গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) একাডেমিক ভবনে স্থাপিত পানির ফিল্টারগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সেগুলোতে শ্যাওলা ও ময়লার স্তর জমে উঠেছে। বিশুদ্ধ পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত এসব ফিল্টার এখন শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে উঠছে।
সরেজমিনে একাডেমিক ভবনের বিভিন্ন স্থানে থাকা ফিল্টার ঘুরে দেখা যায়—অধিকাংশ ফিল্টারের ট্যাপ ও পাশের দেয়ালে সবুজ রঙের শ্যাওলা জমে আছে। অনেক ফিল্টারের ট্যাপ সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। কিছু ফিল্টারের ভেতরেও শ্যাওলা জমে আছে, যা বাইরে থেকেই স্পষ্ট দেখা যায়।
এই ভবনে ৫টি অনুষদের ১৭টি বিভাগে পড়াশোনা করেন প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই এসব ফিল্টারের পানি পান করছেন।
ফিল্টারগুলোর গায়ে ‘একুয়া প্রো’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লোগো রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে—নির্ধারিত সময় পর ফিল্টার কিট পরিবর্তন না করলে পানি বিশুদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যায় এবং তা ব্যবহারকারীর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আইন বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাদিদ শারাফ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি প্রায় ছয় মাস। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যার মধ্যে একটি হলো বিশুদ্ধ পানির অভাব। আমাদের ডিপার্টমেন্টে ফিল্টার থাকলেও সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। পানিতে বাজে গন্ধ থাকে, তিক্ত লাগে। প্রতিদিন বাসা থেকে পানি আনা সম্ভব নয়, তাই বাধ্য হয়েই এই পানি পান করতে হয়।”
ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী ও হেলথ ক্লাবের সদস্য মো. মইন হাসান বলেন, “পানি জীবনের প্রধান উপাদান। কিন্তু যদি সেই পানি অস্বচ্ছ বা জীবাণুযুক্ত হয়, তবে তা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ফিল্টারে শ্যাওলা জমলে পানি ঘোলা হয়ে যায়, দুর্গন্ধ হয় এবং এতে ব্যাকটেরিয়া–ভাইরাস জন্মায়। এর ফলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, চর্মরোগ এমনকি লিভার ও কিডনির সমস্যাও হতে পারে। নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার করা, মেয়াদ শেষ হলে কিট পরিবর্তন করা—এগুলো করলে সহজেই এই সংকট দূর করা সম্ভব।”
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ আলম বলেন, “শ্যাওলা জমে থাকা কোনো ফিল্টারের পানি পান করলে পানিবাহিত রোগ বা ফুড পয়জনিংয়ের ঝুঁকি থাকে। সময়মতো ফিল্টার পরিষ্কার না করলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। সব ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর না হলেও প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই মাসে অন্তত এক–দুবার পানি পরীক্ষা করা উচিত। পাশাপাশি নির্ধারিত ক্ষমতা শেষে ফিল্টার পরিবর্তন বা পরিষ্কার করা বাধ্যতামূলক।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী নাজমুল হাসান বলেন,“ফিল্টারগুলো প্রতি ছয় মাস অন্তর পরিষ্কার করা হয়। কয়েকদিন আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। আজকেও কিছু নতুন ফিল্টার ও মোটরের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।”
আরও পড়ুন:








