
ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘদিনের যুদ্ধ শেষে অবশেষে হার মানতে হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা হক জিমিকে। কিন্তু এই যুদ্ধের হারের আগে শুধুমাত্র আর্থিক সাহায্যের আবেদনে একটি স্বাক্ষরের আশায় তাকে লড়াই করতে হয়েছে দীর্ঘ ৫ মাস। তবুও মেলেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের সাক্ষাৎ ও একটি স্বাক্ষর।
গতকাল পহেলা মার্চ (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টা ৪০ মিনিটের সময় ক্যান্সারের সাথে লড়াই শেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এই শিক্ষার্থী। অভিযোগ ওঠে দীর্ঘ ৫ মাস ২৫ থেকে ৩০ বার উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের দপ্তরে ঘুরে ও বারবার আবেদন করেও তার দেখা ও স্বাক্ষর পাননি ক্যান্সার আক্রান্ত ওই শিক্ষার্থী।
অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যায়, ২০২৩ সালে প্রথম জিমির পাখস্থলিতে ক্যান্সার ধরা পরার পর থেকে জিমির পরিবারই তার সকল চিকিৎসা খরচ বহন করে আসছিল। তবে জিমির কোন ভাই না থাকায় তার বাবার একার পক্ষে এই ব্যায়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তারই পেক্ষিতে গতবছর ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর একটি আর্থিক সাহায্যে আবেদন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান নুসরাত শারমিন লিপির মাধ্যম হয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দপ্তরে পাঠানো হয়। যা ভিসি দপ্তরের কর্মকর্তা রাহাত কতৃক রিসিভ করা হয় বলে আবেদনের রিসিভ কপিতে দেখা যায়। জানা যায়, এর পর থেকে তাদের প্রতিনিয়ম নতুন নতুন সময় দেওয়া হতো উপাচার্যের সাথে দেখা করার জন্য। বারবার সময় দিয়ে দেখা না করাই ওই শিক্ষার্থী পুনরায় বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ আল মাসুদের মাধ্যমে আবারো আবেদন করেন। কিন্তু তারপরও কিছুতেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাক্ষাৎ পান নি ওই শিক্ষার্থী।
এবিষয়ে তার সহপাঠী খালিদ সাইফুল্লাহ'র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ১৮ ডিসেম্বরের আগেও উপাচার্যের দপ্তরে চিঠি দেয়। তখন তার দপ্তর থেকে জানানো হয় বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যম ছাড়া এটি গ্রহণ করা হবে না। তখন আমরা আবার ১৮ ডিসেম্বর চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ভিসি দপ্তরে আবেদন পত্রটি নিয়ে যায়। তখন তারা সেটি গ্রহণ করে এবং বলেন ৭ দিনের ভিতর তারা জানাবে। কিন্তু তাদের জানাতে জানাতে কেটে গেছে ৫ মাস, আমার বোনটি তার ন্যায় অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পৃথিবীর সফর শেষ করেছে। আমার বলার তেমন কিছু নেই শুধু বলবো এটা আমার জন্য লজ্জা সে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, যেখানে শিক্ষার্থীকে তার অধিকার পেতে মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব রাইহান বাপ্পি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে কেউ যদি আর্থিক সহায়তা চায় তাহলে গুরুত্ব সহকারে দেখা হোক।আমাদের বোন জিমি ভোগান্তির শিকার হয়েছে।তিন তিনবার উপাচার্যের নিকট আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করলেও কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পাননি।আমাদের বোনের সাথে এমন হয়েছে আর কারো এমন না হোক।আমার বোনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের এমন অবহেলা মানবো না।
এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শাহির খান বলেন,"আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা একটা পান্ড থাকে। আমাদের বোন আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন জমা দেয়।কিন্তু প্রশাসন কোনো সহায়তা দেয়নি।প্রশাসনকে সহায়তার কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোনো রেসপন্স আসেনি।লাস্ট যখন আবেদনটা ভিসি ম্যামের কাছে জমা দেওয়া হয় তিনি বলেছেন পরে এসে স্বাক্ষর করবেন।কিন্তু তিনি অবহেলা করে এই মর্মস্পর্শী ক্যান্সার আক্রান্ত আপুর বিষয়টি এড়িয়ে যান। আমরা উপাচার্যের কঠোর জবাবদিহিতা চাই।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ আল মাসুদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আমি খুবই শোকাহত বিষয়টি নিয়ে। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থী যখনি বলেছে আমি সাথে সাথে তাদের চিঠিটি ভিসি দপ্তরে ফরওয়ার্ড করেছি। এছাড়া আমি আমার বিভাগ ও এসোসিয়েশন থেকে তাকে সাধ্যমত সাহায্যে করার করেছি। আমরা প্রসাশনিক জায়গা থেকে যতটা পেরেছি করেছি।তবে আমাদের হয়তো আরো করার সুযোগ ছিলো। পরিশেষে তার জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন।
এ ব্যাপারে সকালে সাংবাদিকদের গুচ্ছ পরীক্ষা নিয়ে বিফিং এর সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ গুচ্ছের এই পরীক্ষার মধ্যে আমি এখন এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাইনা। তবে পরে সময় করে এক্সক্লুসিভভাবে বক্তব্য দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: