রবিবার

৪ মে, ২০২৫
২০ বৈশাখ, ১৪৩২
৬ জিলক্বদ, ১৪৪৬

শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার প্রতিবাদে মধ্যরাতে উত্তাল খুবি ক্যাম্পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩ মে, ২০২৫ ১১:৫১

শেয়ার

শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার প্রতিবাদে মধ্যরাতে উত্তাল খুবি ক্যাম্পাস
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক ও সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক হাসান মাহমুদ সাকিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ক্যাম্পাসে। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (৩ মে) মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা ডিসিপ্লিনের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের পাশে ওই শিক্ষককে শারীরিকভাবে আঘাত করেন।

ঘটনার পরপরই তা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দেয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দিয়ে অভিযুক্ত নোমানকে ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এবং প্রশাসনের কাছে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়।

হামলায় আহত হন শিক্ষক হাসান মাহমুদ সাকি। তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করে সিটি মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক।

পরে শিক্ষার্থীরা রাত ১টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন—‘নোমানের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, নোমানের বিচার চাই’ ‘সন্ত্রাসীদের বিচার চাই’ ইত্যাদি। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুন্না বলেন, “আমাদের শিক্ষকরা যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিরাপদ বোধ করব?”

একই বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, “আমাদের দাবি তাকে (নোমানকে) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে। তার এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। এসব নোংরা মানুষ সমাজের কিট।”

এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, “ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষী ও তার সহযোগীদের দ্রুত শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে আমরা একমত। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তোমরা নিশ্চয় জানো, সাকি স্যার একজন ভদ্র মানুষ। সকল ছাত্রদের সঙ্গে ‘আপনি’ সম্বোধনে কথা বলেন। গণ-অভ্যুত্থানে তার ভূমিকা তোমরা দেখেছো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এভাবেই সোচ্চার থাকো। আমরা তিন দিনের মধ্যে দোষীকে শাস্তির আওতায় আনব।”

রাত ২টা পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হলে তারা রবিবার থেকে ক্লাস বর্জনসহ আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।

প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত নোমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘনের দায়ে পূর্বে একবার বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি নারীঘটিত একটি মামলায় অভিযুক্ত আছেন, যার তদন্ত চলমান।

 

banner close
banner close