
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আস্থা হারিয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীরা। সেশনজট, রাজনীতি, অপর্যাপ্ত ব্যবহারিক সুবিধাকেই দুষছেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।
কৃষি বিষয়ে ডিগ্রি গ্রহনে আগ্রহী নেপাল,ভুটান সহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ জুড়ে আছে বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। যার মধ্যে অন্যতম অবস্থানে ছিল রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে গড়ে প্রতি বছর ১১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে আসছিলো যা সামগ্রিকভাবে ৫০ জনের উপরে।
তবে ২০২০ সালের পরে থেকে আকস্মিকভাবে কমতে থাকে এই বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা যা বর্তমানে এসে নেমেছে শূন্যের কোটায়। বিগত তিন বছরে ভর্তি হয়নি একজনও বিদেশি শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা কয়েকটি সূত্রের মতে,বিগত সময়ে তৈরি হওয়া প্রাতিষ্ঠানিক দূর্বলতা এবং করোনাকালীন জটিলতাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে অনাগ্রহী হওয়ার মূল কারণ।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তৈরি হওয়া সেশনজট, গবেষণার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অপ্রাতুল্যতা এবং পর্যাপ্ত ব্যাবহারিক সুবিধা না থাকায় ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাহ হারাচ্ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীদের মতে,ভর্তি প্রক্রিয়া বছরের শেষ ভাগে হওয়ায় অনেকটা সময় নষ্ট হয় শিক্ষার্থীদের। এর কারণেও অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী আগ্রহ হারাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন,বিগত প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি খুব বেশি মনোযোগী ছিল না এবং বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি।করোনাকালীন সময়ে আটকা পরা নেপালী শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্দ্যোগে দেশে ফিরতে হয়েছিল যা নেপালি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম বর্ষে অধ্যায়নরত নেপালি শিক্ষার্থী মহেশ্বর ভগত মালী বলেন,আমাদের নেপালি শিক্ষার্থীদের অন্যতম আগ্রহের জায়গা জুড়ে কৃষি এবং কৃষি বিষয়ক পড়াশোনা। এর অন্যতম কারণ নেপালে কৃষির গুরুত্ব। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালও বেশ পরিচিত নেপালের শিক্ষার্থীদের কাছে। তবে বিগত কয়েক বছরের সেশনজট আমাদের কমিউনিটিতে বিরূপ প্রভাব তৈরি করেছে ভর্তিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উপর। তাছাড়া ল্যাবের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা, গবেষণা কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি হওয়া উচিত। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আবাসন ব্যাবস্থা কিংবা কোনো আবাসিক হলের নির্দিষ্ট ফ্লোর বরাদ্দ থাকা উচিত বলেও মনে করেন এই নেপালী শিক্ষার্থী।
মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কমা শুরু হয় মূলত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র থেকে জানা যায়,২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে মোট বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন। এদের সবাই ছিলেন কৃষি ও এএসভিএম অনুষদের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীর তালিকা থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,২০১৬ সালে ভর্তি হয় ৯ জন, ২০১৭ সালে ১১ জন, ২০১৮ সালে ১৬ জন, ২০১৯ সালে ১৪ জন, ২০২০ সালে মাত্র দুইজন। এর পরবর্তী বছরগুলোতে ভর্তির সংখ্যা নেমে আসে শূন্যের কোটায়।
একাডেমিক এন্ড স্কলারশিপ বিভাগের সহকারী রেজিস্টার কৃষিবিদ হরি কমল দাশ বলেন,বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো দিক।২০১৬ সাল থেকে বাইরের দেশের শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে আসলেও গত তিন বছরে বন্ধ হয়ে গেছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া যা আমাদের জন্য কিছুটা উদ্বেগের । তবে প্রসাশনিকভাবে আমরা মনোযোগী হলে পূর্বের থেকেও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। প্রশাসনিকভাবে ইতোমধ্যে এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। আশাকরছি সামনের বছরগুলোতে আমরা বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বর্তমান প্রশাসন। বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধিতে কিছু উদ্যোগ গ্রহন করেন তারা।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে গত কয়েক বছরে। আমরা কারণগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। ইতোমধ্যে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। পূর্বে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য মন্ত্রনালয়ে আবেদনের মাধ্যমে আসতে হতো। এই নিয়মের পরিবর্তন করে কিছুটা শিথিল করা হয়েছে ভর্তি প্রক্রিয়া। এখন সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদের মাধ্যমে তারা ভর্তি হতে পারবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা হয়েছে, তাদের সমস্যাগুলো শুনেছি। আশাকরছি সামনের দিনগুলোতে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে।
আরও পড়ুন: