ঘটনার শুরু ৪ অক্টোবর। এদিন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় এক সঙ্গীত অনুষ্ঠানে বাউল শিল্পী আবুল সরকার ইসলাম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেন। একই সাথে কোরআন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র। দাবি ওঠে তার গ্রেপ্তারের। এরপর ডিবি পুলিশ বিশেষ অভিযানে বৃহস্পতিবার ভোরে মাদারীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি।
আবুল সরকারের এ ঘটনায় পক্ষে–বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে অনেকেই। গ্রেপ্তারের পর আবুলের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করেও অনেক বাম নেতা বক্তব্য দিয়েছেন।
অন্যদিকে, আবুল সরকারের শাস্তির দাবিতে গত রবিবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তৌহিদী জনতার ব্যানারে হাজারো মানুষ এবং আলেম সমাজ বিক্ষোভ করেছে। বাউল আবুল সরকারকে মুক্তি না দিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য–সচিব রাশেদ খান। মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান।
সম্প্রতি এক মাহফিলে আবুল সরকারের বিষয়ে হুঙ্কার দিয়ে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, ‘আল্লাহর সানে এত বড় বেয়াদবি—তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা যায়েজ আছে।’ তিনি আরও বলেন, তাকে ছাড়াতে ভণ্ড নাস্তিক, বামরা ও কথিত বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মাজহার হুমকি দিচ্ছে।
বাউল আবুল সরকার ও ‘ফাউল’ ফরহাদ মাজহারকে নিয়ে কী বললেন ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী? এ নিয়ে তৈরি হয় নতুন বিতর্ক।
বাউল শিল্পী আবুল সরকারের বিচার দাবিতে যখন সারা দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে, ঠিক তখনই পুরুষ বাউল শিল্পীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন আরেক বাউল শিল্পী হাসিনা সরকার।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘নারী বাউল শিল্পীরা বিছানায় না গেলে তাদের কোনো প্রোগ্রামে ডাকা হয় না।’ এমনকি তিনিও এরকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
তার এই বক্তব্যের পর একের পর এক উন্মোচিত হতে থাকে বাউলদের বিভিন্ন অভিযোগ। বাংলা এডিশনের হাতে আসা বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, শিল্পীদের দিয়ে নিজের শরীর ম্যাসাজ করাচ্ছেন আবুল সরকার এবং পাশে নারী শিল্পীদের বসিয়ে মনোরঞ্জন করছেন।
শুধু এটুকুই নয়—বাউল গানের নামে চলে নানা অনৈতিক কাজ। চরণের নামে নষ্টামি—নারী–পুরুষ এক করে রাতভর নৃত্য। আবার চরণে ভক্তির নামে দেওয়া হয় সিজদাও।
বাউল শিল্পী আবুল সরকার কীভাবে মুরিদদের কাছ থেকে সেজদা নিচ্ছেন—ধর্মের নামে এগুলো স্পষ্ট শির্ক এমন মন্তব্যও পাওয়া যায়। অন্যদিকে আরেক বাউল শিল্পী খাদিজা ভান্ডারীর দাবি, কোনো বাউল শিল্পী ভক্তের বাড়িতে গেলে এ সময় স্বামী–স্ত্রী শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে তাদের নানা রোগ দেখা দিতে পারে।
তিনি আরও দাবি করেন, বাউলরা নাকি ‘আল্লাহওয়ালা’ যারা নিজেকে সহ বাতাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এদিকে ভণ্ড বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুখোশ খুলে দিয়েছে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক। পত্রিকাটির প্রকাশিত সংবাদে তুলে ধরা হয়েছে—আবুল সরকার কীভাবে গানের মাধ্যমে ধর্ম অবমাননা করতেন।
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বিতর্কিত বাউল শিল্পী আবুল সরকার মহারাজ ওরফে আবুল বয়াতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করার পর আর পড়ালেখা না করে গান গাওয়া শুরু করেন। পঞ্চম শ্রেণি পাস করেই দিতে থাকেন ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা। পাঁচ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন আসরে আবির্ভূত হন কোরআনের ‘তাফসিরকারক’ হিসেবে—বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ও পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে ভুয়া ব্যাখ্যা দিতেন।
স্থানীয়দের বরাতে পত্রিকাটি বলছে—আবুলের আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সন্তানের জনক আবুল বয়াতি বাউল গান শুরু করেন ১০ বছর বয়স থেকে। তার স্ত্রী আলেয়া বেগমও বাউলশিল্পী। আবুল যেখানেই গান গাইতে যেতেন, সেখানেই স্ত্রীকে নিয়ে যেতেন।
সম্প্রতি নিজেকে ‘পীর’ হিসেবে পরিচিত করতে শুরু করেন আবুল—বাড়াতে থাকেন ভক্ত। তিনি দাবি করেন, পীর সৈয়দ হাসিব আল হাসান রেজুইয়ের কাছ থেকে ২০০৭ সালে খেলাফত পেয়েছেন। পালাগানের আসরেও এমন দাবি করতেন। এমনকি নিজের নামও লেখেন ‘সৈয়দে গোলাম মহারাজ আবুল সরকার আল চিশতী নিজামী’ হিসেবে। তার একটি বয়াতি গানের বইও আছে।
দেশে ধর্ম অবমাননার ঘটনা নতুন নয়। এসব ভণ্ডদের কঠিন শাস্তির আওতায় না আনলে ধর্ম অবমাননা দিন দিন বাড়বে—এমন মন্তব্যও করেন অনেকেই।
আরও পড়ুন:








