পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে চলছে তীব্র আসন সংকট। প্রয়োজনের তুলনায় আসন সংখ্যা কম হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় তৈরি হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ১১০টি আসন নিয়ে চলছে লাইব্রেরির সেবা। যা গড়ে প্রতি আসনের বিপরীতে ৪৫ জন।
সম্প্রসারণ কাজের অভাব এবং ক্রমবর্ধমান ছাত্রসংখ্যার কারণে প্রতিদিনই লাইব্রেরিতে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের চাপ। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ও ক্লাস টেস্টের সময়গুলেতে অনেক শিক্ষার্থীদের সিট নিয়ে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো আসন না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে পরীক্ষার সময়গুলোতে ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছে।
একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও লাইব্রেরির এই সীমিত আসন সেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও লাইব্রেরির দিকে প্রশাসনের নজর কম। আধুনিক সুযোগসুবিধা নেই বললেই চলে। তাদের মতে আধুনিক সুবিধাসহ লাইব্রেরি সম্প্রসারণ না হলে একাডেমিক কাজে ব্যাঘাত বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। তাই গবেষণামুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাবিপ্রবির জন্য একটি বড়, আধুনিক ও প্রযুক্তিসম্পন্ন লাইব্রেরি এখন সময়ের দাবি।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো: মোহাব্বাস শেখ মিজান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়ার পরিবেশ, নীরবতা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কিছুই যথেষ্ট নয়। পরীক্ষার আগে লাইব্রেরিতে স্বস্তির জায়গা পাওয়া ভাগ্যের মতোই ।
বইয়ের ঘাটতিও ভয়াবহ। অনেক বিভাগে প্রয়োজনীয় কোর্স ও রেফারেন্স বই নেই, আপডেট বই তো আরও দূরের কথা। যেখানে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বিভাগভিত্তিক সমৃদ্ধ সংগ্রহ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে, সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে প্রতিবার ব্যক্তিগত খরচে বই কিনছে। এক কথায়, লাইব্রেরি যা হওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানকেন্দ্র তা এখন সবচেয়ে উপেক্ষিত খাত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি দ্রুত আসনসংখ্যা বৃদ্ধি, আধুনিক সুবিধা যুক্ত করা এবং নতুন বই সংগ্রহ এই তিনটি সিদ্ধান্ত এখন শুধু প্রয়োজন নয়, জরুরি।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আলহাজ হোসাইন বলেন, মাত্র ১১০ টি আসন সংখ্যা নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সেবা, যা শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায় খুবই নগন্য। জানতে পেরেছি, লাইব্রেরি ভবনের পুরোটায় লাইব্রেরি সেবার আওতায় আনা হবে। কিন্তু আমরা এর দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ এখনো দেখতে পাইনি। সেমিস্টার ফাইনাল ও ক্লাস টেস্টের সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী লাইব্রেরিতে পড়তে আসে। কিন্তু, আসন সীমিত থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও আমাদের আধুনিক লাইব্রেরি সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। বিদ্যুৎ চলে গেলেই লাইব্রেরি অন্ধকার হয়ে যায়, নেই কোন বিকল্প সিস্টেম। লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করার জন্য যে মনোরম পরিবেশ দরকার সেটাও প্রশাসন নিশ্চিত করতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান করছি, দ্রুত আপনারা লাইব্রেরির আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে লাইব্রেরি সেবার মান বৃদ্ধি করুন ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করার জন্য মনোরম পরিবেশ তৈরি করুন।
এদিকে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অল্প জায়গা ও সীমিত আসন নিয়েই তারা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শিগগিরই লাইব্রেরি সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত গ্রন্থাগারিক মো: হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, আমরাও আসন সংকটের বিষয়টি লক্ষ করেছি। ইতিমধ্যেই লাইব্রেরি সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে ফিজিক্যাল স্টাডিও চলছে। তবে, চাইলেই আমরা হুট করে কিছু করতে পারছি না। কারণ, এখানে বাজেটেরও একটি বিষয় রয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রক্টর স্যার এবং প্রোভিসি স্যারের সাথে কথা বলেছি। তারা লাইব্রেরি সম্প্রসারণের বিষয়ে পজিটিভ। এখন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি লাইব্রেরির দিকে নজর দেন তাহলে আমরা আশা রাখছি খুব দ্রুতই একটি দৃশ্যমান ব্যবস্থাপনা দেখতে পাব।
আরও পড়ুন:








