রবিবার

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর, ২০২৫ ০৬:২৪

শেয়ার

ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত
ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত

জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হয়রানির অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়।

সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরোধিতায় ভূমিকা রাখার দায়ে ১৯ জন শিক্ষক ও ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শাস্তি নির্ধারণ কমিটি গঠন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।

একই অভিযোগে জড়িত থাকার কারণে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষাজীবন শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে সিন্ডিকেট।

বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা হলেন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম. আক্তারুল ইসলাম ও ড. মিয়া রাসিদুজ্জামান।

এছাড়া বরখাস্ত অন্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন—ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন, আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।

বরখাস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিন, ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে. এম. ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমান।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রতন রায়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিক, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তরিকুল ইসলাম।

এছাড়া ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিমুল খান, আইন বিভাগের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের মাসুদ রানা, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মেজবাহুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ বিভাগের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওন, অর্থনীতি বিভাগের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

অন্যদের মধ্যে রয়েছেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নাবিল আহমেদ ইমন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ইমামুল মুক্তাকী শিমুল।

এর আগে গত ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্য, ভিডিও ফুটেজ, সংবাদ প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন প্রমাণ পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট বিপ্লববিরোধী ও দমনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।

কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় এবং সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে।

এদিকে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও উসকানিদাতা ও পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারীদের এখনো চিহ্নিত করা যায়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত অব্যাহত আছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



banner close
banner close