কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) গুম হওয়া দুই শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও আল–মুকাদ্দাসের সন্ধান ও ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
শনিবার দুপুর দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীরা— ‘ওয়ালিউল্লাহ ও আল-মুকাদ্দাস ভাইয়ের খোঁজ নাই, প্রশাসনের লজ্জা নাই; আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না; অ্যাকশন টু অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন; আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না; গুমকারীদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না; গুমকারীদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত করে।
মানবন্ধনে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, "২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের পর ১ বছর ২৫ দিন সময় অতিবাহিত হবার পরেও আমরা এই গুম হওয়া ভাইদের হদিস পাইনি। আমাদের ভাইরা কী অবস্থায় আছে আমাদের সেই খবরটি দিন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্পষ্ট করে বলতে চাই এই গুমের পেছনে তৎকালীন প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ জড়িত ছিল। অনতিবিলম্বে আপনারা জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করুন। শিক্ষার্থীরা যদি দোষীদের চিহ্নিত করা শুরু করলে আপনারা আপনাদের গদি ধরে রাখতে পারবেন না।"
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, "দ্রুত গুম কমিশনের রিপোর্ট শিক্ষার্থী ও জাতির সামনে প্রকাশ করুন। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টর, ওয়ালিউল্লাহ ও আল–মুকাদ্দাসের হল প্রভোস্ট, তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ধরুন, তাহলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। আপনাদের মুখে কেন কুলুপ, আপনারা কেউ গুমের সাথে জড়িত কিনা আমার তো সন্দেহ হয়। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আমার ভাইদের সন্ধান চাই। শিক্ষার্থীদের রক্তের ওপর দিয়ে আপনারা প্রশাসনে বসেছেন। আমরা যখন স্টেপ নেবো, তখন আপনারা পালাতে বাধ্য হবেন।"
গুম হওয়া শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ’র বড় ভাই অধ্যক্ষ খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, "আমি যখনই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি তখন আমার পা চলে না। কারো সঙ্গে কথা বলতে গেলে, কণ্ঠ কেঁপে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় আমার মা–বাবার কাছেও কিছু বলতে পারিনি, কারণ তাদের কষ্ট দিতে চাইনি। আমার দুই ভাই ওয়ালিউল্লাহ ও আল-মুকাদ্দাস গুম হয়েছে। আমি আমার শত্রুর জন্যও এমন পরিণতি কামনা করি না। এ ধরনের ঘটনা তৎকালীন প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। সর্বোচ্চ প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি যত গুম হয়েছে, তার সবগুলোরই সন্ধান চাই। আমরা ন্যায়বিচার চাই।"
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৩৭৫০ নম্বর বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন দুই শিক্ষার্থী। পথিমধ্যে আশুলিয়ার নবীনগর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরবর্তীতে পুলিশ এ ঘটনায় গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করে। এখম পর্যন্ত ওই দুই শিক্ষার্থীর কেনো সন্ধান মেলেনি। গুম হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন— দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ্ এবং আল-ফিকহ্ অ্যান্ড ‘ল’ বিভাগের শিক্ষার্থী আল-মুকাদ্দাস।
আরও পড়ুন:








