রবিবার

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

ছাত্রলীগ নেতা এনসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য

হাফিজুর রহমান নিরব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:০৬

আপডেট: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:০৯

শেয়ার

ছাত্রলীগ নেতা এনসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য
ছবি: আসিফ মোস্তফা জামাল

হাসিনা পালানোর আগেও শেখ মুজিবের বন্দনা করে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন আসিফ মোস্তফা জামাল ওরফে আসিফ নিহাল। সবশেষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাত্রলীগের পৌর শাখার কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ছিলেন নিহাল। এরপরও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা। এ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন জুলাই যোদ্ধারা।

২৪-এর জুলাই আন্দোলনে সামান্যতম অবদান না থাকলেও সুযোগসন্ধানী আসিফ ঠিকই ৫ আগস্টের পর নিজেকে জুলাইয়ের অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত করতে ফেসবুকে ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করেছেন। জুলাই যোদ্ধাদের ৫ আগস্ট-পরবর্তী যেকোনো কার্যক্রমের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে পদ বাগিয়েছেন এনসিপির প্রথম ও প্রধান কমিটিতে। সেখানকার জুলাই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এমনই অভিযোগ উঠেছে।

নিহালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্বদানকারীদের অবমূল্যায়ন করেছেন তিনি। কারণ, তিনি জুলাই আন্দোলন ঠেকানো ছাত্রলীগের অনেক সদস্যকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তালিকায় স্থান দিয়েছেন।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম লড়াকু নারী সৈনিক এবং সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত শামসুন্নাহার হলের ভিপি কানিজ কুররাতুল আইন। নিহালকে দলে অন্তর্ভুক্ত করায় এনসিপির দক্ষিণ অঞ্চলের সংগঠক ফয়সাল আহমেদকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।

এমন অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ফয়সাল। তিনি বলেন, নিহালের ছাত্রলীগের পদের বিষয়টি জানতেন না। এমনকি তাঁর এনসিপিতে পদ দেওয়ার বিষয়েও কোনো সুপারিশ করেননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তখনকার কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রাহিম বাংলা এডিশনকে বলেন, আসিফ নিহালকে ৫ আগস্টের আগে চিনতেন না তিনি। এনসিপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে স্থান পাওয়ায় তাকে জেলা পর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এছাড়াও আসিফের তৎপরতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বাংলা এডিশনকে জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা ওয়াহিদুজ্জামান সাইম।

একই অভিযোগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজপথে সংগ্রাম করা একাধিক জুলাই যোদ্ধা। এদের মধ্যে অন্যতম আল বাশরী সোহান বলেন, ৫ আগস্টের আগে আসিফ নিহালের কোনো ধরনের কার্যক্রম তারা দেখেননি।

এসব অভিযোগ নিয়ে বাংলা এডিশনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আসিফ নিহালের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি পোস্টও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে আগস্টের তিন তারিখে শেখ মুজিবের আদর্শ নিয়ে তিনি পোস্ট করেছিলেন ঠিকই। হাসিনা পালানোর পর সেই পোস্টগুলো ডিলিট করলেও তাঁর করা পোস্টের স্ক্রিন রেকর্ড বাংলা এডিশনের হাতে এসেছে।

সেখানে দেখা গেছে, মুজিবের বক্তব্য উদ্ধৃত করে নিহাল লিখেছিলেন, আদর্শে ঘাপলা না থাকলে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এতটা মিলে যেত না। ক্ষমতা বাংলার জনগণের কাছে। জনগণ যেদিন বলবে ‘বঙ্গবন্ধু ছেড়ে দাও, বঙ্গবন্ধু একদিনও রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার রাজনীতি করেননি; তিনি রাজনীতি করেছেন শোষণহীন সমাজ কায়েমের জন্য।

এই পোস্টের সঙ্গে একটি ভিডিও যোগ করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি, বঙ্গবন্ধু পেয়েছেন চোরের খনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোস্ট দেওয়া এবং ডিলিট করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন আসিফ মোস্তফা জামাল ওরফে আসিফ নিহাল। একই সঙ্গে দিয়েছেন অভিনব যুক্তিও।

আসিফ নিহাল জুলাইয়ের আন্দোলনে ছিলেন কি না, সেটি জানেন না জেলার এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আলাউল হক। তবে, তিনি ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন এ কথা শুনে বিব্রত হয়েছেন আলাউল।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক সারজিস আলমের স্বাক্ষরিত একটি কমিটির তালিকায় দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আসিফ মোস্তফা জামাল ওরফে আসিফ নিহালকে। এসব বিষয়ে জানতে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক সারজিস আলমকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আন্দোলনের মাত্র এক বছর যেতে না যেতেই প্রকৃত যোদ্ধাদের অবমূল্যায়নের মাধ্যমে বিপ্লবের অর্জন এবং যোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ জীবন হুমকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন জুলাই যোদ্ধারা। তাই, ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে জুলাইকে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।



banner close
banner close