বুধবার

১২ নভেম্বর, ২০২৫ ২৮ কার্তিক, ১৪৩২

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের কালনাগিনী ‘র’ কে রুখে দিতে হবে

অনিরুদ্ধ অনিকেত

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট, ২০২৫ ১৪:৫৬

শেয়ার

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও সাম্প্রদায়িকতা 
বিস্তারের কালনাগিনী ‘র’ কে রুখে দিতে হবে
ছবি: ভারতের পতাকা।

সিন্ধ, হিন্দ বঙ্গের দক্ষিণ এশিয়া, চিরকাল একটি জটিল ভূরাজনৈতিক এলাকা। যেখানে ভারত বরাবরই তার ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, সন্ত্রাসবাদ সাম্প্রদায়িক শক্তির জোরে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে সচেষ্ট। ভারতের আধিপত্য বিস্তারের মূল কারিগর কুখ্যাত জঙ্গিবাদি গোয়েন্দা সংস্থা ভারতের এই আধিপত্যবাদী মনোভাব একদিকে যেমন অঞ্চলটিকে সাংঘাতিক সাংঘর্ষিক অনাস্থার আবহে ঠেলে দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ পররাষ্ট্র নীতিতে চরম সংকটের জন্ম দিচ্ছে। ভারত নিজেইহাম বড়ে মিয়াজাহির করতে গিয়ে যে অপরিণামদর্শী ভয়ংকর আধিপত্য কায়েম করার প্রয়াস চালাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা, আঞ্চলিক সংহতি, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ, জাতিতে জাতিতে শান্তি-সৌন্দর্য গণতান্ত্রিক ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই ভারতের আধিপত্যবাদ এর সকল কার্যক্রম দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, অর্থনীতি, পানি সম্পদ, আন্তঃরাষ্ট্র বাণিজ্য, সীমান্ত, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কূটনীতি, শান্তি স্থিতিশীলতার জন্য চূড়ান্ত অভিশাপ।

ভারতের আধিপত্যবাদের নির্লজ্জ নগ্নরূপ

বিশ্বের অন্যান্য শক্তিশালী দেশের মতোই ভারতের আধিপত্যবাদ মূলত অর্থনৈতিক, উগ্র ধর্মান্ধতা নিজ ধর্ম সম্প্রসারণের জটিল ক্যাপসুলে সংবন্ধিত। ভারত তার এই অপকৌশলগত মনোভাব হীনকার্যকলাপের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে প্রায়ই তাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ এবং নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর অবৈধ চাপ সৃষ্টি করে। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতিতে যাই থাকুক না কেন, তারা সুচতুরভাবে ভারতের উপর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে তার অনুগামী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত পক্ষপাতদুষ্ট সমর্থন দিয়ে থাকে। এমনকি তারা সংস্কৃতি গণমাধ্যমেএর হস্তক্ষেপ এবং অর্থায়নের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে উস্কানি

ভারতের এমন এক গোয়েন্দা সংস্থা যার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এমনকি আফগানিস্তান- পাকিস্তানেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে উস্কানি দেয়, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, শান্তি-শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, উগ্রবাদ নির্মূলকরণের মতো পদক্ষেপগুলি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।মূলত নারী, মাদক অর্থবিনিয়োগের মাধ্যমে নৈতিক স্খলিত নেতৃত্ব, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন বাহিনীর উচ্চ পদস্থদের টার্গেট করে।এর ট্রাপে একবার পড়লেই যতোই দেশপ্রেম থাকুক না কেনো, সেই নেতা বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আর দেশের জন্য কিছুই করতে পারেন না। শুধুএর প্রেসক্রিপশনই বাস্তবায়ন করা লাগে। যেমন গত ফ্যাসিবাদি শাসনামলে বাংলাদেশের সর্বস্তরেতার জাল বিস্তার করেছে। বাংলাদেশে যেহেতু দিল্লির অনুগত আদর্শেরনিয়ন্ত্রিত সরকার ছিলো, ফলে এটি তাদের জন্য অনেক সহজ হয়। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানেএর তৎপরতা অনেক কম। কারণ ভারত আর যাই হোক পাকিস্তানের সাথে লড়তে চায় না। পাকিস্তানের কাছে বার বার পরাজিত হয়ে ভারতের মুখে চুনকালি পড়েছে। এবংযুদ্ধ নিয়ে অপতথ্য ছড়ানোর দায়ে সমালোচিত হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ বিশেষ করে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা আফগানিস্তানেতার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যদিও সাম্প্রতিককালে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ এমনকি নেপাল থেকেও টপেটাঘাত খেয়েছে। আর হতভাগ্য বাংলাদেশে এখনওমারাত্মকভাবে সর্বত্র সক্রিয়।

বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভৌগলিক রাজনীতির গভীর এক বেদনাদায়ক যোগসূত্রে আবদ্ধ। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একপাক্ষিক আধিপত্যপূর্ণ। যার একটি বড় দিক হলো ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানা রকম হস্তক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, নিরাপত্তা, পানি সম্পদ, নির্বাচন অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপের প্রতিক্রিয়া সম্ভাব্য পরিণতি এই অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকি।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন

আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে ভারত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি মন্তব্য করে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ২০১৪, ২০১৮ ২০২৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়। যখন দেশজুড়ে বিরোধী দল সাধারণ জনগণ অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ- নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছিল, তখন ভারত আওয়ামী লীগকে সরাসরি সমর্থন দেয়। নির্বাচনের পরে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনাকেস্ট্যাবিলিটিপ্রতীক মনে করেন, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলেই প্রমাণিত। পক্ষান্তরে বিএনপি, জামায়াত বা অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন। ভারতের কূটনৈতিক যোগাযোগ গণমাধ্যমে এসব দলকে অন্ধকারাচ্ছন্ন বিপজ্জনক শক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে এবং ভারতপন্থী গোষ্ঠীর একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে উঠছে।

বাংলাদেশের গোয়েন্দা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ভারতের প্রভাব বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য চূড়ান্ত অবমাননা। ভারতের গোয়্দো সংস্থা RAW বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় থাকার অভিযোগ বহুবার উঠে এসেছে। সরকারের পরিবর্তন বা ক্ষমতায় টিকে থাকার খেলায় RAW-এর প্রভাবকে অনেকে নির্ধারক বলেও চিহ্নিত করেন। ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তির ফলে বাংলাদেশ সরকার ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তথ্য অপারেশনে সহায়তা দেয়। কিন্তু এটি একতরফা স্বচ্ছতার বাইরে হওয়ায় জনগণের মধ্যে সন্দেহ বাড়ছে। অন্যদিকে সীমান্ত নিরাপত্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনে ভারত পৃথিবীর নিকৃষ্টতম। বিএসএফ কর্তৃক বেসামরিক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা, অপহরণ নির্যাতন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এই ধরণের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কার্যকর প্রতিবাদ জানাতে পারছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে নীরবতা বা মীমাংসার ভান করছে, যা ভারতের একপ্রকার চাপের ফলাফল।

এসবের সাথে সাথে অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ। ট্রানজিট করিডোর চুক্তির মাধ্যমে ভারতের জন্য বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে ভৌগোলিক করিডোর। ভারত ট্রানজিট সুবিধা নিচ্ছে: নদীপথ, রেলপথ, সড়কপথ ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহন করছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী? জনগণের এইসব উদ্বেগ প্রশ্নের উত্তর দেয় না কোন সরকার। ট্রানজিট ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ জনমত উপেক্ষা করে চুক্তি করা হয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণে ভারতের পরোক্ষ প্রভাবের প্রমাণ। এছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যে একতরফা সুবিধা ভারতের সর্বগ্রাসী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, কিন্তু রপ্তানি করে মাত্র - বিলিয়ন ডলার। এই বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি নিয়ে ভারতের অনাগ্রহ এবং বাংলাদেশের নীরবতা অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে চাপে ফেলছে। ভারতের পণ্য বাংলাদেশে শুল্কছাড়ে প্রবেশ করলেও বাংলাদেশের অনেক পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে বাধাগ্রস্ত হয়। আন্তর্জাতিক আন্তঃনদী পানি প্রবাহ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পানি সম্পদে একতরফা দখল চুক্তি উপেক্ষা ভারতের আধিপত্যবাদের নিদারুণ রূপ। তিস্তা চুক্তির দীর্ঘসূত্রতা, অভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য পানি সংকট সৃষ্টি করছে। এসব প্রকল্পে বাংলাদেশের মতামত বা পরিবেশগত প্রভাবের আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন গৃহীত হয় নি।

এদিকে গণমাধ্যম সাংস্কৃতিক প্রভাবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। ভারতীয় চ্যানেলের অপতথ্য প্রচার সাম্প্রদায়িক কনটেন্ট আগ্রাসন এর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের টেলিভিশন, সামাজিক মাধ্যম, সিনেমা হল বিজ্ঞাপনে ভারতীয় প্রভাব ক্রমবর্ধমান। দেশের সংস্কৃতি ভাষা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারতপন্থী মতামতধারী সাংবাদিক বিশ্লেষকদের প্রাধান্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ভারসাম্যহীন করে তুলছে। এভাবে প্রতিনিয়ত প্রোপাগান্ডা বিভ্রান্তি চলছেই। ভারত অনেক সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুকে পশ্চিমবঙ্গ বা দিল্লি মিডিয়ায় বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে। এতে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। এই ধরনের সাংবাদিকতা কলামিস্টগণ অবশ্য বাংলাদেশপ্রেমী হলেও ভারতপ্রেমী। তারা ভারতের খায়, ভারতের পক্ষে গায়।

বহুজাতিক সংস্থা

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের সাথে সাথে SAARC এবং আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে ভারতের একক কর্তৃত্বের চেষ্টা SAARC-এর কার্যকারিতা নষ্ট করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর উদ্ভাবন সার্ক। বিএনপি বিরোধী সুযোগ পেলেই বিএনপি ধ্বংসের নীল-নকশা বাস্তবায়নকারী ভারত। তাই বিকল্প হিসেবে BIMSTEC IORA গড়ে তুলেছে ভারত; যেখানে বাংলাদেশকে সদস্য করা হলেও নীতিনির্ধারণে সকল প্রভাব বিস্তার করছে ভারত। ভারতের কৌশল হলো: যে কোনো আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশ যেন ভারতের স্বার্থের বাইরে কিছু করতে না পারে। ভারতের এসব কূটকৌশলে বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির সংকটাপন্ন। ভারত চায় বাংলাদেশ যেন চীন, পাকিস্তান বা অন্য কোনো শক্তির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক না গড়ে তোলে। পদ্মা সেতু, বন্দর ব্যবহার, সামরিক চুক্তি কিংবা রেলসংযোগে চীনের অংশগ্রহণে ভারত আপত্তি জানিয়ে এসেছে বারবার। এরপরও বাংলাদেশের বিদেশনীতি ভারত-প্রীতি নির্ভর হয়ে পড়েছে, যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।

বাংলাদেশের উপর ভারতের এমন অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একতরফা বাণিজ্যিক সুবিধা, সীমান্ত হত্যা, পানি সংকট অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সব মিলিয়ে জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি আস্থা যেমন কমেছে তেমনি সৃষ্টি হয়েছে বিধ্বংসী ক্ষোভ। বিশেষ করে তরুণ সমাজ সচেতন নাগরিকদের মধ্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে স্পষ্ট অসন্তোষ রয়েছে। ভারতের এই আধিপত্যবাদী কৌশল বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঝুঁকে যেতে বাধ্য করছে। স্বাধীন কূটনীতি গড়ে তোলার জন্য জনগণ বুদ্ধিজীবী সমাজ বিকল্প সম্পর্কের খোঁজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা যেমন দরকার, তেমনি অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত নীতিনির্ধারণে বহিরাগত হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করাও অপরিহার্য। ভারতের উচিত, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য জনমতকে সম্মান করা। অন্যথায় আঞ্চলিক সম্পর্কের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং আস্থা হারানোর এই প্রক্রিয়া ভারতকেই ভবিষ্যতে কূটনৈতিক ক্ষতির মুখে ফেলবে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ভারত তথাএর অপতৎপরতা

নেপালের সংবিধান রচনার সময় ভারত মধেশি ইস্যু সামনে এনে দীর্ঘদিন সীমান্ত অবরোধ করেছিল (২০১৫), যা নেপালে খাদ্য জ্বালানি সংকট সৃষ্টি করে। ভারতপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে সহায়তা করা এবং সাংবিধানিক স্বায়ত্বশাসনে হস্তক্ষেপ নেপালের স্বাধীন চেতনার জন্য চ্যালেঞ্জ। আবার শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের কারণও ছিলো ভারত। অর্থাৎএর ষঢ়যন্ত্রের ফসল। ১৯৮৭ সালে ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী (IPKF) শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়, যা পরে রক্তাক্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এবং হাজারো বেসামরিক হতাহতের জন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনদায়ী। তামিল টাইগারদের সঙ্গে ভারতের প্রাথমিক সম্পর্ক পরে বিশ্বাসভঙ্গ শ্রীলঙ্কার আস্থা বিনষ্ট করে। মালদ্বীপের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য ভারত তথাদায়ী। মালদ্বীপের দেমপ্রেমিক জনগণ ঐক্যব্ধ হলেএর মালদ্বীপীয় চরকে জনগণ প্রত্যাখান করে এবং মুহাম্মদ মুইজ্জুকে নির্বাচিত করে। মুইজ্জু মালদ্বীপের একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ এবং বর্তমানে দেশটির রাষ্ট্রপতি। তিনি ভারত-বিরোধী অবস্থান এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য সুপরিচিত এবং দেশটিতে দারুণ জনপ্রিয়। তার এই অবস্থান ভারতের সাথে মালদ্বীপের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

বাণিজ্যিক অসাম্য অর্থনৈতিক শোষণ

ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য ভারসাম্যহীন। ভারত একদিকে রপ্তানি করে কোটি কোটি ডলারের পণ্য, অপরদিকে এসব দেশ ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে পারে না; বিভিন্ন শুল্ক, নীতিগত বাধা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতের সঙ্গে প্রায় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতির শিকার। নেপাল ভূটান ভারতের ওপর বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় তাদের অর্থনীতি সহজেই ভারতীয় প্রভাবের কাছে অসহায়।

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা প্রভাব বিস্তার

ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর নিরাপত্তা খাতেও হস্তক্ষেপ করেছে। RAW (Research and Analysis Wing)-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তি বিরোধীদের ওপর নজরদারি দুর্বল করার চেষ্টা চালানো হয়। বাংলাদেশে তো ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তো দিল্লি-দাসীই ক্ষমতায় ছিলো। অপরদিকে নেপাল, মালদ্বীপ শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক নেতাদের মোসাহেবি তৈরি করায় ভারতের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ গণবিক্ষোভও দেখা গেছে। এসব দেশে সাম্প্রদায়িকতা উগ্রবাদের খেলা সৃষ্টি করে

ভারতের ভবিষ্যত ভালো নয়

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাবে ভারত উদ্বিগ্ন। তবে ভারতের তথাএর উগ্রসাম্প্রদায়িক জঙ্গি বয়ানের ব্যর্থ কৌশলের প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের আধিপত্যবাদে বিরক্ত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা মালদ্বীপ এখন ভারতের চেয়ে চীনের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের অবকাঠামো বন্দর উন্নয়নে চীনের বিশাল বিনিয়োগ ভারতের জন্য এক প্রকার কঠোর জবাব। অর্থাৎ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় আস্থার সংকট ভারতের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ভারত যদি নেতৃত্ব দিতে চায়, তাকে আস্থা সমতা দিতে হবে, আধিপত্য নয়। ভারতের বর্তমান নীতিতে আঞ্চলিক দেশগুলোতে যেভাবে গণবিক্ষোভ, সন্দেহ, প্রতিবাদ বিকল্প পথ গ্রহণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা ভারতের জন্য কৌশলগত পরাজয়ের উজ্জ্বল উদাহরণ।

ভারতের তথাএর আধিপত্যবাদী আচরণ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। বাংলাদেশসহ অপারপর সকল দেশের জন্য ভারতের মর্যাদাহানিকর আচরণ দক্ষিণ এশীয় ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। এটি কেবল প্রতিবেশীদের স্বাধীনতা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং আঞ্চলিক সংহতি, শান্তি ভ্রাতৃত্ববোধকেও বিলীন করে দিচ্ছে। ভারত যদি সত্যিকার নেতৃত্ব দিতে চায়, তাহলে তাকে সহানুভূতিশীল, সহনশীল সহযোগিতামূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। আধিপত্য নয়, সহযোগিতা। প্রভুত্ব নয়, ভ্রাতৃত্বই হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি। ভারতের নিজ থেকেইএর আন্তঃরাষ্ট্রীয় কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। তা না হলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য সকল দেশ মিলেবিরুদ্ধে এলিট ফোর্স গঠন করে, ‘কে রুখে দিতেই হবে। এই জঙ্গিবাদি উগ্রসাম্প্রদায়িক কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থাকে দক্ষিণ এশিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। এইনামীয় কালনাগিনীর দাঁত উপড়ানোর সময় এখনি। তবেই এই অঞ্চলে শান্তি আসবে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক



banner close
banner close