রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাধিক হলের ভবনে ফাটল ধরেছে। আবার কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ হল মেরামত এবং নতুন হলের দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা। নতুন হলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ‘স্বাধীনতা টাওয়ারে’ তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলটির একদল শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলে বিশ্ববিদ্যালয় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলসহ বেশ কয়েকটি হলের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। এদিকে স্যার এ এফ রহমান হলের ১০৫ নম্বর কক্ষের আসবাবপত্র ভূমিকম্পের সময় ভেঙে পড়ে যায়। তবে সেখানে কেউ আহত হয়নি। এছাড়া শামসুন নাহার হলের একটি ভবনের মিড বিল্ডিং অংশে ফাটল দেখা গেছে এবং বারান্দার বেশ কিছু অংশ ফাঁকা হয়ে পড়েছে, বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
এদিকে কবি জসীম উদদীন হলের দক্ষিণ ভবনের তৃতীয় তলায় পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের দাবিতে ভবনের দুই অংশের মাঝের ফাঁকা অংশ নতুন পলেস্তারা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল। ভূমিকম্পে সেই অংশেই ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলো পরিদর্শনের প্রস্তুতি নিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মুহসীন হলের শতাধিক শিক্ষার্থী শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে মিছিল নিয়ে কর্মচারীদের জন্য নবনির্বাচিত স্বাধীনতা টাওয়ার দখল করতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তারা কর্মচারী ভবনে নিজেদের সিট বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত, তারা ভবনের শূন্য কক্ষে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন।
মুহসীন হল সংসদের ভিপি সাদিক হোসেন সিকদার বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন এই হলটিকে বসবাসের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু ১০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন নড়াচড়া নেই। বিবেকহীন প্রশাসন আমাদের জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকিতে রেখে নিজেরা নিরাপদে দিন কাটাচ্ছে এটাই আমরা দেখেছি। এর আগেও বহুবার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, হাত-পা ভেঙেছে, গুরুতর চোট পেয়েছে, সেইসব এখন শুধু দৃষ্টান্ত।’
তালা ভেঙে কর্মচারী ভবনের ফাঁকা কক্ষে শিক্ষার্থীদের অবস্থান:
এইদিন সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে কর্মচারীদের আবাসিক ভবন স্বাধীনতা টাওয়ারের শূন্য কক্ষগুলো তালা ভেঙে উঠে পড়েছেন মুহসীন হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিষয়টি হলটির একাধিক শিক্ষার্থী তা নিশ্চিত করেছেন।
হল সংসদের সদস্য মো. ফেরদাউস বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছ থেকে তাদের দাবির বিষয়ে কোন ইতিবাচক সাড়া না পাওয়াতে শূন্য কক্ষগুলেতে উঠে পড়েছেন। যারা উঠেছেন, তারা এখানেই অবস্থান করবেন।’
হলের সমাজসেবা সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে জীবন দিতে আসি নি। আজকে আমাদের অধিকার আদায় করেই ফিরব।’
সন্ধ্যায় এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাইফুল্লাহ। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘কর্মচারীদের ভবন স্বাধীনতা টাওয়ারের যে রুম গুলো খালি সে রুম গুলোতে মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। আজকে থেকে মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা এখানেই থাকবে।’
মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বুয়েটের প্রতিবেদনে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে কিন্তু বসবাসের অনুপযোগী এরকম কিছু বলা হয়নি। বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই এখন হলের মেরামত ও সংস্কার কাজ চলছে। এমন দুর্ঘটনায় আফটার শকের একটা বিষয় আছে, সেই জায়গা থেকে নিরাপত্তার প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা সেখানে গেছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আবার কথা বলব। হলের ভবনগুলোকে পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীদের জন্য যা ভালো হয় সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং হলগুলোর অবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:








