
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সততা ও নিষ্ঠার কর্মজীবন বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্যসাধারণ। কারণ তিনি এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক যিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সততা, দৃঢ়তা, ন্যায়পরায়ণতা ও নিষ্ঠার সাথে দেশসেবার যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আজও এদেশের ইতিহাসে উজ্জ্বল। একজন মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রনায়ক ও সংগঠক হিসেবে তার আদর্শ, চিন্তাধারা ও অবদান এ জাতি কোনদিন ভুলতে পারবে না। তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি এবং তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন ১৯৫৫ সালে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সৎ, কঠোর পরিশ্রমী ও বীরত্বপূর্ণ অফিসার হিসেবে তাঁর নাম দ্রুতই সুপরিচিত হয়ে ওঠে। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তিনি যেমন দিশেহারা জাতির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন, তেমনি যুদ্ধে দক্ষ নেতৃত্ব ও নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমও তাঁকে দিয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিসংবাদিত অমরত্ব ।
সততা-দায়িত্ববোধ, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগ
সামরিক বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় জিয়া সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেন। করাচিতে অবস্থানকালে তাঁর সততা নিয়ে পাকিস্তানি অফিসারদের ঈর্ষা ছিলো, কারণ তিনি ঘুষ, তদবির বা স্বজনপ্রীতির ধার ধারতেন না। পাকিস্তানি বাহিনীর ভিতরে থেকেও তিনি বাঙালি সেনাদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। তাঁর সামরিক ফাইলগুলোতে বারবার সততা, বুদ্ধিমত্তা ও কর্তব্যপরায়ণতার প্রতীক হিসেবে মন্তব্য পাওয়া যায়, যা আজও প্রমাণ করে, তিনি কর্তব্য কর্মে কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন ও দেশের স্বার্থের প্রশ্নে তিনি কতোটা অবিচল ছিলেন । ১৯৭১ সালে দেশ যখন অগ্নিগর্ভ, তখন জিয়া সরাসরি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মতো এমন দুঃসাহসী কন্ঠ বীর মুক্তিসেনানী ও বাংলাদেশের সকল মানুষ বেতার বার্তায় শুনেছিলেন। এই ঘোষণা শুধু প্রতীকী নয়, বরং তখনকার মুহূর্তে জাতিকে সশস্ত্র প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে, সরকারি পদে থেকেও তিনি জন-মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মূল্য দিয়েছিলেন এবং নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলে দেশকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে সততার অনন্য দৃষ্টান্ত
১৯৭৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সামরিক শাসনের পর দেশকে একটি সাংবিধানিক ধারায় ফিরিয়ে আনা, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন এবং জনমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার সংস্কৃতি গড়ে তোলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় তিনি কখনও নিজের জন্য বিলাসিতা, আত্মীয়-স্বজনের প্রভাব বা ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তার কর্মজীবনে দেখা যায়- নিজের পরিবারের কেউ সরকারি সুবিধা বা বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করেনি। রাষ্ট্রপতি ভবনের বিলাসবহুলতা হ্রাস করে সাধারণ জীবনযাপন বজায় রেখেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেছেন আমরণ। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, প্রেসিডেন্ট থাকার সময় জিয়া নিয়মিত অফিস সময়ের আগেই কাজে যোগ দিতেন, ব্যক্তিগত ব্যয় রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দিতেন না এবং তার পরিবারকেও সেই শিক্ষা দিতেন। জাতীয় উন্নয়নে নিষ্ঠা ও পরিকল্পিত কর্মতৎপরতা ছিলো তার স্বভাব-সুলভ। শহীদ জিয়া দেশ গড়ার মহান ব্রত নিয়ে এক নতুন উন্নয়ন চিন্তার সূচনা করেন। তার শাসনামলে যে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়, তা ছিলো প্রান্তিক জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর। তাঁর সততা নিষ্ঠা নিয়ে প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ‘দেয়াল’ উপন্যাসে লিখেছেন- “বাংলাদেশের মানুষ মনে করতে শুরু করল অনেকদিন পর তারা এমন একজন রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছে যিনি সৎ। নিজের জন্যে কিংবা নিজের আত্মীয়স্বজনের জন্যে টাকাপয়সা লুটপাটের চিন্তা তাঁর মাথায় নেই। বরং তাঁর মাথায় আছে দেশের জন্যে চিন্তা। তিনি খাল কেটে দেশ বদলাতে চান। জিয়া মানুষটা সৎ ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। লোক দেখানো সৎ না, আসলেই সৎ। তাঁর মৃত্যুর পর দেখা গেল জিয়া পরিবারের কোনো সঞ্চয় নেই।”
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান
জেনারেল জিয়া কৃষিতে বিপ্লব ঘটান ‘সবুজ বিপ্লব’ কর্মসূচির মাধ্যমে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উৎসাহ দেন। ব্যাংকিং সেবা গ্রামে পৌঁছে দেন। অব্যবহৃত খাস জমি কৃষকের মধ্যে বণ্টন করেন। ‘দেয়াল’ উপন্যাসে লিখিত প্রথিতযশা ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের উচ্চারণ- “যদি বর্ষে মাঘের শেষ ধন্য রাজার পুণ্য দেশ। জিয়াউর রহমানের পাঁচ বছরের শাসনে প্রতি মাঘের শেষে বর্ষণ হয়েছিল কি না তার হিসাব কেউ রাখে নি, তবে এই পাঁচ বছরে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় নি। অতি বর্ষণের বন্যা না, খরা না, জলোচ্ছ্বাস না। দেশে কাপড়ের অভাব কিছুটা দূর হলো। দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া হলো না। বাংলাদেশের নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তে লাগল”
রাষ্ট্র নায়ক জিয়ার চিন্তা
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা মূলত জাতীয়তাবাদ, অর্থনৈতিক উদারীকরণ, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। জিয়াউর রহমান ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ধারণা প্রবর্তন করেন, যা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশের ভূখণ্ড, সংস্কৃতি ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়। এই ধারণা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয়ে নতুন মাত্রা যোগ করে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন। অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণ। জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশ একটি সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পিত অর্থনীতি থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হয়। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করেন এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করেন। ১৯-দফা কর্মসূচি ও গ্রামীণ উন্নয়ন। জিয়া ১৯-দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন, যার মধ্যে ছিলো কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ এবং ব্যক্তি খাতে শিল্পের বিকাশ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্ব দেন। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ। জিয়া প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি গ্রাম সরকার ব্যবস্থা চালু করেন, যা স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। তবে এই ব্যবস্থা মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারেনি বলে সমালোচনা রয়েছে। সংবিধান সংশোধন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জিয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংরক্ষণ করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রচিন্তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। তাঁর প্রবর্তিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, বহুদলীয় গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ দেশের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। জেনারেল জিয়ার নিজের জবানিতে শোনা যাক তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে কী ভেবেছিলেন-
“আমাদের মূল লক্ষ্য তথা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিমূলে রয়েছে যে শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে, জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। শোষণমুক্ত সমাজ বলতে মূলত বোঝায় ধর্ম-বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার মৌলিক চাহিদা পূরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। মূল এ বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরো আনুষঙ্গিক বিষয়। শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমেই এসবের সমাধান করতে হবে। সে বিষয়ে পরে আরো বিশদ ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। এ কথা স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি শোষণমুক্ত সমাজ। তা অত্যন্ত বাস্তব ও প্রগতিশীল একটি সমাজ যাতে থাকবে সমতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার।”
জনগণের আস্থার প্রতীক ও সততার জয়যাত্রা
প্রেসিডেন্ট হয়ে জিয়া শুধু রাষ্ট্রপতি ভবনে আবদ্ধ থাকেননি। বরং তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে সাধারণ মানুষের সমস্যা সরাসরি শুনতেন। তার প্রতিটি সিদ্ধান্তে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা ছিলো প্রশংসনীয় ও কার্যকরী। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের আসল মালিক জনগণ। এ কারণেই তিনি উন্নয়নের ক্ষেত্রেও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলেন। জিয়ার সফরকালীন বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের বাণী। অথচ তাঁর ক্ষমতায় আসা নিয়ে কিছু কুচক্রীমহল অপপ্রচার করে আজও। এর জবাব বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের লেখা “জিয়া ক্ষমতায় আসার পটভূমি” তে পাই এভাবে-
“বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে জওয়ানরা মিছিল করে স্লোগান দিচ্ছিল, ‘সিপাই সিপাই ভাই ভাই, অফিসারের করা চাই।’ খালেদ মোশাররফের হত্যার পর একদল সিপাহি জিয়ার বাসভবনে হাজির হয় এবং ফটক ও দরজা ভেঙে তাকে মুক্ত করে। তারপর তারা কাঁধে করে জেনারেল জিয়াকে সেনা সদর দফতরে নিয়ে যায়। এসব ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আমাকে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া ১৯৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর। আমি তখন রানী এলিজাবেথের সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতে গিয়েছিলাম। গত কয়েকদিনে শাসক দলের কোনো কোনো মন্ত্রী ও নেতা জেনারেল জিয়া জেলহত্যার জন্য দায়ী বলে কুৎসা রটনা করেছেন। ২ নভেম্বর রাতে খালেদ মোশাররফের লোকজন তাকে গৃহবন্দি করেছিল এবং সর্বক্ষণ তাকে পাহারা দিচ্ছিল। ৭ নভেম্বর জওয়ানরা এসে তাকে মুক্ত করা পর্যন্ত সেভাবেই তিনি পাহারাধীনে গৃহবন্দি ছিলেন। তা ছাড়া খালেদ মোশাররফ তখন সেনাবাহিনীর অধিকর্তা।”
ভারতের ষঢ়যন্ত্রে শহীদ হলেন তিনি
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সেনা অভ্যুত্থানে শহীদ হন জিয়াউর রহমান। বলা হয়ে থাকে, দেশের জন্য নিবেদিত একজন রাষ্ট্রনায়ককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছিল এক সৎ, কর্মনিষ্ঠ ও প্রাজ্ঞ দেশনায়ককে। সৎ রাষ্ট্রপতি জিয়ার জীবনের একটাই উদ্দেশ্য-এই দেশকে আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাবান রাষ্ট্রে পরিণত করা। তাঁর কর্মজীবন ছিল সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্যবোধ ও দেশপ্রেমে পূর্ণ। তিনি নিজের জন্য কিছু চাননি—সব দিয়েছেন জাতির জন্য। তিনি ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি রাষ্ট্রকে শুধুমাত্র পরিচালনা করেননি, গড়ে তুলেছিলেন একটি নতুন পথ, একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশ সর্বদিক দিয়ে স্বাবলম্বী হোক তা ভারত চায় নি কখনো। তাই জিয়া হত্যার নীল নকশা আঁকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। বিবিসি সাংবাদিক সিরাজুর রহমান ‘জিয়া ক্ষমতায় আসার পটভূমি’ প্রবন্ধের ‘দিল্লীর জিয়া বিরোধীতা’ অনুচ্ছেদে লিখেছেন- “জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার একাধিক সাক্ষাৎকার ও একটি দীর্ঘ একান্ত আলাপচারিতা হয়েছে। তাকে আমি সত্যিকারের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তাশীল বলে মনে করতাম। সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আমার সহকর্মী স্যার মার্ক টালি তো বলেছিলেন, সেনাবাহিনীকে ভালোবাসতেন বলেই তাঁর প্রতি ভারত ক্ষুব্ধ। বেসামরিক ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল আরো ব্যাপক। তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন দেশের অর্থনীতি তখন বিধ্বস্ত। রক্ষীবাহিনী আওয়ামী লীগের ৪০ হাজার বিরোধীকে হত্যা করেছিল। চুয়াত্তরের মন্বন্তরে ৭০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। শেখ মুজিব চতুর্থ সংশোধনী জারি করে গণতন্ত্রের পথ পরিত্যাগ করেছিলেন। আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল তিনি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। সরকারি মালিকানাধীন চারটি বাদে অন্য সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।”
এ সকল ক্ষেত্রে সকল দুর্নীতি ও দুরাচার বন্ধ করে রাষ্ট্রপতি জিয়া বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন বলেই তিনি আধিপত্যবাদী ভারতের হত্যার শিকার হন। তবে ভারত তাঁকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শ, সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠা থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তিনি আজও বাংলাদেশের জনমানুষের প্রেরণার বাতিঘর। তার কর্মগাথা ইতিহাসে অম্লান, তার চেতনা চিরজাগরুক। তিনিই আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। চিরশাশ্বত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আরও পড়ুন: