চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। শিবির সমর্থিত প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়েছে শাখা ছাত্রদল। পাশাপাশি ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের রিরুদ্ধেও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে ছাত্রশিবির, চবি শাখা।
বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিনের কাছে অভিযোগ জানান শাখা ছাত্রদল। একইদিনে বিকাল সাড়ে ৫টায় অভিযোগপত্র জমা দেন শাখা ছাত্রশিবির।
চাকসু নির্বাচনের আচারবিধি-২০২৫ এর ৪ নং ধারা (ঙ) -এ বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ক্লাস-পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে। সেদিকে প্রার্থী বা তার সমর্থকরা সজাক দৃষ্টি রাখবেন।
শাখা ছাত্রদলের অভিযোগপত্রে বলা হয়, চাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম রনি। শাখা ছাত্রদলের অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেন প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় ও জিএস মো. শাফায়াত হোসেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম রনিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হৃদয় তড়ুয়া ভবনের (নতুন কলা) তৃতীয় তলায় ইতিহাস বিভাগের ৩২৩ নাম্বার ক্লাসরুমে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে উপস্থিত ছিলেন। তার এই ভিডিও ফুটেজ মুঠোফোনে ধারণ করা হয়েছে। এসময় তিনি ক্লাসের মাইক তথা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করেন।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ছাত্রশিবিরের ভিপি পদপ্রার্থী নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এটার ডকুমেন্টস আমাদের কাছে আছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। কমিশন যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পাবে তবে বুঝে নিবো যে তারা ব্যর্থ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার সময়ে ক্লাসে উপস্থিত থাকা ইতিহাস বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইলিয়াস আহমেদ (সিয়াম) বলেন, “ইব্রাহিম রনি ভাই আমাদের সাথে কুশল বিনিময় করতে এসেছিলেন। তিনি আমাদের বিভাগের সিনিয়র বড় ভাই। তিনি ক্লাসরুমে কোনো লিফলেট বা ভোট চাননি। তবে তিনি অ্যালামনাইদের নিয়ে কথা বলেছেন”
এদিকে চাকসু আচরণবিধির একই ধারা উল্লেখ করে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে শাখা ছাত্রশিবির। ক্লাসরুমে ছাত্রদলের প্রচারণার একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ক্লাসরুমে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের ব্যালেট বিতরণ করছেন ছাত্রদলের কর্মীরা। এসময় ক্লাসের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে জনজনে গিয়ে লিফলেট দিচ্ছিলেন ছাত্রদলের ৩ জন কর্মী।
ছাত্রশিবিরের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আজ আনুমানিক দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ১টার মধ্যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের এল.এল.এম ক্লাসরুমে অনুষ্ঠিত ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস চলাকালীন সময়ে, আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন (ছাত্রদলের কর্মী) ক্লাসে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তিনি ক্লাস চলাকালীন সময়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারমূলক বক্তব্য প্রদান করেন, লিফলেট বিতরণ করেন, এবং অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ও উত্তেজনাকর মন্তব্য করেন, যা চলমান পাঠদান কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, উক্ত ফ্যাকাল্টির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলে ঘটনার যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যাবে।
এছাড়াও, আমার কাছে ঘটনাটির ভিডিও প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে, যা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, “আমরা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। আইন অনুষদে আমাদের প্রার্থীরা যখন প্রচারণা চালাতে যায় সেখানে তারা একজন ছাত্রদল কর্মীকে ক্লাসে ঢুকে প্রচারণা চালাতে দেখে। আমাদের কাছে ভিডিওসহ প্রমাণ আছে। শুধু প্রচারণা নয় সেখানে সে বিভিন্ন দল ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্যও দিয়েছে। আমরা এজন্য অভিযোগ জমা দিয়েছি। আশাকরি নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।”
এ বিষয়ে চাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “আমরা অভিযোগপত্র দুইটি আমাদের আচরণবিধি কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিব এরপর আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবো।”
আরও পড়ুন:








