বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বহু প্রতীক্ষিত ছাত্রসংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দীর্ঘদিনেও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছয় মাস আগে নির্বাচন নিয়ে তিন মাসের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করার কথা বললেও আজ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। এখনও গঠিত হয়নি কোনো নির্বাচনী বাস্তবায়ন কমিটিও। এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কাউন্সিল সভায় ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। সেই সময় একটি গঠনতন্ত্র খসড়া আকারে তৈরি করা হলেও তা এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। তখন বলা হয়েছিল, খুব শিগগিরই নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। তবে বাস্তবে তেমন কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও দাবি
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও 'জুলাই আন্দোলন'-এর অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, “জুলাই বিপ্লবের অন্যতম দাবি ছিল ছাত্রসংসদ চালু করা। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো নির্বাচন হয়নি। আবারও ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে। প্রশাসনের দায়বদ্ধতার অভাবই এর জন্য দায়ী।”
একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধা মো. আহমাদুল হক আলবীর বলেন, “ছাত্রসংসদ না থাকার কারণেই ছাত্রদের অধিকার দমন করা সম্ভব হয়েছিল। এখনকার শিক্ষার্থীরা নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছে। প্রশাসন আন্তরিক হলে অবিলম্বে নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হতো।”
বেরোবি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক জাহিদ হাসান জয় বলেন, “আবু সাইদের রক্তের ক্যাম্পাসে আজও ছাত্রসংসদ নেই, অথচ দলীয় কমিটি গঠন চলছে। আবারও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই রাজনীতি বন্ধ করতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনই একমাত্র পথ।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চাই। কিন্তু প্রশাসন শুধু আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছে—বাস্তব কোনো উদ্যোগ নেই।”
প্রশাসনের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস প্রামাণিক বলেন, “আমাদের এখানে আগে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জন্য কোনো আইন ছিল না। এখন আমরা একটি গঠনতন্ত্র তৈরি করে উপদেষ্টা বরাবর পাঠিয়েছি। খুব শিগগিরই নির্বাচন আয়োজন করা হবে।”
১৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচন অধরা
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে এখনো একবারও ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের দাবি—আর কোনো গড়িমসি নয়, অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণা করে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন:








