বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে একই ধরনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তানজিউল ইসলাম জীবনের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিচার বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিসংখ্যান বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং ১১৩তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. রশীদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী, গত ৩ আগস্ট (রোববার) রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদের স্বাক্ষরে বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।
তথ্যসূত্রে আরও জানা যায়, শুরুতে অভিযুক্ত শিক্ষককে ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে এক বছরের জন্য বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এ সিদ্ধান্ত জানাজানি হলে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে শিক্ষক বহিষ্কারের দাবি জানান। উপাচার্যের নিকট একাধিকবার সময় নিয়েও কার্যকর সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের হুমকি দেন। এরপরই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন।
অপরদিকে, একই সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ড. তানজিউল ইসলাম জীবনের বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানি ও নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু চার মাস পার হলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, তদন্ত কমিটি ড. তানজিউল ইসলামের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু পায়নি এবং তাঁকে দায়মুক্তির সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশ পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অডিও রেকর্ডসহ একাধিক তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তদন্ত কমিটি “কিছুই পায়নি”—এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁদের মতে, অভিযুক্ত শিক্ষক একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক এবং প্রশাসনের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তদন্তে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গুঞ্জন রয়েছে, প্রভাবশালী পরিচয়, প্রশাসনের ঘনিষ্ঠতা কিংবা গোপন সমঝোতার মাধ্যমে তানজিউল ইসলাম শাস্তি থেকে রেহাই পেয়েছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আমির বলেন, “আমরা সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এটি কখন প্রকাশ পাবে, সে সিদ্ধান্ত উপাচার্য নেবেন।”
এ বিষয়ে উপাচার্য ড. মো. শওকত আলী বলেন, “আমরা একটি অভিযোগে প্রতিবেদন প্রকাশ করে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। অন্য অভিযোগটি নিয়ে পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হবে। এসব বিষয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।”
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একই ধরনের অভিযোগে ভিন্ন আচরণ বিচারিক অসামঞ্জস্যের উদাহরণ। তাঁরা নিরপেক্ষ তদন্ত ও সমান বিচার দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন:








