বান্দরবানে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পটি আট বছরেও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায়। ২০১৮ সালে নেওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন। এখন তা বাতিলের মুখে।
সূত্র জানায়, বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া এলাকায় পাঁচ একর জায়গা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অধিগ্রহণ প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই জমির অবস্থান নিরাপদ ও যোগাযোগ-সুবিধাসম্পন্ন হলেও রাজনৈতিক প্রভাব এবং একটি গোষ্ঠীর বিরোধিতায় জমি অধিগ্রহণে স্থবিরতা দেখা দেয়।
আপত্তিকারীদের দাবি, প্রস্তাবিত জমির মালিকদের একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতার ভাই এবং স্থানটি পাহাড়ি পাড়ার কাছে হওয়ায় উত্তেজনার শঙ্কা রয়েছে। তবে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, জমির পাশেই বড় একটি পাহাড় থাকায় তা মূল জনবসতি ও পাহাড়ি পাড়া থেকে প্রাকৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন।
স্থানীয়রা বলছেন, একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী প্রকল্পটি সুলতানপুর এলাকায় নিতে চাইছে, যদিও সে জায়গা দূরবর্তী, তিন ফসলি ও তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা বলেন, “মাঝেরপাড়া এলাকার জমিটি নিরাপদ, নির্জন ও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার আওতায়। বিরোধ শুধুই রাজনৈতিক।”
জমির মালিক ইদ্রিছ চৌধুরী, শহীদুল আলম ও তানজিনা আফরিন জানান, তারা সবাই শিক্ষক ও সরকারি চাকরিজীবী, এবং তারা স্বেচ্ছায় জমি দিতে প্রস্তুত।
প্রতিবেশী সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চা বোর্ড অফিস, রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, পিটিআই, ম্যাটস ও আনসার ব্যাটালিয়ন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকা।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসাইন বলেন, “সকল দিক বিবেচনায় মাঝেরপাড়া উপযোগী। সুলতানপুর দূরে এবং তিন ফসলি জমি হওয়ায় তা প্রকল্পের জন্য অনুপযুক্ত।”
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “এই ইনস্টিটিউট হলে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের কারিগরি উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকারের নতুন দরজা খুলে যাবে।”
তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফা সুলতানা জানান, “তদন্তে প্রকল্প-বিরোধী কিছু মত পাওয়া গেছে। কেউ কেউ সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম মনজুরুল হক বলেন, “জমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে ইতিবাচক মতামত পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই অধিগ্রহণ শুরু হবে।”
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, “একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে প্রকল্প বাস্তবায়ন ঠেকাতে চায়। প্রয়োজনে নাগরিক সমাজ আন্দোলনে নামবে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বান্দরবানে সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
আরও পড়ুন:








