কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) প্রকল্প দুই বছরেও শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়সীমার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
২০২৩ সালের ২১ জুন শুরু হওয়া এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ড্যাফোডিল জাপান আইটি লিমিটেডকে কাজ দেওয়া হয়, যাদের ইতোমধ্যে ৫২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ইকোনমিক সাপোর্ট থেকে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকায় সার্ভার ক্রয় করা হয়েছে। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্ভার না কিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ই-রিসোর্স সেন্টারে চলমান সফটওয়্যার ক্লাউড ব্যবহার করাই যথেষ্ট ছিল।
প্রকল্পটি মূলত এডুসফট কনসালটেন্টস লিমিটেডের দায়িত্বে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাবেক উপাচার্য মঈন ও বিটিআরসির সাবেক কমিশনার মুশফিক মান্নান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে কাজটি এডুসফট পায়নি বলে দাবি করেন এডুসফটের সিইও হাসান সারওয়ার।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেলের সিনিয়র প্রোগ্রামার মো. নাসির উদ্দীন ও সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে গঠিত ৯ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটি রয়েছে।
ইআরপি প্রকল্প শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি জমা, সার্টিফিকেট উত্তোলন, ফলাফল পাওয়া, শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীরা যেকোনো স্থানে থেকে দ্রুত সেমিস্টার ফি জমা দিতে পারবেন এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা ডিজিটাল মাধ্যমে বেতন সুবিধা পেতে পারবেন।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান অন্তর বলেন, “দুই বছরেও ইআরপি প্রকল্প কার্যকর না হওয়ায় আমাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রকল্পটি চালু করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
ড্যাফোডিল জাপান আইটির প্রোগ্রামার রিয়াজ আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের কারণে তারা সময়মতো প্রয়োজনীয় তথ্য পায়নি, যার ফলে প্রকল্পে বিলম্ব হয়েছে। উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, দেরির কারণে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তোলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে তারা যথাযথ জবাব দেবে।
তদন্তে জানা গেছে, প্রকল্পের টেন্ডার এবং অর্থ লেনদেনের যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন সদস্য সচিব মো. নাসির উদ্দীন। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈনের সময় বাজেট পাশ হয় এবং নাসির মঈনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দুর্নীতির আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। নাসির এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা শুধু কারিগরি বিষয় তদারকি করি, অর্থ সংক্রান্ত বিষয় তারা দেখেন। এতো সময় লাগার কারণে আমরা হতাশ।” বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে যে, দুই বছর দেরি হয়েছে। আমরা ক্ষতিপূরণের বিষয় মূল্যায়ন করব এবং দেরির কারণ জানতে ফরমাল চিঠি দেব।”
উল্লেখ্য, প্রকল্প শুরু হওয়ার সময় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. মাহমুদুল হাসান।
আরও পড়ুন:








