বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শুধু বই নয়, প্রকৃতি থেকেই শেখাতে চায় তারা। এই ভাবনা থেকেই ইউক্যান (Young Climate Action Network)–এর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘অরণ্য পাঠশালা-Aranya Pathshala’ বাংলাদেশের প্রথম জলবায়ু শিক্ষা ভিত্তিক বিদ্যালয়। অরণ্য পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা যুধিষ্ঠির চন্দ্র বিশ্বাস, একজন তরুণ জলবায়ু কর্মী ও ইউক্যানের প্রতিষ্ঠাতা। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু ন্যায়বিচার আন্দোলনে।
তার ভাষায়, আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যেখানে শিশুরা শুধু পরীক্ষায় ভালো করবে না, বরং পৃথিবীটাকেও ভালো রাখবে।
অরণ্য পাঠশালা সেই ভাবনার বাস্তব রূপ যেখানে শেখা মানে প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব।
জলবায়ু ন্যায়বিচার ও তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সংস্থা ইউক্যান (YOUCAN)–এর এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় জলবায়ু শিক্ষা ও পরিবেশ-সংবেদনশীলতা যুক্ত করা। যাতে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পারে মানুষ আর প্রকৃতি আলাদা নয়, পরস্পরের পরিপূরক।
বিশ্বের ‘Green School’ আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউক্যান এই উদ্যোগ শুরু করে, তবে অরণ্য পাঠশালাকে দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশের মাটির বাস্তবতা অনুযায়ী এখানে শিক্ষা মানে সহাবস্থান, টেকসই জীবনের অনুশীলন, আর দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তোলা। বর্তমানে অরণ্য পাঠশালায় পড়ছে ৩৩ জন শিশু, যাদের বয়স ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। তাদের শেখান দুইজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক, যারা পরিবেশ শিক্ষা ও শিশু মনোবিজ্ঞানে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
বইয়ের পাঠ মিশে যায় বাস্তব জীবনের সাথে। বন্যা কেন হয়, গাছ কেন দরকার, পানি কোথা থেকে আসে সব শেখানো হয় হাতে-কলমে, চোখে দেখা, মনে রাখা।
অরণ্য পাঠশালায় শিশুরা নিজেরাই ছোট প্রকল্প তৈরি করে। কেউ স্কুলে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পদ্ধতি বানাচ্ছে, কেউ গাছের চারা লাগাচ্ছে, কেউ আবার গ্রামের বর্জ্য কমানোর উপায় ভাবছে।
অর্থায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, আর নীতি, সহায়তার অভাব সবই চ্যালেঞ্জ। কিন্তু যুধিষ্ঠির চন্দ্র বিশ্বাস মনে করেন, “পরিবর্তন শুরু হয় এক পা এগিয়ে যাওয়া থেকে।” তাদের স্বপ্ন, অরণ্য পাঠশালা একদিন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়বে, যেন প্রতিটি শিশু প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থানের পাঠ পায়, ছোটবেলা থেকেই বুঝে যে জলবায়ু পরিবর্তন শুধু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নয়, জীবনের বাস্তব। অরণ্য পাঠশালার প্রতিটি দিন এক নতুন শিক্ষা, কেমন করে শেখা যায় যত্ন নিতে, দায়িত্ব নিতে, আর পৃথিবীকে ভালোবাসতে। এই স্কুলের প্রতিটি শিশুই একদিন হবে পরিবর্তনের দূত। যারা গাছ লাগাবে, নদী বাঁচাবে, আর পৃথিবীকে একটু বেশি বাসযোগ্য করে তুলবে।
অরণ্য পাঠশালা আজ শুধু একটি স্কুল নয়, এটি এক দর্শন, এক আন্দোলন, এক সবুজ বিপ্লবের শুরু। ইউক্যান পথ দেখাচ্ছে, শিক্ষা যদি প্রকৃতির সঙ্গে মিলে যায়, তবে ভবিষ্যৎও সবুজ হয়ে উঠতে পারে
আরও পড়ুন:








