সোমবার

২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

ধর্ষণের ঘটনায় বিতর্কিত পোস্ট করে সমালোচনায় চাকসুর নির্বাহী সদস্য আকাশ

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:৩৫

শেয়ার

ধর্ষণের ঘটনায় বিতর্কিত পোস্ট করে সমালোচনায় চাকসুর নির্বাহী সদস্য আকাশ
সংগৃহীত ছবি

সম্প্রতি বুয়েটে ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি বিতর্কিত পোস্ট দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নবনির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস।

মুহূর্তের মধ্যে তার এই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তার এই পোস্ট ঘিরে ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন চাকসুর এই প্রতিনিধি। তবে সমালোচনা শুরু হলে তিনি তার এই পোস্ট ডিলিট করে দেন। পরে তিনি এমন মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিজের একাউন্ট থেকে আরেকটি পোস্ট করেন।

সদ্য অনুষ্ঠিত চাকসু নির্বাচনে আকাশ দাস নির্বাহী সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয় লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন। চাকসুর পরপরই তিনি ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করায় তাকে ঘিরে চলছে নানা সমালোচনা।

সম্প্রতি বুয়েটে ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন আকাশ দাস। তার পোস্টে তিনি বুয়েটে ধর্ষণের ঘটনার বিভিন্ন আলোচনা তুলে ধরেন। দীর্ঘ এই ফেসবুক পোস্টের একজায়গায় তিনি লিখেন, 'একটা মেয়েকে কখনোই জোরপূর্বক ভাবে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা সম্ভব না, যদি না মেয়েটার আগ্রহ থাকে।' ফেসবুকে তার এমন মন্তব্যের পরপরই ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, সম্প্রতি বুয়েটের ধর্ষণ কান্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। যে ছেলেটা ধর্ষণ করলো সবাই তার বিচার দাবি করছে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি যতটুকু বুঝি, একতরফাভাবে কখনো কাউকে দায়ী করা যায় না। ছেলেটা যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি আমি দাবি করছি। কিন্তু মেয়েটা যে নির্দোষ এমনটাও তো নয়। বরং যে ধরনের ধর্ষণকাণ্ডগুলো ঘটে থাকে বেশিরভাগ মেয়েরাই ছেলেদের ফাঁসানোর জন্য ধর্ষণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এখানেও এমনটা ঘটেছে কিনা সেটিও তদন্তের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।

আকাশ দাস লিখেন, ছেলের দোষ যদি ৭০% থেকে থাকে তাহলে আমি বলব মেয়েটার দোষ ৩০% হলেও আছে। হয়তো বা মেয়েটার মনের মত ছিল না বলে ছেলেটাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। বিগত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে এমনটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটেছে। বিষয়টা হল এমন, নিজের মন মত হলে বন্ধু বা বয়ফ্রেন্ড আর মন মতো না হলে ধর্ষক। এজন্য সকলেরই বন্ধু নির্বাচনে আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। ধর্ষকদের একমাত্র শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে আমাদের দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে বেশিরভাগই বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এগুলো আসলে ধর্ষণের পর্যায়ে পড়েই না। দুঃখজনক হলেও সত্য মেয়েরা আইনের সুযোগ নিয়ে ছেলেদের ফাঁসিয়ে দেয়। এই দেশে নারী নির্যাতন আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন আইন এখনো নাই। এখানে শুধুই একতরফাভাবে ছেলেটাকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ ভালোভাবে তদন্ত করলে দেখা যাবে মেয়েটার দোষ ছেলের থেকে আরো অনেক বেশি।

ফেসবুক পোস্টে আকাশ দাস লিখেন, আমি মনে করি, মেয়েদের ব্যাপারে ছেলেদের আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার। অনেক ছেলেরাও জোরপূর্বক ধর্ষণ করে অনেক সময় তবে এই সংখ্যাটা খুবই কম। দেখা গেল বেশিরভাগ ঘটনা গুলোই প্রেম ঘটিত ঘটে থাকে যতদিন পর্যন্ত ভালো সম্পর্ক থাকে ততদিন পর্যন্ত যেকোনো কিছু বৈধ হয়ে যায়, যখনই সম্পর্কটা খারাপ হয়ে যায় তখনই তার অভিযোগ শুরু। এজন্য কারো সাথে বিবাহ বহির্ভূত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করা উচিত নয়। ছেলেটা যদি সত্যিকার অর্থেই দোষী হয়ে থাকে তাহলে তার সাজা হওয়া উচিত মৃত্যুদণ্ড। আর যদি মেয়েটার দোষ পাওয়া যায় অথবা মেয়েটা কোন সুবিধা হাসিল করার জন্য মিথ্যা বলে থাকে তাহলে আমি মনে করি সেই মেয়েটারও মৃত্যুদণ্ড হওয়া দরকার। একটা মেয়েকে কখনোই জোরপূর্বক ভাবে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা সম্ভব হবে না, যদি না মেয়েটার আগ্রহ থাকে। গ্রামাঞ্চলে বা শহরের বিভিন্ন প্রান্তের সম্ভব হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটা সম্ভব হবে না বলেই আমার ধারণা। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উচিত অবশ্যই এটির একটি সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং আইন অনুযায়ী অপরাধির বিচার নিশ্চিত করা। এমনটা যেন না হয় ছেলেটাকে এই একতরাফাভাবে আসামি বানানো হলো আর মেয়েটা ছাড় পেয়ে গেল। অবশ্যই দুইজনের ব্যাপারে সঠিক তদন্ত করতে হবে। তারপর যদি ছেলেটা দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত। অন্য কোনো শাস্তি আসলেই মানুষকে ধর্ষণ থেকে রক্ষা করতে পারবে বলে আমি মনে করি না। প্রিয় ভাই-বোনদের আমি অনুরোধ করব এ বিষয়গুলো যেহেতু অনেক সেনসিটিভ তাই অবশ্যই আপনারা এ বিষয়গুলো আরো বেশি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন। এবং সৎ মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন।

আকাশ দাসের এমন মন্তব্য বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছে চাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি ইব্রাহিম রনি। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, চাকসুর নবনির্বাচিত সদস্য আকাশ দাশ বুয়েটের ধর্ষণ ঘটনাকে ঘিরে তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে যে নিন্দনীয় মন্তব্য করেছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি যেন অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে এই আহ্বান জানাচ্ছি।

ফেসবুকে আকাশ দাসের পোস্টের সমালোচনা করে পাল্টা পোস্ট করেছেন ছাত্রদল প্যানেলের বিজিত জিএস প্রার্থী শাফায়াত হোসেন। নিজের একাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, আকাশ দাস...জাতে মাতাল, তালে ঠিক। কখন, কোথায়, কিভাবে ধর্ম ব্যবহার করতে হবে শেখানো হয়ে গেছে।



banner close
banner close