সোমবার

২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৪ পৌষ, ১৪৩২

শিক্ষাঙ্গনে কেন অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:১৪

শেয়ার

শিক্ষাঙ্গনে কেন অস্থিরতা
ছবি: সংগৃহীত

গেলো বছরে জুলাই-আগষ্টে টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনে পতন ঘটে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের। এরপর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত এক বছরে শান্ত হয়নি শিক্ষাঙ্গন; বরং সংঘর্ষ, আন্দোলন আর শিক্ষক লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে উত্তাল ছিল সারা বছর।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক নিজেদের শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। মব করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্তত আড়াই হাজার শিক্ষককে। ছাড়া ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ, অবরোধ, আন্দোলন এবং শিক্ষকদের শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ছিল প্রায় নিয়মিত। অস্থিরতার ছোঁয়া লেগেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও।

গত এক বছরে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত হয়েছে অন্তত ২৬টি সংঘর্ষ, নয়টি বড় আন্দোলন তিনটি হত্যাকাণ্ড। সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ মিলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অন্তত ১২০টি আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ে প্রবেশ করে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করানো এবং অটোপাস আদায়ের দাবি। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালেও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অটোপাসের দাবি তুললেও সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে।

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক প্রধানদের পদত্যাগে চাপ তৈরি হয়। কেউ পদত্যাগে রাজি না হলে তাকে অপমান লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও পরিস্থিতি চলতে থাকে প্রায় বছরজুড়েই।

কুয়েটে ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় বহিষ্কার হওয়া ৩৭ শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং অপসারিত হন উপাচার্য উপ-উপাচার্য।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলো মে মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরিয়ে দেওয়া হয় উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিন, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রব্বানী কোষাধ্যক্ষ মো. মামুন অর রশিদকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত হন উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্তত ১৮০ জন। জারি হয় ১৪৪ ধারা। সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে উপাচার্যসহ ২০০ শিক্ষককে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। ট্রেন অবরোধও হয় একাধিকবার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাকসু নির্বাচন ঘিরে হয় সংঘর্ষ। এদিকে বুয়েট সর্বাত্মক শাটডাউনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।

ছাড়া ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষ ছিল নিয়মিত ঘটনা।

শিক্ষক-কর্মচারীরাও সময়ে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষকরা বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছেন। দাবি না মানলে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা করেন তারা। বেসরকারি শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি, বেতন-ভাতা বাড়ানো জাতীয়করণের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে নামেন। গেলো জানুয়ারিতে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা শাহবাগে পুলিশের হামলার শিকার হলেও পরবর্তীতে তাদের দাবি আংশিক মেনে নেয় সরকার। জুনে শিক্ষক নিবন্ধনে অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের আন্দোলন দমন করতে পুলিশ জলকামান সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।

শিক্ষাবিদদের মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক . মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, “গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ক্ষোভ বেড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক . মো. তৌহিদুল হক বলেন, “ আগস্টের পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীরা ভেবেছিল পরিবর্তন শিক্ষাখাত থেকেই শুরু হবে। কিন্তু তা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোও শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ভুলতে বসেছে। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা গভীর হচ্ছে এবং যেকোনো বিষয়েই আন্দোলনে নামছে।



banner close
banner close