জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ১৪ মাস কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর মুক্তি পেলেও এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। মানসিক ও শারীরিকভাবে এখনও ভুগছেন আলোচিত এই শিক্ষার্থী।
২০২২ সালে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে দীর্ঘ ১৪ মাস কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দি থাকেন খাদিজা। মুক্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে দ্বিতীয় বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেন এবং বর্তমানে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।
খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মুনিরা বাংলা এডিশনকে জানান, “কারাভোগের কারণে মানসিকভাবে এখনও ঠিক হতে পারেনি খাদিজা। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই কিডনিতে পাথরসহ মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগেছে সে।” তিনি জানান, পরিবার থেকে শারীরিক ও মানসিক পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
খাদিজা নিজেও বলেন, “দীর্ঘদিন জেলে থাকার ফলে এখনো মানসিকভাবে সুস্থ হতে পারিনি৷ তবে এখন অনেকটা ভালো আছি৷ দুই সেমিস্টার অনুপস্থিত থাকার কারণে আমাকে পুনরায় ভর্তি হতে হয়েছে।”
পুনরায় ভর্তি হওয়ার কারণে বিভাগের অবৈতনিক বৃত্তির সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানান খাদিজা। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিভাগ থেকে কাউন্সেলিংয়ের কথা বলা হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। “শিক্ষকেরা আলাদা করে আমার সঙ্গে কথা বলতেও আসেননি,” বলেন খাদিজা।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর বলেন, “অবৈতনিক বৃত্তি কতিপয় শিক্ষার্থী পায়। আমরা শুধু সুপারিশ করি, বাকি সবকিছু নির্ধারণ করে প্রশাসন। আমি খাদিজার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি এবং খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি।”
বিভাগের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ময়েনুল হক জানান, “সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছি। ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে খাদিজার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খাদিজার সহপাঠীরা জানান, মুক্তির দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এরপর নিরলস চেষ্টা করে পরীক্ষাগুলো শেষ করেন। বর্তমানে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। খাদিজার বন্ধু শাহরিয়ার বলেন, “আমরা সবাই তাকে সাহায্য করছি। বই-শিট সংগ্রহ করে দিচ্ছি, যাতে সে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে।”
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের অক্টোবরে তৎকালীন সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে খাদিজার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। ২০২২ সালের মে মাসে অভিযোগপত্র জমা দিলে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
১৪ মাসের কারাভোগ শেষে ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর খাদিজা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
আরও পড়ুন:








