সোমবার

১৬ জুন, ২০২৫
২ আষাঢ়, ১৪৩২
২০ , ১৪৪৬

জবির দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যানকে নিয়ে অপপ্রচার: ক্ষুব্ধ বিভাগের শিক্ষার্থীরা

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১ মে, ২০২৫ ২১:০৯

শেয়ার

জবির দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যানকে নিয়ে অপপ্রচার: ক্ষুব্ধ বিভাগের শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভাগটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, জুলাই আন্দোলনের সময় চেয়ারম্যান সর্বদা তাদের পাশে ছিলেন এবং খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো অবাস্তব এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রসূত বলে মনে করেন তারা।

গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, তিনি গত বছরের ৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং ৪ আগস্ট নীলদলের ব্যানারে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানোর কথা বলেন। এছাড়াও ২০১৫ সালে এক নারী শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ এবং সহকারী অধ্যাপক সোচনা শোভার সাথে বিভাগের সিদ্ধান্ত জালিয়াতির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।

তবে অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুল ইসলাম এ বিষয়ে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন।

তিনি বাংলা এডিশনকে জানান, জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং আহত শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে দেখা করে এসেছিলেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে ১ আগস্ট থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে অবস্থান করে ৭ আগস্ট কর্মস্থলে যোগদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সময়ে তার পক্ষে ৩ আগস্ট গণভবনের মিটিং বা ৪ আগস্ট মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। এই অভিযোগগুলোকে তিনি মিথ্যা ও কাল্পনিক'বলে অভিহিত করেন। জুলাই আন্দোলনের সময় নিজ বিভাগের বাইরেও কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের দুইজন ছাত্রকে পুলিশ আটক করলে তিনি অন্য শিক্ষকদের সাথে মিলে তাদের ছাড়িয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেও জানান।

২০১৫ সালের নারী শিক্ষার্থীর ঘটনা প্রসঙ্গে ড. হাফিজুল ইসলাম বলেন, ঐ শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে পরপর তিনবার নকলের দায়ে বহিষ্কার হয়েছিল। প্রথম দুই দিন অন্য শিক্ষক এবং তৃতীয় দিন তিনি নিজে দায়িত্বে থাকাকালে তাকে বহিষ্কার করেন। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তাকে এক বছরের জন্য শাস্তি দিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে ঐ শিক্ষার্থী তার সাথেই দুটি কোর্সে ক্লাস করে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন এবং শিক্ষার্থীর ভুল করা ও শোধরানোকে তিনি স্বাভাবিক বলেই মনে করেন।

সহকারী অধ্যাপক সোচনা শোভার বিষয়ে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে ড. হাফিজুল ইসলাম বলেন, সোচনা শোভার বিরুদ্ধে তৎকালীন উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের আমলে বেতনের অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনসহ অনুমতি ব্যতিরেকে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ ছিল। এ কারণে তখন থেকেই তার বেতন বন্ধ এবং বিদেশ থেকে আসার পর তার যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তী উপাচার্য ড. ইমদাদুল হকের সময়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তাকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

ড. হাফিজুল ইসলাম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর সোচনা শোভার বেতন বন্ধ থাকা এবং যোগদানপত্র গৃহীত না হওয়া সত্ত্বেও তার ক্লাস নেয়া ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা জানতে চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর পত্র প্রেরণ করেছিলেন, যা চেয়ারম্যান হিসেবে তার দায়িত্বের অংশ ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। বর্তমান উপাচার্য ড. রেজাউল করিমের দায়িত্ব গ্রহণের পর অনুমতিবিহীন বিদেশ ভ্রমণ ও যোগদানপত্র গৃহীত না হওয়ার বিষয়ে তদন্ত চলমান থাকায় তাকে ক্লাস পরীক্ষা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং তদন্ত এখনো চলমান আছে বলেও তিনি জানান।

দর্শন বিভাগের ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী আনোয়ার ভূইয়া জানান, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ড. হাফিজুল ইসলাম স্যারকে নিয়ে তোলা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ১৯ আগস্ট তিনি ও তার বন্ধু তাওহীদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর স্যার তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন এবং বাসায় দেখতে গিয়েছেন। অনিয়মের অভিযোগগুলো হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্যার সময়মতো ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম চালু করেছেন এবং বিভাগের উন্নয়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

একই ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহজাহান বাদশা ড. হাফিজুল ইসলামকে শিক্ষক ও মানুষ হিসেবে অমায়িক উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে স্যার ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনো কথাই বলেননি।’

সব মিলিয়ে দর্শন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশিত অভিযোগগুলোকে মিথ্যা দাবি করে তার পাশে দাড়িয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনে তার ইতিবাচক ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন।

banner close
banner close