিএনপি ক্রমশই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের কর্মসূচি এই পরিচ্ছেদে শহীদ প্রেসিডেন্ট লিখেছেন- “জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করা। সংগে সংগে প্রয়োজন সুষম পররাষ্ট্রনীতি। একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সমগ্র দেশবাসীকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। ছোট হলেও একটা সদা প্রস্তুত কার্যকর সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে থাকবে আধাসামরিক বাহিনী ও জনগণের মিলিশিয়া। এছাড়া স্কুল-কলেজে ক্যাডেট কোরের মাধ্যমে মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।” এই কথাগুলোই তো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বলে বলে ডাকসু-জাকসু-তে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। পক্ষান্তরে এই আদর্শ যাদের প্রচার করার কথা ছিলো তারা তাদের নেতার এমন অসাধারণ দর্শনকে সামনে না এনে আওয়ামী ন্যারেটিভকে সামনে আনে। ফলে সাধারণ ছাত্র-জনতা বিএনপি-আ.লীগের মধ্যে বস্তুত কোন পার্থক্য খুঁজে পান না। এবং সেই বিশেষ কারণে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার সাহস দেখান না। কারণ ছাত্রদলের গণেশ সাহসেরা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে অপদস্ত করলে নিজ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তার নামকরণের সার্থকতা জাতির সামনে সগর্বে তুলে ধরেন। সাধারণ-ছাত্র জনতা বিএনপি ও আ.লীগের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য চান দুটি দিক দিয়ে তা হলো- (১) ভারতের ব্যাপারে বিএনপিকে স্পষ্ট হতে হবে (২) ধর্মের ব্যাপারে বক্তব্য পরিস্কার হতে হবে। যা জিয়ার আদর্শ দেখেই বিএনপি শিক্ষা নিতে পারে। কিন্তু তা না করে- আ.লীগ বয়ানে ভর করে ছাত্র-জনতার মন জয় করতে যাওয়া বিশেষ নির্বুদ্ধিতা।

বিএনপি আজ নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল করে আওয়ামী লীগের মতোই বয়ান দিচ্ছে। যে দল একসময় আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পতাকা তুলেছিল, তারাই এখন ভারত তোষণ, সমঝোতা ও কথিত উন্নয়নের গল্প বলতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপকে তারা কঠোরভাবে আক্রমণ না করে অনেক সময় একই ভাষায় কথা বলছে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, বিএনপির আদর্শিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং বিরোধী শক্তি হিসেবে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আওয়ামী বয়ান পুনরাবৃত্তি করে বিএনপি নিজেদের পরিচিতি ও সংগ্রামী চেতনা হারাচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত।

জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্যুতির সূচক

(১) জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণ ব্যাখ্যা- জিয়ার “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” ছিলো সমন্বিত, অরাজনৈতিক ও সর্বজনীন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যা অনেকাংশে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়েছে। তারা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে মাঝে মাঝে বিভাজনের রাজনীতি করছে। (২) গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাওয়া- জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্রের দর্শনকে বিএনপি পূর্ণাঙ্গভাবে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। দলীয় নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব, মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ এবং আন্দোলন-সংগ্রামে এককেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণতন্ত্রের চর্চা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (৩) দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি- জিয়ার দর্শন ছিলো সুশাসন ও দুর্নীতি দমন। অথচ বিএনপি দুর্নীতির অভিযোগে বহুবার সমালোচিত হয়েছে। বর্তমানে বিএনপির ভেতরে দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অনেক স্থানে দলীয় পদ বণ্টনকে কেন্দ্র করে দখলদারিত্ব চলছে, যেখানে ত্যাগী কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ছাত্রদল-যুবদলের কার্যক্রমেও প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে অর্থের বিনিময়ে পদ-বাণিজ্য, এলাকায় আধিপত্য কায়েম ও চাঁদা আদায়ের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিএনপির গণভিত্তি দুর্বল হচ্ছে। দখল ও চাঁদাবাজির এই সংস্কৃতি দলে বিভক্তি বাড়াচ্ছে, বিরোধী শক্তি হিসেবে বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে তবে বিএনপি জনআস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না এবং তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আরও সংকটাপন্ন হবে। (৪) আন্তর্জাতিক অবস্থান-জিয়ার নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি আজ আর বিএনপির রাজনীতিতে স্পষ্ট নয়। কখনও পাকিস্তান-ঘেঁষা, কখনও ভারতবিরোধী, আবার কখনও পশ্চিমা চাপের কাছে নতি স্বীকার-এই অস্পষ্ট অবস্থান দলটিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দুর্বল করেছে।

সম্ভাব্য উত্তরণের পথ

সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিএনপি জনআস্থা হারাচ্ছে। একদিকে সরকারবিরোধী জনঅসন্তোষ বাড়ছে, অন্যদিকে বিএনপি সেই অসন্তোষকে সুসংগঠিত করতে পারছে না। সাধারণ মানুষ মনে করে, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তবে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অদক্ষ নেতৃত্বের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এভাবে দলটির প্রতি আস্থা কমছে। বিএনপি’র বর্তমান ভারত তোষণ ও আ.লীগের সহোদরের মতো আচরণ থেকে মুক্তি মিলতে পারে কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে। যেমন- (১) জিয়ার মূল দর্শন পুনরুজ্জীবিত করা। (২) দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা- মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব গঠন। (৩) স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি (৪) আন্দোলনের রূপান্তর- সহিংসতা নয়, শান্তিপূর্ণ ও সৃজনশীল গণআন্দোলন। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক ন্যারেটিভ নয়। বরং বুদ্ধিবৃত্তিক ও যুগোপযোগী চিন্তাচেতনা তথা সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা পূরণের চেতনা নির্ধারণ। (৫) দাদাদের দ্বারস্থ না হয়ে বাংলাদেশের সর্বশ্রেণীর জনগণের দ্বারস্থ হওয়া। (৬) বিভাজন নয়; ঐক্যের রাজনীতির উপর গুরুত্বারোপ এবং (৭) জনগণকে চোখ রাগানি নয়; বরং ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ছিলো একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, আত্মনির্ভরশীল ও জাতীয় ঐক্যের বাংলাদেশ গঠন। কিন্তু বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুতির প্রমাণ বহন করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের প্রবল সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে নির্বাচন বর্জন, সহিংসতা, এবং বিদেশ নির্ভরতা দলটিকে জনগণ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। যদি বিএনপি আবার জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায়, তবে তাকে জিয়ার আদর্শে ফিরে যেতে হবে এবং সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও উন্নয়নমুখী রাজনীতির পথে হাঁটতে হবে। নতুবা দলটি কেবল অতীতের একটি নাম হয়ে ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক



banner close
banner close