আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) এর নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ। এছাড়া একইসাথে শপথ নিয়েছেন হল সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল দুপুর ২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ পাঠ করান চাকসুর সভাপতি ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। হল সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ পাঠ করান স্ব- স্ব হলের প্রভোস্ট।
গত ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে এই চাকসু নির্বাচন। সহ সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস)সহ ২৬ পদের ২৪টিতে বিজয় লাভ করে ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্প্রীতির শিক্ষার্থীর জোট' প্যানেলের প্রার্থীরা৷ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচিত হয় ছাত্রদল প্যানেলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন, পবিত্র গীতা, পবিত্র বাইবেল, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ এবং জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে চাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ নেন। পরে পর্যায়ক্রমে ১৪ টি হল এবং ১টি হোস্টেল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ নেন।
কেন্দ্রীয় সংসদে শপথ নিলেন যারা:
ভিপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন ছাত্রশিবির প্যানেল থেকে নির্বাচিত ইব্রাহিম হোসেন রনি এবং জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব। এজিএস পদে শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।
১৮টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৭টিতে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা জয় পেয়ে শপথ নিয়েছেন। তারা হলেন—খেলাধুলা ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ শাওন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে হারেজুল ইসলাম, সহ-সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জিহাদ হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল নোমান, সহ-দপ্তর সম্পাদক পদে জান্নাতুল আদন নুসরাত, ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে মাহবুবুর রহমান।
এছাড়া গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক পদে তানভীর আনজুম শোভন, সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে তাহসিনা রহমান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে আফনান হাসান ইমরান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে মোনায়েম শরীফ, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান সোহান, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে ইসহাক ভূঁইয়া, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে ওবায়দুল সালমান, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক পদে তাওহিদ রাব্বি, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে মাসুম বিল্লাহ নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে শপথ নিবেন তামান্না মাহবুব প্রীতি।
এছাড়া ৪জন নির্বাহী সদস্য শপথ নিয়েছেন —জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা, সালমান ফারসি, সোহানুর রহমান ও আদনান শরীফ।
শপথ নিতে আসেননি চাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস। তিনি গতকাল বুয়েট শিক্ষার্থী ধর্ষণ নিয়ে বিব্রতমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে৷ অধিকাংশ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জানান, যদি আকাশ দাস শপথ নিতে আসেন তাহলে তারা শপথ নিতে আসবেন না। এরকম তোপের মুখে পড়ে আর শপথ নিতে আসেননি আকাশ দাস।
শপথ শেষে সদ্য নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, “আমরা চমক দেখাতে আসিনি। আমরা আমাদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে এসেছি। আমার ভাই বোনদের অনুরোধ থাকবে আপনারা আমাদের ভুল কাজের সমালোচনা করবেন। যেন আমরা সবসময় সঠিক পথে থাকি।”
চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “চাকসু প্রতিনিধিরা সব কাজ করতে পারবে না৷ কারণ তাদের হাতে সেই ক্ষমতা নেয়। তারা শুধু পথ দেখাতে পারবে। মূল কাজ বাস্তবায়ন হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্বারা।”
এসময় চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, “শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নির্বাচন থেকে সম্পূর্ণ দূরে ছিলাম। সম্পূর্ণ নির্বাচন সুন্দরভাবে পরিচালনা করে মডেল তৈরি করেছে চাকসু নির্বাচন কমিশন। সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় দেশ ছাড়া বহিঃবিশ্বেও আমরা সুনাম কুড়িয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নেতা তৈরির ফ্যাক্টরি না, বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আশা করছি, শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা তাদের ভালোকাজ অব্যাহত রাখবে।”
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, চাকসু নির্বাচনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম আরিফুল হক সিদ্দিকীসহ চাকসু নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ।
১৯৭০-৭১ এবং ১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষ ২য় ছাত্রসংসদের (চাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) আ.ফ. ম মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আমি চাকসুতে একবার জিএস হয়েছি এবং ডাকসুতে ২বার ভিপি হয়েছি। তবে আমার সব অর্জন এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আমাকে বারবার মুগ্ধ করে। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিশ্ববিদ্যালয় আসলেই বিরল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড৷ অথচ গবেষণার দিক দিয়ে এটি এখন প্রাচ্যের নর্দমার মতো হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এখন আদর্শের লড়াইটা বড় নই, বড় হলো কর্মসূচি। আর জ্ঞানের আলোর মাধ্যমে দেশের সব সংকট দূর করা যাবে। যা ছাত্রসংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই সম্ভব।”
আরও পড়ুন:








