সোমবার

২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

খুবিতে র‌্যাগিং, মাদক ও ধর্ম অবমাননার অপরাধে ১৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১৪:৪২

শেয়ার

খুবিতে র‌্যাগিং, মাদক ও ধর্ম অবমাননার অপরাধে ১৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) র‌্যাগিং, মারামারি, ধর্ম অবমাননা ও মাদকসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ১৯ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ১২ জনকে বহিষ্কার এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ও জরিমানা করা হয়েছে।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা বোর্ডের ২৭তম সভায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর থেকে অফিস আদেশের মাধ্যমে শাস্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়।

অফিস আদেশ অনুযায়ী, অপরাধের মাত্রাভেদে শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার, একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা এবং আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষকের ওপর হামলার অভিযোগে বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মো. মোবারক হোসেন নোমানকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার একাডেমিক সনদ বাতিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আজীবন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় মানবিক বিবেচনায় সনদ বাতিলের সিদ্ধান্তটি শর্তসাপেক্ষে স্থগিত করা হয়।

মাদক সেবন, ক্রয় ও বিক্রয়ের অভিযোগে অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের হাসান হাওলাদার এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের আমিনুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ক্যাম্পাসে মারামারির ঘটনায় আইন ডিসিপ্লিনের মো. জাহিদুল ইসলামকে স্থায়ী বহিষ্কারের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনায় আইন ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরাফ হোসেন রাব্বী ও আমিনুল এহসানকে অভিভাবকসহ মুচলেকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাগিংয়ে সম্পৃক্ততার দায়ে গণিত ডিসিপ্লিনের কে এম রাউফুল আলম অর্নবকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার এবং একই ডিসিপ্লিনের রিমন মিয়া, আহসান হাবীব ও সালমান হোসেনকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা ও মুচলেকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মারামারির ঘটনায় শিক্ষা ডিসিপ্লিনের মো. উমর ফারুক ও সাদমান উদ দৌলাকে বর্তমান টার্মের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের মনিরুজ্জামান রিয়াদ এবং শিক্ষা ডিসিপ্লিনের জিয়াদ আল সামসকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা ও মুচলেকা দিতে বলা হয়েছে।

গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে গণিত ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী বাবুল আক্তার দুর্জয়, রাশেদ খান মেনন এবং বাঁধন রায়কে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মো. রাসেল শেখকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই অভিযোগে তার সহপাঠী তনয় রায়কে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট থেকে রাসেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনকে কটাক্ষ করেন এবং ইসলাম ধর্ম, আল্লাহ, কুরআনের আয়াত ও আলেম সমাজ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য পোস্ট করেন। তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় ফরজ ‘জিহাদ নিয়েও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেন। একই ব্যাচের তনয় রায়ের বিরুদ্ধেও ইসলাম ধর্মের ফরজ বিধান নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগে বলা হয়, রাসেল নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমেও জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে আঘাত হানার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায় এবং ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্বাগত জানিয়েছেন।



banner close
banner close