সোমবার

২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

সালেহা ইসহাকে বারবার প্রশ্ন ফাঁস, সিন্ডিকেটের প্রভাবে ধামাচাপা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২ জুলাই, ২০২৫ ১৬:১৫

শেয়ার

সালেহা ইসহাকে বারবার প্রশ্ন ফাঁস, সিন্ডিকেটের প্রভাবে ধামাচাপা
ছবি বাংলা এডিশন

সিরাজগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক-কোচিং সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন চলে যাচ্ছে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীদের হাতে। অভিযোগ উঠেছে, যেসব ছাত্রী অভিযুক্ত শিক্ষকদের কোচিং বা প্রাইভেটে পড়ে, মূলত তারাই পাচ্ছে প্রশ্ন এবং প্রত্যাশিত নম্বর। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে অভিভাবকসহ সচেতন মহলে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে কয়েকজন শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং লোকদেখানো তদন্ত কমিটি গঠন হলেও রিপোর্ট প্রকাশ বা ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো নজির নেই। ফলে শিক্ষকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসের ষান্মাসিক পরীক্ষার আগের দিন ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান, গণিত শিক্ষক সামান আলী শেখ, ভৌত বিজ্ঞান শিক্ষক তৈমুর হাসান, বাংলা শিক্ষক লিলি খাতুন ও ইংরেজি শিক্ষক আবুল কাশেম পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে থেকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেই শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় তাদের কোচিংয়ে পড়তে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, তৈমুর হাসান ও লিলি খাতুন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন আলী হাসানের সন্তান ও পুত্রবধূ হওয়ায় তারা প্রভাব খাটিয়ে বরাবরই তদন্ত এড়িয়ে গেছেন। প্রতিবাদকারীদের বদলি করা হয়েছে বরং।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান ফোনে মন্তব্য না করেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ভৌত বিজ্ঞান শিক্ষক তৈমুর হাসান বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমি এখানে কর্মরত। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”

প্রধান শিক্ষক মো. আফসার আলী জানান, “প্রশ্ন ফাঁস বহু দিনের সমস্যা। একাধিকবার প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু উল্টো লাঞ্ছিত হয়েছি। প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বদলি হতে হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, এবং বদলির আবেদনও করেছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ও জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম বলেন, “লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায়, শিক্ষার মানের অবনতিতে পুরো শহরবাসীকে চরম মাশুল দিতে হবে বলেও সতর্ক করেন তারা।



banner close
banner close