ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ভোলার দৌলতখানের মেয়ে তাহিয়া তাবাসসুম নাদিয়ার (১৩) জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ঢাকার কামারপাড়া রাজবাড়ী পুকুর পাড় জামে মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নানা বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
গত সোমবার (২১ জুলাই) রাত ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিয়ার (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
নাদিয়ার গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের চানকাজি হাওলাদার বাড়িতে। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম নিরব। উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে সন্তানদের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করিয়ে প্রায় দেড় যুগ আগে থেকে ঢাকায় বাস করছিলেন তিনি।
নাদিয়ার সঙ্গে একই দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়েছে তার ছোট ভাইও, যিনি বর্তমানে ঢামেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন সন্তানহারা বাবা-মা। নাদিয়ার মৃত্যুর খবরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম নেমে আসে। চাচাতো বোন ইশরাত জাহান স্পি (১৪) ও তার ছোট বোন মুনতাহা (১১) অঝোরে কাঁদছে। কাঁদছেন মা বিবি আয়শাও।
নিহতের দাদা এ কে এম আলতাফ হোসেন মাস্টার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে নিরবের স্বপ্ন ছিল সন্তানদের বড় করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। আজ সব স্বপ্ন ভেঙে গেল।”
নাদিয়ার চাচি মোরশেদা জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই তারা ফোনে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবা নিরবের ফোন বন্ধ থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে খবর পান, নিঝুম (নাদিয়া) ও ছোট ভাই নাফিকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর শুনে স্ট্রোক করেন বাবা নিরব নিজেও এবং তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাদিয়ার মৃত্যুতে দৌলতখান উপজেলায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়তি রাণী কৈরী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান, ভোলা-২ আসনের সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম, দৈনিক ভোলার বাণী সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, দৌলতখান প্রেসক্লাব সভাপতি জাকির আলম, সম্পাদক মিজানুর রহমান ও যুবদল নেতা জহিরুল ইসলাম।
নাদিয়ার মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা এলাকার হৃদয়ে গভীর ক্ষত হয়ে রইল। এখনও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছে তার ভাই। দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন পরিবার-পরিজন।
আরও পড়ুন:








