পাঁচ বছর পর আবারও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে ফিরছেন মো. দেলোয়ার হোসেন। আদালতের রায়ে তার অব্যাহতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা হওয়ায় তিনি আগের পদে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। তবে চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন জমা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশের প্রতিবাদের মুখে পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান ছাড়াই ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হয় তাকে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের আইনজীবিসহ উপস্থিত হন দেলোয়ার হোসেন। এ সময় একদল শিক্ষার্থী তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। পরে তাদেরকে সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেনের কক্ষে চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন জমা দিতে যান তিনি।
এসময় দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেলোয়ার হোসেন বলেন, "যখন আমাকে অবৈধ ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় সাথে সাথে আমি হাইকোর্টে মামলা করি হাইকোর্টে আমাকে পাঠায় সাভার আঞ্চলিক আদালতে সেখানে ৪ বছর মামলা চলে। এর মধ্যে এক বছর বিবাদি পক্ষ হাজিরাই দেয় নাই, মামলা চলতে থাকছে এর পর এক পাক্ষিক রায় হইছে আমি নেইনি। এর পর আরও একবার অর্ডার হয় আমি তাও নেইনি। পরে আমি জানাই অন্য পক্ষকে চিঠি দিতে কারেকশন করতে। আমি কনটেস্ট করতে চাই। তার পর কনটেন্ট করেছে। কিন্তু স্বাক্ষীর নাম দেয়ার পর আর স্বাক্ষী দেয়নি। ৫ বার বলেছে স্বাক্ষী দেয়ার কথা কেউই স্বাক্ষী দেয় নাই।"
তবে দেলোয়ার হোসেনের পুনর্বহালের খবরে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ। তাদের দাবি, আদালতে “ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য” উপস্থাপন করে রায় আদায় করেছেন দেলোয়ার হোসেন। তারা অভিযোগ তোলেন, “দেলোয়ার হোসেন দুর্নীতিগ্রস্ত ও চরিত্রহীন”—এই অভিযোগ তুলে উপাচার্যের কক্ষে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। 'লম্পটের গালে জুতা মারো তালে তালে', 'লম্পটের চামড়া, তুলে নিবো আমরা' স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্রশাসনিক ভবন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠলে দেলোয়ার হোসেন ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কৃষ্ণ বলেন, "রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘ ৫ বছর মামলা পরিচালনার পরে ০৮/১০/২৫ ইং তারিখে আদালত থেকে রায় পায়। রায়ে উল্লেখ করা আছে তাকে যে ১২/০৯/২০ তারিখে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে (টার্মিনেট) তা অবৈধ ঘোষণা করেন এবং ওইদিন থেকে তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে বহাল আছে এবং ওইদিন থেকে এখন পর্যন্ত তার যত বেতন-ভাতা বকেয়া আছে সেগুলো পরিশোধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।"
তিনি আরো জানান, "আজকে সে আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ভিসি বরাবর আবেদন করে, ভিসি প্রথমে আবেদন গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে ছাত্র সংসদ ও সাধারণ ছাত্রদের চাপের মুখে তিনি বলেন আজকে না হোক কালকে বা পরশু গ্রহণ করবো এর পরেও যদি সে আবেদন গ্রহণ না করে তাহলে তিনি আমাদের আবেদনে লিখে দিবেন গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তার পরে আমরা আবার আদালতে যাবো।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, "আমরা কোনো অস্থিতিশীল অবস্থা চাই না। সব কিছুরই একটা আইনি প্রক্রিয়া আছে। আইনি প্রক্রিয়ায় আসলে তার (দেলোয়ার হোসেন) কোনো বাঁধা থাকবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড আছে, আইন উপদেষ্টা আছে সে বিষয়গুলোও আমলে নিয়েই পুনর্বহাল হবে।"
উপাচার্য আরও উল্লেখ করেন, "শিক্ষার্থীরা গ্রহণ না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে। পুনর্বহালের বিষয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, ফলে আপাতত নথি গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।"
উল্লেখ্য, দেলোয়ার হোসেন এর আগে দীর্ঘদিন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে কিছু প্রশাসনিক অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। পরে ২০২০ সালে প্রশাসনিক অনিয়মসহ একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে দেলোয়ার হোসেনকে রেজিস্ট্রার পদ থেকে চাকরিচ্যুত করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন। পরে তিনি এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেন এবং সম্প্রতি আদালতের রায়ে পুনর্বহাল হন।
আরও পড়ুন:








