
ছবি : বাংলা এডিশন
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছউদ্দীন। তবে একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের ঘটনায় উপদেষ্টারও দুঃখপ্রকাশ করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনরত জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গিয়ে অধ্যাপক রইছউদ্দীন এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার রাতে কাকরাইল মোড়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে একটি ‘বোতল-কাণ্ড’ ঘটে। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তিনি উপদেষ্টার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন।
অধ্যাপক রইছউদ্দীন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিগুলো যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে দুদিনে কোনো সাড়া না আসায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, এ সরকার জুলাই আন্দোলনের ওপর দাঁড়িয়ে। এখানকার প্রতিটি শিক্ষার্থীও জুলাই বিপ্লবী। হুমকি দিয়ে লাভ নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদিকে, তিন দফা দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কাকরাইল মোড় অবরোধ করে জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইলের দিকে যাওয়ার সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। গতকালের মতো আজও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ইউজিসি থেকে প্রত্যাশিত ঘোষণা না আসায় জবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। বুধবার দুপুরে উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাওয়ার সময় কাকরাইল মোড়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হন। আহতদের মধ্যে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছউদ্দীন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক বেলাল, সহকারী প্রক্টর নাইম সিদ্দিকি ও সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমনও রয়েছেন।
এ ঘটনার পর ড. রইছউদ্দীন শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানে থাকার ঘোষণা দেন।
লং মার্চে পুলিশি বাধার বিষয়ে রমনা জোনের ডিসি মাসুদুল আলম দাবি করেন, পুলিশের ২০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। যমুনার সামনে যাওয়া বা সেখানে অবস্থান-সমাবেশের কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
তবে আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন তোলেন, কিছুদিন আগেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনা ঘেরাও করা হলেও তখন কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।
জবির আন্দোলনকারীদের চার দফা দাবি হলো- আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শুরু করা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচার করা।
অন্যদিকে, বুধবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে কাকরাইল মসজিদের সামনে যান উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সেখানে তাকে লক্ষ্য করে একটি পানির বোতল নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে জবি ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন দাবি করেন, এর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা জড়িত নন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘তাদের নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির প্রতি যে হিংসা আট মাস ধরে রয়েছে এবং তাদের যে হিংস্রতা অনলাইনে দেখা যায়, তারা আজকে এখানে এটা করেছেন।’
তবে ছাত্রদল নেতা শামসুল আরেফিন মনে করেন, উপদেষ্টা মাহফুজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তার মানসিক কাউন্সিলিং প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: